—প্রতীকী ছবি।
শেষ দফার ভোটে নির্বাচন কমিশনের নজরে রাজ্যের অন্যতম প্রান্তিক অঞ্চল সুন্দরবনের দ্বীপগুলি। যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম নয়, বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই বহু জায়গায়। সিসি ক্যামেরায় নজরদারি এই সব এলাকায় যথেষ্ট কঠিন। আজ শনিবার সেই কঠিন কাজগুলিকেই সম্ভব করা নির্বাচন কমিশনের কাছে অন্যতম পরীক্ষা।
বিদ্যুতের সমস্যা হলে ভোট যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য স্থানীয় ভাবে যেমন জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তেমনই রোদ-জল থেকে বাঁচতে ত্রিপলের চাঁদোয়া টাঙানো হয়েছে বুথগুলির সামনে। থাকছে জরুরি আলোর ব্যবস্থা। পানীয় জলও থাকছে প্রতি বুথে। নজরদারির জন্য শুক্রবার থেকেই বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। সেগুলি যাতে সব সময় চালু থাকে, তার জন্যই মূলত জেনারেটরের উপরে জোর দিয়েছে কমিশন। ড্রোনের মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
সুন্দরবনের দুর্গম এলাকার অন্যতম পাথরপ্রতিমা ব্লক। এই ব্লকের ছোট ছোট দ্বীপগুলিতে পৌঁছতে অনেকটাই সময় লাগে। এই রকম বুথের সংখ্যা পাথরপ্রতিমাতে ১৯৭টি। দূরের দ্বীপের বুথগুলোয় বৃহস্পতিবার সকাল সকালই নৌকো বা লঞ্চে করে পৌঁছে গিয়েছেন ভোটকর্মীরা। যাতে দীর্ঘ সময়ের জল-যাত্রায় ক্লান্ত হওয়ার পরে একটা দিন বিশ্রামের সময় পান। ২০১৯-এর লোকসভা ভোট সেরে ফেরার পথে লঞ্চ থেকে পড়ে এক ভোটকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা ও নদীগুলোয় জোয়ারের কথা মাথায় রেখে দ্বীপ এলাকায় ভোটের জন্য যে সমস্ত জলযান ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে লাইফ-জ্যাকেট ও লাইফ-বয়া রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষত এখনও রয়েছে সুন্দরবনের দ্বীপগুলিতে। সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচতে কার্বলিক অ্যাসিডও দেওয়া হয়েছে ভোটকর্মীদের। সঙ্গে আছে মশা মারার ক্রিম, ধূপ ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। ঘোড়ামারা দ্বীপে বিদ্যুৎ না থাকায় চারটি জেনারেটর সব সময়ের জন্য চলছে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে। মৌসুনি দ্বীপেও ভোটকেন্দ্রগুলিতে সব সময়ের জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক মধুসূদন মণ্ডল বলেন, “প্রত্যন্ত দ্বীপ এলাকাগুলোর জন্য বাড়তি নজর দিয়েছে কমিশন। দফায় দফায় খোঁজ নিয়েছে। ভোটকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”
প্রান্তিক এলাকার বুথগুলোতে পরিকাঠামোগত সমস্যা হচ্ছে কি না, তার খোঁজ নেবেন সেক্টর অফিসার। সেই সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পদাধিকারীদের ফোন নম্বরও ভোটকর্মীদের দেওয়া হয়েছে, যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। বসিরহাট লোকসভার রিটার্নিং অফিসার আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর বলেন, “সব বুথে জেনারেটর থাকছে। বিদ্যুতের অভাবে যাতে সিসি ক্যামেরার সরাসরি সম্প্রচারে সমস্যা না হয়।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, পুলিশের তরফেও একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে শেষ দফার ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে। কেন্দ্রীয় বাহিনী বৃহস্পতিবার থেকে বসিরহাট লোকসভার বিভিন্ন প্রান্তে ২৪ ঘণ্টাই নজরদারির চালিয়েছে। সন্দেশখালির ভোট শান্তিপূর্ণ করতে প্রতিটি দ্বীপ এলাকায় বাহিনীর সঙ্গে এক জন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার রাজ্য পুলিশের আধিকারিক থাকছেন ভোট শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত। সেই সঙ্গে বসিরহাট লোকসভায় মোট ১০৩টি কুইক রেসপন্স টিম থাকছে।