প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র ।
তোষণের অভিযোগ তুলে জনবিন্যাস বদল নিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করে মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল রামমন্দিরকে অপবিত্র বলে। এমন দল বাংলার সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারবে না। তুষ্টিকরণের জন্য সংবিধানের উপরও হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। আমাদের সংবিধান দলিতদের সংরক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু বাংলায় তার লুট হয়েছে। মুসলিমদের ভুয়ো ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। ওবিসিদের অধিকার কেড়ে মুসলিমদের দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা হাই কোর্ট রদ করেছে। তৃণমূল এই নির্দেশ মানতে বাধ্য। কিন্তু মুসলিমদের মিথ্যা বলছে। তুষ্টিকরণের জন্য এরা যে কোনও সীমা লঙ্ঘন করতে পারে। তৃণমূল বাংলায় অনুপ্রবেশকারীরা নিয়ে আসছে। অনুপ্রবেশকারীরা বাংলায় এসে আপনাদের জমিজায়গা কেড়ে নিচ্ছে। যুবদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। পুরো দেশ চিন্তিত। বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে জনবিন্যাস বদলানো হয়েছে। সিএএ নিয়ে কেন মিথ্যা বলেছে, কেন বিরোধিতা করেছে? অনুপ্রবেশকারীদের বাংলায় ঢোকানোর জন্য। হিন্দু শরণার্থীদের জায়গা দেবে না তৃণমূল। মতুয়াদের থাকতে দিতে চায় না। ৪ জুনের পর তৃণমূলের সব হাওয়া বেরিয়ে যাবে। আমাদের মতুয়া সমাজ এবং নমশূদ্র সমাজ নিজেদের অধিকার পাবেন। সকল শরণার্থীকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তৃণমূল বাংলার এই কেন্দ্রগুলিকে উন্নয়ন থেকে দূরে রেখেছে। কেবল বিজেপিই উন্নয়ন করতে পারে।’’
তৃণমূল বাংলার অস্তিত্ব নষ্ট করতে চায়। অভিযোগ তুললেন মোদী। মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল মঠ এবং সন্তদের অপমান করে। রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম এবং ইস্কনের মতো প্রতিষ্ঠানের সন্তদের অপমান করে গালিগালাজ দেয়। তৃণমূলের গুন্ডারা এই সব মঠে হামলা চালাচ্ছে।’’
তৃণমূলকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘‘আমরা সত্তরোর্ধ্বদের জন্য আয়ুষ্মান প্রকল্প এনেছি। কিন্তু তৃণমূল বলছে, ‘‘বাংলায় এটা হতে দেবে না’। কেন্দ্র সরকার মৎস্যজীবীদের এত যোজনা চালাচ্ছে। কত টাকা দিয়েছি। কিন্তু তৃণমূল সেই সব যোজনা হতে দেয়নি। তৃণমূলের মানুষের জন্য কিছু কোনও সহানুভূতি নেই। শুধু ওদের তোলাবাজ এবং কাটমানি নিয়েই ওদের যত ভাবনা। এই তৃণমূলকে কি সাজা দেবেন না? মথুরাপুরে নদী কাটা বন্ধ করতে কেন্দ্র টাকা পাঠায়। তৃণমূল সেই টাকা খেয়ে নিয়েছে। তৃণমূলের সব কাজে কাটমানি চাই। বাচ্চাদের মিড-ডে মিলেও কাটমানি চাই ওদের।’’
তৃণমূল এবং জোট ‘ইন্ডিয়া’ কে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং জোট ‘ইন্ডিয়া’ বাংলাকে উল্টো দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিজেপির প্রতি বাংলার ভালবাসা তৃণমূল সহ্য করতে পারছে না। সেই জন্য ওরা ক্ষেপে গিয়েছে। কী সব বলে। বাংলার প্রতি তৃণমূলের ঘৃণা দেখতে পাওয়া যায়। ওদের কাছে একটাই অস্ত্র— ‘এটা হতে দেবে না’। বিকাশের জন্য মোদী যা করে, তৃণমূল বলে সেটা হতে দেবে না।’’
মোদী আরও বলেন, ‘‘ভারত বিশ্বের পঞ্চম বড় অর্থনীতি থেকে তৃতীয় বড় অর্থনীতি হতে চলেছে। বিকশিত ভারতের জন্য বিকশিত বাংলা হওয়ার প্রয়োজন। ৪ জুন থেকেই বিকশিত ভারত নির্মাণ হবে। এই জন্য বাংলা থেকে বিজেপি প্রার্থীদের জেতাতে হবে। এই জন্য আপনাদের আশীর্বাদ চাই। আমি ভরসা দিচ্ছি।’’
মোদী বলেন, ‘‘এই নির্বাচনে বাংলায় এটা আমার শেষ সভা। এর পর আমি ওড়িশা, পঞ্জাবে চলে যাব। আমার শেষ সভায় এই পবিত্র মাটিতে আসার সুযোগ পেয়েছি। এই নির্বাচন আলাদা এবং অদ্ভুত। মানুষ ১০ বছরের উন্নতি এবং ৬০ বছরে দুর্দশা দেখেছে। ভারতে আনাহারের ছিল। যে দেশ আমাদের থেকে ছোট ছিল, তারা কোথায় পৌঁছে গিয়েছে। আমাদের কাছে যুব সম্প্রদায় এবং এত বুদ্ধিমত্তা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। সারা বিশ্বে ভারতের গুণগান হচ্ছে।’’
বক্তৃতা করতে এলেন মোদী। মথুরাপুরের মাটিকে প্রণাম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মথুরাপুরের পবিত্র মাটিতে আপনাদের আশীর্বাদ পেয়ে আমি খুশি। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সভা করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কম সময়ের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। আপনাদের ধন্যবাদ। কলকাতার মানুষকেও ধন্যবাদ। কলকাতার মানুষ রোড-শোতে যে ভালবাসা, আশীর্বাদ দিয়েছেন, তা আমি ভুলতে পারব না। কলকাতাবাসীদের উৎসাহ দেখে আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’
বলতে শুরু করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সুকান্ত বলেন, ‘‘তিন জন প্রার্থীর সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী মোদী এসেছেন। এই তিন লোকসভা কেন্দ্র অবহেলিত। তাই উন্নয়নের জন্য বিজেপি প্রার্থীদের জেতাতে হবে। শুনেছি ডায়মন্ড হারবারে সাত হাজার গুন্ডা ভাড়া করে আনা হয়েছে। কোনও গুন্ডামি বরদাস্ত করব না।’’
কাকদ্বীপের জনসভায় পৌঁছলেন মোদী। তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে কাকদ্বীপ। সেখানেই মোদীর জনসভা বুধবার। ওই সভায় মথুরাপুরের পাশাপাশি জয়নগর এবং ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থীও থাকবেন। মথুরাপুরে অশোক পুরকাইত, জয়নগরে অশোক কান্ডারি এবং ডায়মন্ড হারবারে অভিজিৎ দাসকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কাকদ্বীপের এই সভার জন্য মঙ্গলবার রাতে কলকাতাতেই থেকে গিয়েছিলেন মোদী। রাত কাটিয়ে রাজভবন থেকে কাকদ্বীপের কর্মসূচির জন্য তাঁর রওনা দেওয়ার কথা।