তৃণমূল অফিসের সামনে শিউলির গাড়ি ঘিরে ক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
কেশপুরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রথম প্রচারেই টের পেয়েছিলেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব। দ্বিতীয় দিনের প্রচারে এসে তিনি শুনলেন, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা না পাওয়া নিয়ে স্থানীয়দের একাংশের ক্ষোভও রয়েছে। আর তা শুনে তারকা প্রার্থীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের (জনপ্রতিনিধি) কাছে যদি আক্ষেপ না দেখায় মানুষ তো আর কার কাছে দেখাবে? আমাদের কাজই তো হচ্ছে মানুষের কাজ করে দেওয়া।’’
সোমবার বিকেলে কেশপুরে প্রচারে আসেন দেব। তাঁর গাড়ির আগেই ছিল মন্ত্রী তথা কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহার গাড়ি। ছুতারগেড়্যার কাছে দলের নেতা-কর্মীদের জটলা দেখে গাড়ি দাঁড় করান শিউলি। রাস্তার পাশে তৃণমূলের স্থানীয় কার্যালয়। বাম আমলে এটিই সিপিএম কার্যালয় ছিল। পালাবদলের পরে ‘দখল’ হয়েছে বলে অভিযোগ। মন্ত্রী যখন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন তাঁর গাড়ির সামনে আসেন কাবরুল বেগম নামে স্থানীয় এক মহিলা। অভিযোগ করেন, আবাসের বাড়ি থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাঁর বড় ছেলে শেখ বরজাহান আলি একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী হয়েও সরকারি ওই প্রকল্পের সুবিধা পাননি। অথচ গ্রামের এমন অনেকে বাড়ি পেয়েছেন, যাঁদের পাওয়ার কথাই নয়।
গাড়ির কাছে গিয়ে কাবরুল মন্ত্রীকে শোনান, ‘‘আমি মমতাকে দেখে পার্টি করেছি। এই পার্টি অফিসের জায়গাটা আমার শ্বশুরের। দেব আমার দেশের ছেলে। আমি কাউকে ভয় করিনি। অন্য অনেকে দু’তলা, তিনতলা বাড়ি করছে। আমার প্রতিবন্ধী ছেলেটা কেন বাড়ি পাবেনি? এটা শুধু আমার ব্যাপার নয়, আরও অনেকের ব্যাপার।’’
অদূরে তখন দেবের গাড়ি। প্রশ্নের মুখে অস্বস্তিতে পড়েন শিউলি। নেতা-কর্মীরা ওই মহিলাকে সরানোর চেষ্টা করেন। কাবরুলকে তখন বলে ওঠেন, ‘‘সরাচ্ছো কেন? দল করার জন্য দুর্দিনে মার খেয়েছি। সুদিনে আমাদের দল দেখেনি।’’ শিউলি বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘‘আরে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দিচ্ছে না তো।’’ কয়েকজন নেতার আশ্বাসে শেষে কাবরুল শান্ত হন। মন্ত্রীকে ঘিরে ধরে এই ক্ষোভের কথা কানে উঠতেই কেশপুরের ‘ঘরের ছেলে’ দেব বললেন, ‘‘শুধু মানুষের ভাল কথা শোনার জন্য তো আর জনপ্রতিনিধি হয় না। মানুষের রাগ, অভিমান— এ সবও শুনতে হয়। মানুষ তাঁর কাছেই আক্ষেপ করেন, যাঁকে বিশ্বাস করেন।’’
ওই মহিলা আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি কেন? স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য মহম্মদ রফিকের দাবি, ‘‘ওঁর এক ছেলে বাড়ি পেয়েছে। উনি সেটা জানেন না।’’