উদ্ধব ঠাকরে। —ফাইল ছবি।
নরেন্দ্র মোদীর মুখের কোনও লাগাম নেই বলে মনে করেন উদ্ধব ঠাকরে। তাঁর মতে, মোদী যা ইচ্ছে বলতেই থাকেন। যাকে তাকে 'নকল' হিসেবে উল্লেখ করে বক্তৃতা দিচ্ছেন। ফলে এমন দিন আসতে দেরি নেই যখন বিজেপি-আরএসএসকেও 'নকল সঙ্ঘ' বলে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
ষষ্ঠ পর্বের নির্বাচনের আগে আজ মুম্বইয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং এনসিপি (শরৎচন্দ্র পওয়ার) গোষ্ঠীর প্রধান শরদ পওয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ইন্ডিয়া মহাবিকাশ আগাড়ির মঞ্চ থেকে এই বার্তা দিয়েছেন একদা বিজেপির সবচেয়ে পুরনো জোটসঙ্গী বালাসাহেব ঠাকরের ছেলে উদ্ধব। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর বক্তব্য, "মোদী যাকে যা ইচ্ছে বলেন। শরদ পওয়ারকে উনি অস্থির আত্মা বলেছেন। তাঁর ন্যূনতম সংবেদনশীলতা নেই। আমাকেও উনি নকল সন্তান বলেছেন! আগামিকাল হয়তো আরএসএস-কে নকল সঙ্ঘ বলবেন। আমি তো মনে করি আরএসএস-এর বিপদ ঘনিয়ে আসছে। বিজেপি আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। ওরা (বিজেপি) প্রথমে লোকজনকে অপদস্থ করে বিপাকে ফেলে। তার পরে নিজের দলে টেনে নেয়। মহারাষ্ট্রে লুটপাট করতে চাইছে এখন।" বস্তুত এ দিনই এক সাক্ষাৎকারে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা বলেন, ‘‘প্রথমের দিকে বিজেপির কিছুটা অক্ষমতা ছিল। তাই আরএসএসকে প্রয়োজন হত। এখন বিজেপি সক্ষম। এখন তাই বিজেপি নিজেই চলতে পারে।’’
গত কালই উত্তরপ্রদেশের একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে রামলালাকে আবার তাঁবুতে ফেরত পাঠাবে, রামমন্দিরের উপরে বুলডোজ়ার চালাবে। স্বাভাবিক ভাবেই এই মন্তব্যকে ঘিরে গরম হয়েছে নির্বাচনী আবহাওয়া। আজ সাংবাদিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে খড়্গে বলেন, ‘‘বুলডোজ়ার তো ওদের মুখ্যমন্ত্রী (যোগী আদিত্যনাথ) চালিয়ে থাকেন। আমাদের সরকার কখনও কিছুর উপরে বুলডোজ়ার চালায়নি। রামমন্দির নির্মাণের কাজ এখনও চলছে এবং একটি ট্রাস্ট তার দায়িত্বে রয়েছে। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য এই ধরনের মন্তব্য করছেন মোদী।’’
খড়্গের দাবি, ‘‘এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশনের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া। বুলডোজ়ার চালানোর মতো অসম্ভব কথা বলে মানুষের মন বিষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।" উদ্ধবের কথায়, "আমরা ক্ষমতায় এলে রামমন্দির নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করব। ওরা তো অর্ধেক করে ফেলে রেখেছে।"
মহারাষ্ট্রে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন মহাদ্যুতি জোটের (বিজেপি-অজিত পওয়ারপন্থী এনসিপি, একনাথ শিন্দেপন্থী শিবসেনা) বিরুদ্ধে 'বিশ্বাসঘাতকতা' এবং 'ষড়যন্ত্রের' অভিযোগ এনেছেন খড়্গে, পওয়ার এবং উদ্ধব। তাঁদের বক্তব্য, মোদী ভয় দেখিয়ে, ব্ল্যাকমেল করে একের পর এক রাজ্যে দল ভাঙানোর খেলায় নেমেছেন। অন্য দলের প্রতীক কেড়ে নিয়ে বিজেপি-কে যারা সমর্থন করছে তাদের দিয়ে দিচ্ছেন। খড়্গের দাবি, "প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যাচ্ছেন মানুষের মনে ভয় তৈরি করার, সমাজকে বিভাজিত করার চেষ্টা করছেন। আমি ৫৩ বছর রাজনীতি করছি কিন্তু এমন প্রধানমন্ত্রী দেখিনি।" তাঁর কথায়, "কিছু দিনের জন্য কিছু লোককে তুমি মিথ্যা বলে বোকা বানাতে পারো। কিন্তু সব লোককে চিরকালের জন্য তো পারবে না। আমাদের ন্যায়পত্র পড়ে প্রথমে মোদী বলেছিলেন তা নাকি মুসলিম লিগের মতো। আমরা ৫টি ন্যায়ের কথা বলেছি। ২৪টি গ্যারান্টির কথা বলেছি। তার কোনটা দেখে তাঁর এমন মনে হল? এখন আবার বলছেন, আমাদের ইস্তাহার মাওবাদীদের মতো।"
আজ উদ্ধব ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ইন্ডিয়া মঞ্চের একাধিক যোগ্য নাম রয়েছে। এ নিয়ে জোটের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। তবে এখনই তা প্রকাশ্যে আনতে চাইছেন না তাঁরা। উদ্ধবের মতে, ইন্ডিয়া মঞ্চের প্রাথমিক কাজ এখন দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষা করা।