‘রেমাল’-এর জেরে রবিবার বিকাল থেকেই কালো মেঘে ছেয়েছে আকাশ। তমলুকে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
এতদিন ভোট চাইতে দুয়ারে হাজির হয়েছিলেন। এখন দুয়ারে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। বিপদে নাকি বন্ধু চেনা যায়। আর রাজনীতিক!
এতদিন তাঁরা ভোট চেয়েছেন। বিপক্ষে বিঁধতে ঝড় তুলেছেন কটাক্ষের। ভোট মিটতে তাঁদের অনেকেই ফিরলেন কলকাতা। কেউ প্রচারে যাবেন বলে। কেউ উপেক্ষা করতে পারলেন না সংবাদমাধ্যমের ডাক। তবে ফেরার আগে অনেকে অবশ্য কর্মী, সমর্থকদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন নজর রাখতে হবে সবদিকে। ঝড়ে কেউ বিপন্ন হলে দাঁড়াতে হবে পাশে। অনেকে কলকাতায় ফিরলেও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে নাকি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
লোকসভা ভোটে প্রার্থী হিসেবে গত প্রায় দু’মাসেরও বেশি সময় বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে গিয়ে মানুষের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তৃণমূল, বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থীরা। ভোট মিটতেই হাজির ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। এলাকার বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুতি নিয়েছেন সাংসদ পদপ্রার্থীরা? তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য রবিবার দুপুর পর্যন্ত তমলুকে ভাড়া বাড়িতেই ছিলেন। দুপুরের পরে কলকাতায় দলীয় প্রার্থীর প্রচারে যান। তবে দেবাংশু জেলার দুর্যোগ পরিস্থিতির কারণে হলদিয়া, সুতাহাটা, কোলাঘাট, তমলুক ও নন্দীগ্রাম সহ নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় ব্লক নেতৃত্বের মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।
তমলুক লোকসভা নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান সৌমেন মহাপাত্র বলেন,’’ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি নিয়ে দলীয়ভাবে সব ব্লক সভাপতিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অসুবিধা হলে যাতে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয় সেজন্য বলা হয়েছে।’’
তমলুক লোকসভার বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত তমলুকে ছিলেন। দলীয় সূত্রের খবর, অভিজিৎ দুপুরে কলকাতা যান দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে। যাওয়ার আগে তিনি দলীয় কর্মীদের রবিবার সারা রাত জাগতে পরামর্শ দেন। অসুবিধা হলে সেই বিষয়ে দ্রুত জানাতে বলে গিয়েছেন। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপসী মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রবিবার দুপুর পর্যন্ত তমলুকে ছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ের জেরে জেলার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি খোঁজখবরও রাখছেন। আমরা দলীয় ভাবেও সমস্ত স্থানীয় নেতৃত্বদের সতর্ক থাকতে বলেছি যাতে বাসিন্দারা সমস্যা পড়লে তাঁদের দ্রুত সাহায্য করার জন্য পৌঁছাতে পারি।’’
তমলুক লোকসভার সিপিএমের প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত তমলুকে ছিলেন। দলীয় সূত্রের খবর, দুপুর পর্যন্ত তমলুকে থাকার পরে কলকাতায় যান একটি সংবাদ মাধ্যমের ডাকে। সিপিএমের জেলা নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘সায়ন রবিবার দুপুর পর্যন্ত তমলুকেই ছিলেন। এর পরে তিনি একটি সংবাদমাধ্যমের ডাকে কলকাতায় গিয়েছেন। আমাদের জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে। তমলুক ও হলদিয়া এলাকায় তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে আমরা দলের স্থানীয় নেতৃত্ব ও কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি।’’
ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি রুখতে এবং তাঁদের অন্য নিরাপদ স্থানে সরানোর জন্য এ দিন জেলাশাসক অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছেন এসইউসি জেলা নেতৃত্ব। তমলুক কেন্দ্রের এসইউসি প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, ’’ঘূর্ণিঝড় আমপান, ইয়াসের পরে দুর্ভোগের শিকার হয়েছিলেন জেলাবাসী। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সেই জন্য প্রশাসনকে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি’’।
কাঁথির তৃণমূলের প্রার্থী উত্তম বারিক জেলা পরিষদের সভাপতি বটে। রবিবার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের মোকাবিলায় নেমেছেন। এ দিন তিনি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসনিক ভবনে বৈঠক করেন। পরে দিঘা সৈকত এলাকা ঘুরে দেখেন। কাঁথির বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী দুপুর থেকে বাড়িতে বসে রামনগর, এবং কাঁথি, খেজুরি এলাকার প্রতিমুহূর্তের পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন। দলের মণ্ডল সভাপতিদের পাশাপাশি, বিজেপির দখলে থাকা পঞ্চায়েতেদের পদাধিকারী এবং নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের মাধ্যমে বার্তা পাঠান। যাদের কাঁচা বাড়ি রয়েছে তাদের দলীয় হস্তক্ষেপে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা এবং তাদের খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করেছেন সৌমেন্দু।