বোলপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
বীরভূম জেলায় এসে শুক্রবার আমোদপুরের নির্বাচনী জনসভা থেকে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে নানা বিষয়ে বিঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই দিনে নানুরের পাপুড়ির জনসভা থেকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নানুরেরই সুচপুরে ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুর হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বিঁধলেন সিপিএমকেও।
এ দিন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালের সমর্থনে পাপুড়িতে জনসভা করেন অভিষেক। দুপুর পৌনে ৩টে নাগাদ তিনি হেলিকপ্টারে করে সভাস্থলে পৌঁছন। উত্তরীয়, ফুলের তোড়া ও মা কঙ্কালীর একটি প্রতিচ্ছবি তাঁর হাতে তুলে দেন জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্যরা। তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক অপেক্ষা করছিলেন অভিষেককে দেখার জন্য। তিনি কপ্টার থেকে নামতেই ‘অভিষেক অভিষেক’ স্লোগান ওঠে ভিড় থেকে। ভিড় দেখে দৃশ্যতই খুশি অভিষেক দাবি করেন, “আজ জেলায় প্রধানমন্ত্রীর সভায় যা লোক হয়েছে, তার তিন গুণ লোক এই সভায় হয়েছে।”
আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা বকেয়া রাখা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ের বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করেন অভিষেক। এর পরেই বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্ক প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বলেন, “বোলপুর আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমার্থক। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলক থেকে কবিগুরুর নাম মুছে দিয়েছিল মোদী সরকার। সেই কারণে বিজেপিকে আমরা বাংলা-বিরোধী বলেছি। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য নোটিস দিয়েছিল এই বিজেপি সরকার। তার জন্য আমরা তাদের বাংলা-বিরোধী বলছি।” তাঁর দাবি, ‘‘যারা আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য জানে না, তারা ঠিক করবে আমরা কী খাব! রাজনৈতিক দল সে আপনাদের কাছে ভোট চাইতে যাবে, সে কি ঠিক করবে আপনি কি জামা পরবেন?’’
সিপিএমের প্রতিও তোপ দেগেছেন এই তৃণমূল নেতা। সুচপুর প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘২০০০ সালে ২৭ জুলাই এই নানুরের সূচপুর গ্রামে কী ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের ১১ জন সমর্থককে হত্যা করেছিল সিপিএম, আমরা সেই দিন ভুলে যাইনি!’’ এর পরেই জনতার প্রতি তাঁর বার্তা, ভোট দিতে যাওয়ার সময় মানুষশযেন সিপিএমের ‘অত্যাচারের’ কথা মাথায় রাখেন। অভিষেক বলেন, ‘‘২০১১-র আগে সিপিএমের অপশাসন, চোখ রাঙানি, সন্ত্রাস উপেক্ষা করে পরিবর্তন এনেছিলেন আপনারা। ২০১১-র ১৩ মে বাংলায় প্রথম তৃণমূল সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমি বলব, ১৩ মে যখন ভোট দিতে যাবেন, তখন সিপিএমের অত্যাচারের কথাটা মাথায় রেখে যাবেন।’’ তাঁর দাবি, বাম আজ রাম হয়েছে। সিপিএমের কর্মীরাই লাল জামা পাল্টে গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করে বীরভূমকে অশান্ত করতে নেমেছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁর মুখে এই সমস্ত কথা মানায় না। ওঁদের যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ক’জন গেরুয়া শিবিরের, তার হিসাব আগে উনি দিন। তারপর সিপিএমকে আক্রমণ করবেন!’’ তাঁর দাবি, বিজেপিকে তাড়ানোর জন্য সিপিএমই মাঠে ময়দানে লড়াই করে যাচ্ছে। অন্য দিকে, বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিষেক যতই আক্রমণ করুন না কেন, এতে বিজেপিকে আটকানো যাবে না। আগামী লোকসভা নির্বাচনেও ফল তাঁরা হাতেনাতে পেয়ে যাবেন।’’
বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ভোটের ‘সর্বোচ্চ ব্যবধান’ যাতে নানুর থেকে হয়, এ দিন নিজের বক্তৃতা শেষে জনতার কাছে সেই আর্জিও রেখেছেন অভিষেক। তিনি বলেছেন, ‘‘আজকের পর থেকে নানুরের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক, যেখানে যা দরকার উন্নয়নের দায়ভার আমি আমার কানে তুলে নিয়ে যাচ্ছি।” সভায় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল, জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ সহ দলীয় বিধায়ক ও নেতারা।