শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের তিন লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ হবে। প্রতীকী ছবি।
দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শুক্রবার। বাংলায় প্রথম দফায় তিন আসনে ভোটগ্রহণ। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি। গত লোকসভা নির্বাচনে এই তিন আসনেই জয় পেয়েছিল বিজেপি। দুই আসনে জয়ী সাংসদ কোচবিহারের নিশীথ প্রামাণিক এবং আলিপুরদুয়ারের জন বার্লা কেন্দ্রের মন্ত্রীও হয়েছেন। যদিও বার্লাকে এ বার প্রার্থী করেনি বিজেপি। তাঁর বদলে ওই আসনে প্রার্থী হয়েছেন বিধায়ক মনোজ টিগ্গা। তাঁর লড়াই তৃণমূল প্রার্থী প্রকাশচিক বরাইকের সঙ্গে। আবার আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাই সেই জমিতে সুমনের পরিচিতিও ভরসা তৃণমূলের। অন্য দিকে, বিধানসভা নির্বাচনে বা তার পরে এই তিন আসনের ভোট বিন্যাস বদলেছে। নিশীথের জেতা দিনহাটা বিজেপি দখল করেছে। এই আসনে বিদায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথের সঙ্গে লড়াই তৃণমূলের জগদীশ রায় বসুনিয়ার। জলপাইগুড়ি আসনের অন্তর্গত ধূপগুড়িও এখন তৃণমূলের। সেখানে আবার লড়াই বিজেপির বিদায়ী সাংসদ জয়ন্ত রায়ের সঙ্গে তৃণমূলের নির্মলচন্দ্র রায়ের। এমন পরিস্থিতিতে তিন আসনেই বিজেপি বনাম তৃণমূল লড়াই বেশ হাড্ডাহাড্ডি হবে বলেই আশা করছে শাসকদল। অন্য দিকে, বিজেপির দাবি, তিন জেতা আসনে জয় খুবই সহজ হবে। তবে ভোটের দিনের তৎপরতা রয়েছে।
শাসক শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন আসনের ভোট নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক তৃণমূল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি আসনে জিতেছিল বিজেপি। তাই এই আসনগুলি ফিরে পেতে মরিয়া তারা। জেলাভিত্তিক নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই উত্তরবঙ্গে থেকে নজরদারি করবেন। যদিও তাঁর মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুরে জনসভা রয়েছে শুক্রবার। সভা করার পাশাপাশি ভোটেও নজর রাখবেন মমতা। এ ছাড়াও কলকাতা থেকে ভোট পরিস্থিতির উপরে নজরদারি করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপির উত্তরের সংগঠন দক্ষিণের তুলনায় বেশি মজবুত। প্রধানত এই তিন আসনের ভোটে রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপরে। এর পাশাপাশি ফালাকাটার বিধায়ক তথা রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণ থাকছেন। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের আসন বালুরঘাটে ভোট রয়েছে দ্বিতীয় দফায়। ফলে তিনি শুক্রবারও প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন। তার মধ্যেই তিন আসনের ভোটে নজর রাখবেন তিনি। এ সবের পরেও বিজেপির ওয়ার রুম তৈরি হয়েছে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের দফতরে। সেখানেও কল সেন্টার খোলা হয়েছে।
এই তিন কেন্দ্রে বামেরা ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর জায়গায় পৌঁছেছে। ঘরোয়া আলোচনায় সিপিএম নেতারাও মানছেন, মূল লড়াই বিজেপি বনাম তৃণমূলের মধ্যেই। বামেদের লক্ষ্য কিয়দংশ ভোট বৃদ্ধি করা। কোচবিহারে বাম সমর্থিত ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নীতীশচন্দ্র রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আলিপুরদুয়ারে লড়ছেন আরএসপির মিলি ওঁরাও। এই দুই আসনে কতটা ভোট বাড়ানো যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান বাম নেতৃত্বই। তবে সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘জলপাইগুড়িতে এ বার আমাদের ভোট বৃদ্ধি করার অবকাশ রয়েছে।’’ সেখানে তরুণ দেবরাজ বর্মণ লড়ছেন। ইংরেজির শিক্ষক দেবরাজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে বলে দাবি সিপিএম নেতাদের। তাঁরা আশা করছেন, জলপাইগুড়িতে আগের থেকে ভোট শতাংশ বাড়বে। তবে তিন কেন্দ্রে বামেদের চ্যালেঞ্জ একটাই, বুথে এজেন্ট দেওয়া যাবে কি না।