মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে মালদহের মঞ্চ থেকে কটাক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বললেন, ‘‘দেখেছেন তো, আমার পিছনে লাগতে গিয়ে ওদের সভাপতি নিজেই ‘জয় বাংলা’ বলে ফেলেছে! ওটাই সত্যি। ওটাই বাংলাকে বাঁচাবে। বাংলারই জয় হবে।’’
মালদহে নতুন করে পরিবর্তনের ডাক দিলেন মমতা। বললেন, ‘‘সারা বছর বিজেপি সঙ্গে থাকে না। ভোটের সময় আসে টাকা দিতে। ওদের বলুন পাঁচ থেকে ১০ হাজারে চলবে না। ওতে ভোট হয় না। আগে গত বারের ১৫ লক্ষ টাকার হিসাব দিন। সারা বছর কোনও খবর নেই, তোমার দেখা নেই। তাই চলুন বদলাই, চলুন পাল্টাই! দিল্লিতে বিজেপিকে তাড়াতে হবে।’’
মমতা বললেন, ‘‘মায়েরা হাতা, খুন্তি, নোড়া নিয়ে রান্নাঘরে খেলেন। শিলনোড়া দিয়ে দাঁতও মাজা যায় জানেন তো? মালদহ থেকে বিজেপিকে উপড়ে দিন।’’
বিজেপি প্রার্থীর স্বামী কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তা হলে অসুবিধা হয় না। আর আমাদের বিধায়ক লাভলি (মৈত্র)-র স্বামী পুলিশকর্তা হলে সমস্যা? প্রশ্ন মমতার।
মমতা বললেন, ‘‘বিজেপি সব বিক্রি করে দিয়েছে। দেশ বিক্রি করেছে, মানুষ বিক্রি করে দিয়েছে, মানবিকতা বিক্রি করে দিয়েছে, সংবিধানকে বিক্রি করে দিয়েছে। সংবিধানকে তুবড়ে দিয়েছে, সংবিধানকে ছিবড়ে করে দিয়েছে।’’
বিজেপি খবর পেয়েছে, ভোট কমে গিয়েছে। কমিশনের কাছ থেকে খবর পেয়েছে ওরা। তাই এখন ওরা ভয় পেয়েছে। বিজেপির বুক দুরদুর করছে ভয়ে। মোদীবাবুর (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) নামে আর ভোট হচ্ছে না। তাই এখন গলাবাজি কমে এসেছে। বললেন মমতা।
মালদহ উত্তরে মমতার প্রশ্ন, ‘‘এ বার বিজেপি যাবে? বিজেপিকে বিদায় দেওয়া হবে’’ মঞ্চে ঘুরে ঘুরে জনতার সঙ্গে স্লোগান মমতার। সমস্বরে জবাবও আসছে চারপাশ থেকে।
আগে একটা শংসাপত্র পেতে কত ছোটাছুটি করতে হত? জাতি শংসাপত্র পেতে কত ছোটাছুটি করতে হত? প্রশ্ন করলেন মমতা। বললেন, ‘‘এখন আইনের সরলীকরণ করা হয়েছে। আপনি নিজের শংসাপত্র নিজেই দেবেন। নিজেকেই নিজে সার্টিফাই করবেন। পরিশ্রম কমেছে। ’’
১৭ শতাংশ জনজাতির সংরক্ষণ কে করেছিল, বুকে হাত দিয়ে বলুন তো? এলাকার আদিবাসীদের উদ্দেশে প্রশ্ন মমতার।
মমতা ঘোষণা করছেন রাজ্যের সমস্ত স্তরের মানুষের জন্য তাঁর সরকার কী কী প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে। বললেন, ‘‘মা লক্ষ্মীরা আপনারা জানেন তো, আপনাদের টাকাটা বেড়েছে।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এটা আমাদের ভোট নয়। তবু আমি বলছি কী কী কাজ করেছি।’’ মালদহ নিয়ে রাজ্য সরকারের সমস্ত প্রকল্পের কথা জানালেন মমতা।
বাংলা সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে তাই ওরা হিংসায় জ্বলছে, তাই লুচির মতো ফুলছে। বললেন মমতা।
মালদহ উত্তরের হরিশ্চন্দ্রপুর ১-এ সভা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঞ্চে বললেন, ‘‘মালদহের এই দুটো আসন আমরা কোনও দিন পাইনি। এ বার কি রায় বদলানো যায় না? আপনারা কি এ বারও ফিরিয়ে দেবেন? আমরা তো কাজ করেছি। এমনকি, কেন্দ্রের সমস্ত প্রকল্পের টাকা তো আমরাই দিয়েছি।’’
মালদহে মমতার সভায় অতিরিক্ত ভিড়, উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘সভা নিয়ে ভাবছি না। মানুষ পড়ে যাবে। আমার চিন্তা হচ্ছে।’’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মন্ত্রী ইন্দ্রনীলকে নির্দেশ দিলেন, ‘‘আগে এটা ঠিক করার ব্যবস্থা করো। পরের বার থেকে যে ভাবে মানুষের বসার ব্যবস্থা করতে বলব, সে ভাবেই করতে হবে। এই গরমে ওঁরা বাঁশের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। ওঁদের জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে। বাঁশ ধরে ঝুললে তো ভেঙে পড়ে যাবে।’’
লোকসভা আসনের পুনর্বিন্যাসের পরে মালদহ উত্তর এবং দক্ষিণ আসনে কোনও দিন জয়ের স্বাদ পায়নি তৃণমূল। এ বার এই দুই আসনেই জয় চাইছেন মমতা।