(বাঁ দিকে) বিমান বসু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
প্রথম দু’ফার ভোটের হার বৃদ্ধি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সেই একই সুর শোনা গেল বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর গলায়। যদিও বিমান মমতার মতো আগ্রাসী ভঙ্গিতে নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করেননি।
কলকাতা প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিমান। সেখানেই প্রশ্নের জবাবে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘প্রথম দু’দফার ভোটের হারের যে হিসেব কমিশন প্রথমে প্রকাশ করেছিল, তার পর তা ছ’শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। যদি তা গোনার ভুল হয়, তা হলে এক রকম। আর তা যদি না হয়, যদি দেখা যায় অন্য কায়দায় তা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা হলে তা ভয়ঙ্কর হবে। ভারতের নির্বাচন পদ্ধতি এবং তা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কমিশনকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।’’
মমতা অবশ্য এ বিষয়ে চড়া সুরে আক্রমণ শানিয়েছিলেন কমিশনের উদ্দেশে। গত বুধবার মুর্শিদাবাদের সভা থেকে বলেছিলেন, ‘‘আমি সব বিরোধী দলকে বলব, এ দিকে নজর দিন। নিজের নিজের রাজ্যে ইভিএমের হিসাব রাখুন। বিজেপি যেখানে কম ভোট পাচ্ছে, সেখানে ওরা রাতের অন্ধকারে তালা ভেঙে গণনাকেন্দ্রে ঢুকছে। ইভিএম বদলে দিচ্ছে।’’ মমতা এ-ও বলেছিলেন, ‘‘১৯ লক্ষ ইভিএম এখনও মিসিং। আমরা তার খোঁজ করেছি অনেক বার। ভুয়ো ইভিএম অন্য জায়গা থেকে এনে ওরা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। যেখানে বিজেপির ভোট কম, সেখানে বাড়তি মেশিন ঢোকাচ্ছে।’’
লোকসভা নির্বাচনের প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় সারা দেশে কত শতাংশ ভোট পড়েছে, গত মঙ্গলবার সেই হিসাব প্রকাশ করেছিল নির্বাচন কমিশন। প্রথম দফার ভোট হয়ে যাওয়ার প্রায় ১১ দিন পর এই চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। দেশে প্রথম দফার নির্বাচন হয় ১৯ এপ্রিল। সে দিন বাংলার তিন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। কমিশন সূত্রে ২০ তারিখ জানা গিয়েছিল, প্রথম দফায় দেশে ভোট পড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এর পর দ্বিতীয় দফার ভোট হয় ২৬ এপ্রিল, শুক্রবার। সে দিনও বাংলার তিনটি কেন্দ্রে ভোট হয়। কমিশন সূত্রে পর দিন অর্থাৎ শনিবার জানা যায়, দেশে গড়ে ভোট পড়েছে ৬০.৯৬ শতাংশ। এর পর মঙ্গলবার কমিশনের তরফে নতুন বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, প্রথম দফায় দেশে ৬৬.১৪ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দফায় ৬৬.৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ, আগে যা জানা গিয়েছিল, তার চেয়ে প্রায় ছয় শতাংশ বেড়ে গিয়েছে কমিশনের হিসাব।
শুক্রবার বিমান নির্বাচন কমিশনের গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচন কমিশন গড়ে তোলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ মতো। যা সুপ্রিম কোর্টের ঠিক করার কথা, তা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই কমিশন কী ভাবে কাজ করল, তা বোঝা যাবে ৪ জুন (ফল প্রকাশের দিন)।’’ তবে এত সন্দেহের মধ্যেও বিমান দাবি করেছেন, বাংলায় এ বার দ্বিমুখী ভোট হবে না। অর্থাৎ লড়াই কেবল তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে নয়। তাঁর দাবি, এ বার বাংলায় লড়াই ত্রিমুখী। তৃণমূল, বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে রয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটও। তা-ও বোঝা যাবে ৪ জুনই।