Lok Sabha Election 2024

‘বাঘের তবু দেখা মেলে, নেতাদের তো চোখেই দেখি না’

গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে নানা পেশার অসংখ্য মানুষ। জীবন-জীবিকা অনেকেরই মসৃণ নয়। বহু ঘাত-প্রতিঘাতে প্রতি দিন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিঁকে থাকতে হয়। ভোট নিয়ে কী ভাবছেন তাঁরা, খোঁজ নিল আনন্দবাজার 

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

সুন্দরবন  শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫৬
Share:

জঙ্গলের গভীরে পৌঁছে গিয়েছেন মৌলেরা। —ফাইল চিত্র।

চৈত্রের পারদ চড়ছে। সঙ্গে চড়ছে ভোটের উত্তাপ। কিন্তু সেই তাপ লাগে না সুন্দরবনের মৌলেদের জীবনে। নিরুত্তাপ গলায় বিষ্টুপদ মণ্ডল, সাহাদাদ মণ্ডলেরা বলেন, “জঙ্গলে বাঘের সঙ্গে দেখা হয়, সাপের সঙ্গে দেখা হয়— কিন্তু ভোটের পরে মন্ত্রী-নেতাদের তো দেখাই মেলে না!’’

Advertisement

ভোটে সরকার বদলাক বা না বদলাক, তাঁদের জীবন যে বদলাবে না, তা মোটামুটি নিশ্চিত সুন্দরবনের মধু সংগ্রাহক বা মৌলেরা। তাই ভোট নিয়ে যে তাঁদের কিছু যায় আসে না, স্পষ্টই বলছেন সকলে। পাখিরালয়ের বাসিন্দা মুকুন্দ দাস, সুদর্শন মণ্ডলদের কথায়, “ভোট নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আমাদের লাভ কী? না খাটলে তো আর কেউ খেতে দেয় না। ভোটের দিন ভোট দেব, ব্যস এটুকুই।” নানা রকম ভয় সুন্দরবনের মৌলেদের জীবনে। জঙ্গলের বাঘ, জলে কুমিরের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশি জলদস্যুদের ভয়। সব ভয় উপেক্ষা করেই পেটের টানে, সংসার চালানোর তাগিদে ভরা চৈত্রের রোদ মাথায় নিয়ে সুন্দরবনের গহন অরণ্যে প্রবেশ করেন তাঁরা। জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে ‘মহল’ অর্থাৎ মৌমাছির চাক খুঁজে চলে মধু সংগ্রহ। এক মৌলে বললেন, ‘‘ভোট এখনও অনেক বাকি। তার আগেই শেষ হয়ে যাবে মধুমাস। আগে মহল থেকে ফিরি। তারপরে না হয় ভোট নিয়ে ভাবা যাবে।’’

আগামী তিন মাস সুন্দরবনের নদী, খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। মাছের প্রজননের সময় এটি। তাই আরও আর্থিক কষ্টের আশঙ্কায় দিন গুনছেন নদীপাড়ের মানুষজন। ফলে বিপদ জেনেও করেও জঙ্গলের পথ ধরেছেন মৌলেরা। সংগৃহীত মধু বন দফতর কেজি প্রতি ২৭০ টাকা করে তাঁদের থেকে কিনে নেবে। পাশাপাশি, মোম যা মিলবে তা আলাদা বাজারে বিক্রিও করা যাবে।

Advertisement

আমতলির বাসিন্দা ধনঞ্জয় নাইয়া বললেন, “ভোট যাকে ভাল লাগবে দেব। কিন্তু তা বলে পার্টির ঝান্ডা নিয়ে ঘুরতে পারব না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তিন মাস নদী খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরা বন্ধ থাকবে, খুবই অভাব চলবে সে সময়ে। সরকার যদি এই সময়ে আমাদের কিছু সাহায্য করে, তা হলে উপকৃত হই। কিন্ত আমাদের কথা কোনও দলের নেতারাই ভাবেন না।” তবে যারাই ভোটে জিতুক, মৌলেরা চান, সুন্দরবনে কংক্রিটের নদীবাঁধ, কর্মসংস্থানের দিকে সেই দল নজর দিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement