মঙ্গলকোটের সভায় প্রার্থী অসিত মালের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক সময় সিপিএমই শেষ কথা ছিল এ তল্লাটে। সন্ত্রাস, খুনোখুনির অভিযোগও উঠত নিত্য। তারপরে পালা বদলেছে, পাল্টেছে পরিস্থিতিও। তবে লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে সেই দিনগুলির স্মৃতিই উস্কে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার মঙ্গলকোট থানার পাশে লালডাঙা মাঠে সভা করেন তিনি। আগাগোড়া বিজেপিকে আক্রমণ করলেও বক্তব্যের শুরুতেই ছিল সিপিএমের ‘সন্ত্রাসের’ প্রসঙ্গ। অভিষেক বলেন, ‘‘মঙ্গলকোটে ২০১১র আগে কী পরিবেশ ছিল! ২০১১-র জানুয়ারি মাসে, আমার যতদূর মনে পড়ছে দুর্যোধন সর নামে সিপিএমের এক নেতা ছিল। সে সিপিএমেরই নেতা ফাল্গুনি মুখোপাধ্যায় তার দুর্নীতি প্রকাশ্যে এনেছিল বলে মেরেছিল। দিলীপ ঘোষ নামে আমাদের এক কর্মীকেো হত্যা করেছিল। চোখের মনি খুবলে নিয়ে পুকুর পাড়ে দেহ ফেলে রেখেছিল। এখন সিপিএমের হার্মাদরা জামা বদলে বিজেপির পতাকা ধরে মঙ্গলকোটের কালো দিন ফিরিয়ে আনতে চায়ছে।’’
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা মঙ্গলকোটের নেতা দুর্যোধন সরের যদিও দাবি, ‘‘২০০৯ সালের ১৫ জুন আমাদের নেতা ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় খুন হয়েছিলেন। সেই সময় অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভাবে জন্মই হয়নি। আসলে রাজ্যপাট হারাতে চলেছে এই আশঙ্কায় পিসি-ভাইপোর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দলের কর্মীদের খুন করে। একটা বাচ্চা ছেলের কথায় কোনও গুরুত্ব দিচ্ছি না। মঙ্গলকোটের মানুষ সবই জানেন।’’
এ দিন বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর ব্যবস্থাপনায় বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করা হয়। দুপুর আড়াইটে নাগাদ সভা শুরু হয়। ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূমের একাধিক বিধায়ক ও দুই জেলা পরিষদের সভাধিপতি। দুপুর ৩টে নাগাদ চপারে পৌঁছন অভিষেক। আবাস যোজনা, একশো দিনের টাকা না পাওয়া থেকে সন্দেশখালি নিয়ে সরব হন তিনি। অভিষেক বলেন, ‘‘বোলপুরে লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির নয়, এটা পূর্ব বর্ধমান আর বীরভূমের মধ্যে জয়ের ব্যবধান বাড়ানোর লড়াই। ২০১৯ সালে আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোটে জয়ের ব্যবধান ছিল ৭০ হাজারের বেশি। ওটা এ বার দেড় লক্ষ করতে হবে।’’ সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া সন্দেশখালির ভিডিয়ো নিয়েও বিজেপিকে তোপ দাগেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে শুনেছেন, দেখেছেন কী করেছে! গোধরা শুনেছি। পুলওয়ামার কথা শুনেছি। পরশু নিজের চোখে দেখলাম। মহিলাদের মান-সম্ভ্রম দু’হাজার টাকায় বিক্রি করেছে বিজেপি। তৃণমূলকে ছোট করতে গিয়ে সারা দেশের সামনে বাংলার মা-বোনেদের ছোট করিয়েছে। দু’হাজার টাকা দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আর যে অভিযোগ করিয়েছে তাকে বিজেপি বসিরহাটের প্রার্থী করেছে।’’
যদিও মঙ্গলকোটের বিজেপি নেতা রানাপ্রতাপ গোস্বামীর দাবি, ‘‘অভিষেক যতই সভা করুন না কেন মানুষ ওদের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইছে। সভায় লোক হয়নি। ভোটে মানুষ আমাদেরই সমর্থন করবেন।’’