Lok Sabha Election 2024

কাশ্মীর নীতির সাফল্য নিয়ে প্রশ্নে বিজেপি

উপত্যকায় জঙ্গিদমন, পাথর ছোড়ার মতো ঘটনা নির্মূলের দাবি গত পাঁচ বছরে বার বার করেছে বিজেপি। দেশের বাকি অংশে তাদের এই প্রচার অনেকাংশেই কাজে দিলেও খোদ উপত্যকায় তা সে ভাবে কাজ করেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৫
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদ-সহ কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নানা পদক্ষেপ করার দাবি করলেও উপত্যকায় কি আদৌ নিজেদের জমি শক্ত করতে পেরেছে কেন্দ্রের শাসক দল? চলতি লোকসভায় কাশ্মীরের কোনও আসনেই বিজেপি প্রার্থী দিতে না পারায় এই প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উপত্যকায় কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা আব্দুল রশিদ মির আনন্দবাজারকে বলেন, “কাশ্মীরেই বিজেপির প্রার্থী দিতে না পারা প্রশাসনিক ব্যর্থতারই প্রতিফলন। কাশ্মীর নিয়ে স্থানীয়দের বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে।”

Advertisement

উপত্যকায় জঙ্গিদমন, পাথর ছোড়ার মতো ঘটনা নির্মূলের দাবি গত পাঁচ বছরে বার বার করেছে বিজেপি। দেশের বাকি অংশে তাদের এই প্রচার অনেকাংশেই কাজে দিলেও খোদ উপত্যকায় তা সে ভাবে কাজ করেনি। কারণ এখনও উপত্যকায় পাথর ছোড়া কিংবা হিংসার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে। সাম্প্রতিক কালে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে হামলাও কিছুটা বেড়েছে। আর বহু ক্ষেত্রে অশান্তির পরেই প্রকৃত দোষী না খুঁজে কাশ্মীরি যুবকদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।

ন্যাশনাল কনফারেন্সের ইমরান নবি বলেন, “২০১৮ থেকে কাশ্মীরের মানুষ শুধুই হিংসা দেখে আসছেন। শতাধিক যুবক জেলে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা না থাকলেও হেনস্থা করা হচ্ছে। যারা কাশ্মীরিদের জীবনকে নরক করে তুলেছে, তাদের কে ভোট দেবে!” শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, কাশ্মীরের লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে বিজেপি প্রার্থী না দেওয়ায় প্রশ্ন উঠছে সেখানে নরেন্দ্র মোদীর দলের সংগঠন নিয়েও। অনেকের অভিযোগ, উপত্যকায় পায়ের নীচে শক্ত মাটি না থাকায় সেখানে বিধানসভা নির্বাচন করতে গড়িমসি করছে মোদী সরকার।

Advertisement

বিজেপি নেতারা বারেবারেই কাশ্মীরে বিপুল উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু ২০১৯ সালে বিশেষ মর্যাদা রদের প্রায় পাঁচ বছর পরেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি বলে স্থানীয় স্তরে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে অনেকে মনে করছেন, স্থানীয়দের দৈনন্দিন অভাব-অভিযোগ চিহ্নিত করতে ব্যর্থতার জেরেই এই অবস্থা।

পিডিপি নেতা আরিফ লাইগারুর কথায়, “কাশ্মীরের জনতার হৃদয় জিততে না পেরেই এখানে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি।”

এক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে দেওয়া গিয়েছে— এই প্রচার তুলে ভারতের অন্য অংশে জোরালো প্রচার করতে চেয়েছে বিজেপি। জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নে যা সুবিধা দিতে পারে ভোটবাক্সে। কিন্তু খোদ উপত্যকার বাস্তবচিত্র আলাদা। সেখানে শাসক শিবিরের তরফে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি, অভিযোগ। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানাচ্ছেন, এখনও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। এমনকি উপত্যকার মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলির পরিবর্তে অন্য রাজনৈতিক শক্তি তুলে ধরতেও ব্যর্থ বিজেপি। সব মিলিয়ে পদ্ম শিবিরের কাশ্মীর নীতি আরও জটিল হয়েছে বলেই জানান নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অধ্যাপক।

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গুল ওয়ানি জানান, এখানে বিজেপির শক্তিশালী উপস্থিতি তৈরি না হওয়ার আরও একটা কারণ, রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে তাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ। তিনিও মনে করেন, মানুষের দৈনিক সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ না করে শুধু স্লোগান নির্ভর রাজনীতি বদলের প্রয়োজন মোদী-অমিত শাহের দলের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement