প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।
নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে তাঁর জন্ম জৈবিক ভাবে হয়নি। ‘পরমাত্মা’ তাঁকে পাঠিয়েছেন। বিশেষ কোনও কাজ করার জন্য তাঁকে পাঠানো হয়েছে। আজ আবার নরেন্দ্র মোদী একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বললেন, ঈশ্বর তাঁকে ২০৪৭-এ ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্য পূরণের জন্য পাঠিয়েছেন। যত দিন না সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে, তত দিন পরমাত্মা তাঁকে ফিরিয়ে নেবেন না।
আজ রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুললেন, মোদীকে পরমাত্মা পাঠিয়ে থাকলে কোভিডের সময় যখন গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসছিল, হাসপাতালের সামনে মৃতদেহ জমছিল, তখন তিনি থালা বাজাতে বলছিলেন কেন! যাঁকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন, তিনি বলেছিলেন, মোবাইল ফোনের আলো জ্বালাও। যাঁকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন, তিনি কেন শুধু আদানি, অম্বানীর মতো দেশের ২২ জন কোটিপতির জন্য কাজ করেন? কংগ্রেস নেতাদের কটাক্ষ, মোদী এত দিন নিজেকে ঈশ্বর প্রেরিত বলেছিলেন। এখন তাঁর ইচ্ছা-মৃত্যুর ক্ষমতা রয়েছে বলেও দাবি করছেন।
সম্প্রতি বারাণসীতে এক সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি এত প্রাণশক্তি কোথা থেকে পান? নরেন্দ্র মোদী উত্তরে বলেন, “যত দিন মা বেঁচে ছিলেন, আমার মনে হতো, বোধ হয় আমার জন্ম জৈবিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে। কিন্তু মা চলে যাওয়ার পরে আমার অভিজ্ঞতা মিলিয়ে বলতে পারি, আমাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন। সেই জন্যই এত কাজের প্রাণশক্তি। কোনও কাজ আমাকে দিয়ে করানোর রয়েছে। সেই জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে।”
আজ একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে ৭৩ বছর বয়সী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “ঈশ্বর আমাকে ২০৪৭-এ বিকশিত ভারতের লক্ষ্য পূরণের জন্য পাঠিয়েছেন। আমার পূর্ণ বিশ্বাস, যত দিন না সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে, আমাকে পরমাত্মা ফিরিয়ে নেবেন না।” প্রসঙ্গত, ২০৪৭-এ নরেন্দ্র মোদীর বয়স হবে ৯৬ বছর।
বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্ব দিল্লির দিলশাদ গার্ডেনে ভোটের প্রচারে গিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। দিল্লির ৭টি লোকসভা কেন্দ্রে শনিবার ভোট। আজই ছিল প্রচারের শেষ দিন। রাহুল জনতাকে প্রশ্ন ছোড়েন, তাঁরা মোদীর সাক্ষাৎকার দেখেছেন কি না? উত্তর-পূর্ব দিল্লির লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কানহাইয়া কুমারও সেখানে হাজির ছিলেন। রাহুল বলেন, “কানহাইয়া যদি আমাকে এসে বিশ্বাস করে বলে যে ওঁর জন্ম জৈবিক ভাবে হয়নি, ওঁকে পরমাত্মা পাঠিয়েছে, আমি কানহাইয়াকে হাত জোড় করে বলব, এইসব কথা তুই ভুল করেও বাইরে বলিস না। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী খোলাখুলি বলছেন, তাঁর জন্ম জৈবিক ভাবে হয়নি। তাঁকে পরমাত্মা পাঠিয়েছে। ওঁর চামচারা ‘বাহ, বাহ’ করছেন। যাঁকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন, তিনি কোভিডের সময় বলছেন, থালা বাজাও। যখন গঙ্গায় লাশ ভাসছে, হাসপাতালের সামনে মানুষ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করছে, তখন প্রধানমন্ত্রী এসে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নন, ঈশ্বর প্রেরিত, তিনি বলেন, ভাই ও বোনেরা, মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে দাও।”
রাহুল বলেন, “যাঁকে পরমাত্মা পাঠাচ্ছে, তাঁর কাছে তরুণরা রোজগার চাইলে তিনি বলছেন, নালায় গ্যাস রয়েছে। সেই নালায় পাইপ ফেললে গ্যাস বের হবে। তাতে আগুন জ্বালিয়ে পকোড়া বানাও। যাঁকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন, তিনি শুধু ২২ জন কোটিপতির জন্য কাজ করেন। শুধু আদানি ও অম্বানীর জন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছে, ধনীরা কেন আরও ধনী হচ্ছেন? গরিবরা কেন আরও গরিব হচ্ছেন? মোদীজি ৩০ সেকেন্ড ভেবে উত্তর দিয়েছেন, তা হলে কি আমি সবাইকে গরিব করে দেব?” রাহুল মজা করেন, ‘‘হে পরমাত্মাজি, আপনি এ কেমন লোককে পাঠিয়ে দিলেন?”
দিলশাদ গার্ডেনের প্রচারের পরে মেট্রো রেলে চেপে উত্তর-পশ্চিম দিল্লির মঙ্গলপুরীতে মহিলা সম্মেলনে যান রাহুল। পরে টুইট করে মনে করিয়ে দেন, দিল্লির মেট্রো রেল কংগ্রেসের আমলেই চালু হয়েছিল। প্রচারের ফাঁকে অন্ধ্র ভবনের রেস্তরাঁয় গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। মহিলা সম্মেলনে রাহুল অভিযোগ করেন, বিজেপি মহিলাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখতে চায়। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে গরিব মহিলাদের বছরে এক লক্ষ টাকা করে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দেন রাহুল। এক মহিলা মূল্যবৃদ্ধির কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। বলেন, ভোটের আগে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে। ভোটের পরে সিলিন্ডারের দাম বাড়লে কী ভাবে সংসার চলবে? রাহুল তাঁর চোখের জল মুছিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, “আপনার পরিবারের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।” ওই মহিলার সমস্যা দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের দেখতে বলেন রাহুল। আজ দিল্লির ভোটের প্রচারের শেষ দিনে সনিয়া গান্ধী ভিডিয়ো বার্তায় দিল্লির ৭টি আসনে কংগ্রেস-আম আদমি পার্টির প্রার্থীর বলেছেন, “বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, সাংবিধানিক সংস্থার উপরে আক্রমণের প্রশ্নে এই নির্বাচন লড়া হচ্ছে।”
পরমাণু অস্ত্রধারী পাকিস্তানের কত ক্ষমতা, তা তিনি নিজে পাকিস্তানে গিয়ে পরীক্ষা করে এসেছেন বলে আজ নরেন্দ্র মোদী দাবি করলেন। একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি কোনও রকম নিরাপত্তার পরীক্ষা ছাড়াই লাহোরে নেমেছিলাম। ওঁদের এক জন সাংবাদিক টিভিতে বলেছিলেন, ‘হায় আল্লা, মোদী ভিসা ছাড়া পাকিস্তানে ঢুকে পড়েছেন।’’ পাকিস্তান যে অবিভক্ত ভারতের অংশ ছিল, সেই ইঙ্গিত দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘আমি কেন যেতে পারব না? ওটা এক সময়ে আমার দেশ ছিল।’’