মহুয়া মৈত্র এবং মুকুল রায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের মুখেই কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন সাংসদ ও বিধায়ককে তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। যা নিয়ে এরই মধ্যে আক্রমন শানাতে শুরু করেছে সিপিএম-বিজেপি। তাদের দাবি, তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা যে কতটা দুর্ণীতিগ্রস্ত তা আবারও প্রমাণিত হয়ে গেল। তারা যে বিষয়টিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারের কাজে সর্বশক্তি দিয়ে ব্যবহার করবে তা বিরোধী দলের নেতাদের কথাতেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের পাল্টা দাবি, এর পিছনে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি কাজ করছে।
সংসদে ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে আর একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে মুকুল রায়কে ডেকেছি ইডি। তাদের তলব নিয়ে তৃণমূলের জেলা নেতারা মহুয়া মৈত্রের হয়ে সওয়াল করলেও কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক মুকুল রায়ের দায়িত্ব নিতে তাঁরা এক প্রকার রাজি নন। উল্টে তাঁদের দাবি, মুকুল বিজেপির বিধায়ক। তাঁর বিষয়ে বিজেপিকেই কৈফিয়ত দিতে হবে। আবার বিজেপির দাবি, মুকুল বিজেপির টিকিটে জয়ী হলেও পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে তাঁর যাবতীয় কৃতকর্মের দায় তৃণমূলকেই নিতে হবে।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন মুকুল রায়। পরে তিনি অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলে ফিরে যান। যদিও বিধানসভায় খাতায়-কলমে তিনি এখনও বিজেপির বিধায়কই রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে ইডি-র তলব নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল কোনও দলই যে দায়িত্ব নিতে চাইবে না সেটাই প্রত্যাশিত। দু’দলই তাঁকে কার্যত ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছ।
কিন্তু মহুয়ার পক্ষে সওয়াল করতে তৃণমূল নেতৃত্ব কার্যত কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। সম্প্রতি নদিয়ায় এসে মহুয়ার প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে অনেকটাই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন মমতা। মহুয়ার অনুগামীদের পাশাপাশি সাধারণ তৃণমূল নেতাকর্মীরাও তাঁকে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে ধরে নিয়ে ময়দানে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তবে পঞ্চায়েত ভোটের ফলের নিরিখে এ বার লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রটি তৃণমূলের জন্য অন্যতম কঠিন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বলে মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল। ভোটের আগে মহুয়াকে ইডি ডাকাডাকি করতে থাকলে তা তৃণমূলের জন্য যে ভাল হবে না সেটা জেলা নেতৃত্ব ভাল ভাবেই বুঝতে পারছেন। আর তাই প্রথম থেকেই মহুয়ার হয়ে চালিয়ে ব্যাট করতে চাইছেন তাঁরা।
বিরোধীরা অবশ্য বসে নেই। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এসএম সাদি দাবি করেন, “তৃণমূলের নেতারা আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত, সেটা কালীঘাট থেকে শুরু করে বুথ স্তর পর্যন্ত। কৃষ্ণনগরবাসীর কতটা দুর্ভাগ্য হলে তাঁরা এমন বিধায়ক ও সাংসদ পান।” তবে তাঁর মতে, “মুকুল রায়ের মতো তৃণমূলের চোরদের আশ্রয় দেওয়া ছাড়া বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই।” বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সৈকত সরকার পাল্টা বলেন, “মুকুল রায় তো তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। তাঁর বিষয়ে তৃণমূলই কথা বলবে।” তাঁর কটাক্ষ, “তৃণমূল দলটাই দেখবেন জেলে চলে গিয়েছে, লোকসভা ভোটে প্রার্থী খুঁজে পাবে না!”
তবে তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র তথা কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা দেবাশিস রায়ের দাবি, “মুকুল রায় বিজেপির বিধায়ক। তাই তাঁর বিষয়ে বিজেপিকেই উত্তর দিতে হবে। তবে মানুষ বুঝতে পারছে যে মহুয়া মৈত্রকে রাজনৈতিক চক্রান্ত করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ তিনিই দেশের মধ্যে একমাত্র সাংসদ যিনি আদানিদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। মানুষ ভোটে তাঁর হয়ে জবাব দেবে।”