নির্বাচন কমিশন। — ফাইল চিত্র।
মোবাইলে ‘বিকশিত ভারত’ নিয়ে বার্তা পাঠানো অবিলম্বে মোদী সরকারকে বন্ধ করার নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন। আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকার সময় হোয়াট্সঅ্যাপে এমন বার্তা যাতে আর দেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এই মর্মে কেন্দ্রীয় তথ্য এবং প্রযুক্তি মন্ত্রককে বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মোদী সরকারের ওই বার্তা নিয়ে তৃণমূল-সহ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল সরব হওয়ার পরেই কমিশনের এই পদক্ষেপ।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে কমিশন। তাতে জানানো হয়েছে, গত ১৫ মার্চ নির্বাচনী আচরণবিধি জারির আগে ‘বিকশিত ভারত’ সংক্রান্ত বার্তা হোয়াট্সঅ্যাপে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রযুক্তিগত এবং ইন্টারনেট পরিষেবার সীমাবদ্ধতার কারণে সেই বার্তা অনেক দেরিতে নাগরিকদের মোবাইলে প্রবেশ করছে। নির্বাচনী আচরণবিধি জারির পরে এখনও সেই বার্তা পাচ্ছেন নাগরিকদের একাংশ। কমিশনের তরফে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই বার্তা পাঠানো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এই নিয়ে অভিযোগ আসছে কমিশনের কাছে। এখন যে হেতু নির্বাচনী আচরণবিধি জারি রয়েছে, সে কারণে এই বার্তা আর পাঠানো যাবে না। দ্রুত এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে।
গত শনিবার ভোটের দিন ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আইন মেনে তার পর থেকেই জারি হয় আদর্শ আচরণবিধি। এই বিধি জারি থাকার সময় সরকার বা প্রশাসন কোনও জনমোহিনী প্রকল্প ঘোষণা করতে পারে না। তার প্রচারও করতে পারে না। পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে পারে না। প্রচারের কাজে সরকারি যন্ত্র, পরিবহণ বা প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে পারে না ক্ষমতাসীন সরকার। বহু নাগরিক জানিয়েছেন, এই নির্বাচনী বিধি জারি হওয়ার পরেও মোবাইলে ‘বিকশিত ভারত’ নিয়ে কেন্দ্রের বার্তা পেয়েছেন। সেখানে ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। সেই নিয়েই সরব হন বিরোধীরা। অভিযোগ করেন, আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকার সময় কী ভাবে এই প্রচার চালাচ্ছে কেন্দ্র।
গত সোমবার, ১৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপির বিরুদ্ধে কমিশনের দ্বারস্থ হয় তৃণমূল। কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে তৃণমূল লেখে, গত ১৫ মার্চ ‘আমার প্রিয় পরিবারবর্গ’ বলে একটি চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে গত এক দশকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি এবং প্রকল্পের কথা রয়েছে। হোয়াট্সঅ্যাপের মাধ্যমে গোটা দেশের জনগণের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ওই বার্তা। সেই বার্তার একটি অংশে লেখা ছিল ‘‘এই চিঠিটি পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার। গত ১০ বছরে ভারতের ১৪০ কোটির বেশি জনগণ সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। আগামী দিনেও তাঁরা উপকৃত হবেন।’’ তৃণমূলের যুক্তি, মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকার এই চিঠি পাঠাচ্ছে বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু আসন্ন লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী নিজে বারাণসী কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাই এটা স্পষ্ট যে, সরকারি অর্থ ব্যবহার করে ভোটের আগে সরকারি প্রকল্পের প্রচার করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি।
সোমবার কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে তৃণমূল অভিযোগ করেছে, নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণার পর ওই বার্তা হোয়াট্সঅ্যাপে ছড়ানো স্পষ্টতই নির্বাচনী আদর্শ বিধিভঙ্গের উদাহরণ। রাজনৈতিক প্রচারে সরকারি অর্থ এবং পদ ব্যবহার করা সমীচীন নয়। তাই কমিশন মোদী এবং বিজেপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক। সংশ্লিষ্ট চিঠিতে তৃণমূলের তরফে সই রয়েছে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক’ও ব্রায়েনের। চিঠির শেষে সংশ্লিষ্ট হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশটও কমিশনকে পাঠায় তৃণমূল। আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে এই নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ এনেছে তৃণমূল। এর আগে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে চড়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছে জোড়া ফুল।