অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের মতোই আবাস যোজনার ‘বকেয়া’ টাকা মেটাবে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। গঙ্গারামপুরের সভা থেকে তেমনই ইঙ্গিত দিলেন অভিষেক। তিনি বলেন, “বিজেপির দয়ায় বাংলা বেঁচে নেই। আপনারা লোকসভা নির্বাচনে বাংলার লড়াইয়ে বাংলার পাশে থাকুন। যাঁরা যেখানে বাড়ির জন্য আবেদন করেছেন, আপনাদের আবেদন অগ্রাধিকার দিয়ে দেখে তার সমাধান করবে মা-মাটি-মানুষের সরকার। কারও কাছে হাত পাততে হবে না।” অভিষেক জানান, দু’বছরের মধ্যেই এই কাজ করবে সরকার। কথা না রাখতে পারলে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে মানুষ তার জবাব দেবেন বলে জানান ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের মানুষ নিজের অধিকারকে সামনে রেখে ভোট না দিয়ে ধর্মকে সামনে রেখে ভোট দিয়েছিলেন বলেই ২০১৯ সালে সুকান্ত মজুমদার জয়ী হয়েছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের সভা থেকে এমনই দাবি করলেন অভিষেক। এর পাশাপাশি জনসভায় উপস্থিত মানুষজনকে নিজেদের অধিকারকে সামনে ভোট দেওয়ার আর্জি জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে বিজেপির নেতারা খোলাখুলি তর্কযুদ্ধে আসার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি। প্রত্যেককে সভা থেকে এলাকায় ফিরে এ কথা ২০ জনকে জানানোর কথা বললেন অভিষেক।
বৃহস্পতিবার সকালে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে অভিষেক লিখেছিলেন, ‘‘মিথ্যাচার করার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জনগণের টাকা নষ্ট করছে। আমি বিজেপি নেতৃত্বকে আমার সঙ্গে মুখোমুখি তর্কে বসার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। ২০২১ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পগুলিতে ১ পয়সাও বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র। আমি যে ভুল তা প্রমাণ করার জন্য বিজেপিকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।’’
কোনও নির্দিষ্ট নেতা নয়, বিজেপি দলের তরফে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নেওয়া হয়। রাজ্য বিজেপির এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বিজ্ঞাপন (যাতে রাজ্যকে বরাদ্দের বিবরণ রয়েছে) পোস্ট করে লেখা হয়, ‘‘আপনি আপনার সুবিধামতো স্থান ও সময় জানান। আমরা আমাদের যুব মোর্চার কোনও এক জন কর্মীকে পাঠিয়ে দেব বিতর্কের জন্য। আপাতত এটা (বিজ্ঞাপন) পড়ে নিন।’’ বিজেপির পোস্টে অভিষেকের নামোল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু সেই পোস্টটি ‘রিপোস্ট’ করে অভিষেক আবার লেখেন, ‘‘আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টের সময় ময়নাগুড়ি টাউন ক্লাবের মাঠে। দয়া করে রেগা ও আবাস যোজনার শ্বেতপত্র সঙ্গে নিয়ে আসবেন। দেখা হবে।’’
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ২৯ মিনিট পর্যন্ত এমনই উত্তেজনা ছিল তৃণমূল এবং বিজেপি শিবিরে। কিন্তু তার মিনিটখানেকের মধ্যেই তৃণমূলের মঞ্চে গিয়ে বিতর্কে যোগদান থেকে পিছু হাঁটে বিজেপি। ১টা ৩০ মিনিটে বিজেপির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হতে মঞ্চে যাচ্ছেন না কেউ। ফলে সকাল থেকে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের লড়াই আন্তর্জালেই থেকে যায়। কারণ, শেষবেলায় রণে ভঙ্গ দেয় বিজেপি। প্রত্যাশিত ভাবেই তার পূর্ণ সুযোগ কাজে লাগাছেন অভিষেক। নাটকীয় ভাবে ময়নাগুড়ির মঞ্চে বিজেপির অনুপস্থিতিকে তুলে ধরেন তিনি। দেখিয়ে দেন, তর্কের প্রস্তুতি নিয়ে জোড়া পোডিয়াম তৈরিই ছিল। কিন্তু বিজেপি আসেনি!
বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রচারে গিয়ে সুকান্তকে তোপ দাগলেন অভিষেক। বিজেপির রাজ্য সভাপতির নাম না করেই অভিষেক বলেন, “যাঁকে ভোট দিয়ে জেতালেন, তিনি বলছেন বাংলার টাকা আটকে রাখো। তাঁকে কি ভোট দেবেন?” অভিষেক আরও বলেন, “এই কেন্দ্রের সাংসদ সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, আমি একটা ফোন করব আর টাকা চলে আসবে। তা হলে বুঝতে পারছেন, আপনাদের টাকা কে আটকে রেখেছে?”
গত তিন বছরে আবাস, ১০০ দিনের কাজ-সহ কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ভোটপ্রচারে কেন্দ্র কত টাকা রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করেছে, তা বালুরঘাটে ভোটপ্রচার করতে এসে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনই দাবি তুললেন অভিষেক। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে এসে তিনি দাবি করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারকে আবাস প্রকল্পের টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সে টাকা নিয়ে ‘দুর্নীতি’ হয়েছে। এর পরেই ১০ মার্চ ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে আবাস প্রকল্পে মোদীর দাবি খণ্ডন করে চিঠি দেখিয়ে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘২০২২-’২৩ এবং ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে আবাসের একটি টাকাও দেয়নি কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন।’’ অভিষেক আরও বলেছিলেন, ‘‘কত টাকা ১০০ দিনের কাজে দিয়েছেন, কত টাকা আবাসে দিয়েছেন, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে যদি না-ও পারেন, বিজেপির যে কোনও নেতা, কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনও অফিসারকে কলকাতায় পাঠাবেন। চ্যানেল, সঞ্চালক, সময় আপনি ঠিক করুন। দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে যাবে।’’ সোমবার গঙ্গারামপুরের সভাতেও একই কথা বলেন অভিষেক।
মোদীজির গ্যারান্টি ভাষণ, আর দিদির গ্যারান্টি রেশন। কার গ্যারান্টি জনগণ নেবে, তা তাদেরকেই ভেবে দেখতে হবে। দলীয় জনসভা থেকে বললেন অভিষেক।
পাঁচ বছরে কী কাজ করেছে বিজেপি? গঙ্গারামপুরের সভা থেকে সেই প্রশ্নই তুললেন অভিষেক। এর পাশাপাশি তুলে ধরেন রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের কথাও।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে তাঁকেই সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন অভিষেক। তিনি বলেন, “গত তিন বছরে আবাস এবং ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ১০ পয়সা বরাদ্দ করা নিয়েও যদি বিজেপি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারে, তবে রাজনীতির ময়দানে পা রাখব না।” এই নিয়ে তর্কে অংশ নেওয়ার সুকান্তকে খোলা আহ্বানও জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।