—প্রতীকী চিত্র।
কোথাও জরুরি অস্ত্রোপচারে দেরি হচ্ছে। কোথাও রোগীর পরিবারকে ছুটতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় রক্তের সন্ধানে। রক্ত সংগ্রহে বেশি সমস্যায় পড়ছেন থ্যালাসেমিয়া ও হিমোফিলিয়ায় আক্রান্তেরা। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের খাতায় তাঁদের নাম থাকলেও ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, বলা হচ্ছে, দাতা না নিয়ে এলে রক্ত দেওয়া সম্ভব নয়। শুধু তা-ই নয়, আনতে হবে যে গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন, সেই গ্রুপেরই দাতা। অথচ, তাঁদের কারও রক্তের প্রয়োজন হয় মাসে দু’বার, কারও বা তার চেয়েও বেশি।
লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন রাজ্যে রক্তের আকাল এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে খবর। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের দাবি, এমনিতেই প্রতি বছর গরমে রক্তদান শিবির কম হয়। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্বাচন। ভুক্তভোগীদের দাবি, চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচন হচ্ছে সব থেকে দীর্ঘ সময় ধরে। ফলে রক্তের আকাল চরমে পৌঁছেছে। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ডি আশিস বললেন, ‘‘রাজ্যে যত রক্তদান শিবির হয়, তার ৬০ শতাংশই হয় রাজনৈতিক উদ্যোগে। ৪০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে হয়। এত দিন ধরে ভোট চলায় বহু আগে থেকেই রাজনৈতিক উদ্যোগে শিবির হচ্ছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ছোট ছোট সংগঠনও শিবির করার সাহস দেখাচ্ছে না।’’
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে রাজ্যে দৈনিক চার হাজার ইউনিট রক্ত দরকার হয়। অর্থাৎ, বছরে প্রায় সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ ইউনিট। এই রাজ্যে ৮৯টি সরকারি, ৪৫টি বেসরকারি এবং ১৬টি কেন্দ্রীয় সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। কিন্তু গত বছরই সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১০ লক্ষ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হয়েছিল। চলতি বছরে সংগৃহীত রক্ত অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
রক্ত পেতে নাজেহাল এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘সরকারি হাসপাতালে মা ভর্তি আছেন। কিন্তু সেখানে রক্ত মেলেনি। রক্তদান শিবিরের কার্ড নিয়ে সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে যেতেই বলা হল, কার্ডে থাকলেও দাতা না নিয়ে এলে রক্ত দেওয়া সম্ভব নয়।’’ পরে এক দাতাকে নিয়ে গেলে ওই ব্যক্তিকে জানিয়ে দেওয়া হয়, যে গ্রুপের রক্ত চাই, সেই গ্রুপেরই দাতা আনতে হবে। ভুক্তভোগীর মন্তব্য, ‘‘কার্ড থাকলে তো দাতা আনতে বলারই কথা নয়। তা হলে রক্তদান শিবিরে রক্ত দিয়ে কার্ড পেয়ে লাভটা কী? এ রকম চললে তো শিবির করার উদ্দেশ্যই মার খাবে!।’
রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য তথা রক্তদান আন্দোলনের কর্মী অচিন্ত্য লাহা বললেন, ‘‘নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের ক্ষেত্রে দাতা আনতে বলার কথা শোনা যায়। কিন্তু পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তের চাহিদায় সেই গ্রুপের দাতা এনে রক্ত নিতে বলার মানে, চাহিদা কোন পর্যায়ে, সেটা বুঝতে হবে। আবার বহু ক্ষেত্রে দাতা নিয়ে যাওয়ার পরে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক বলছে, সকালে আসুন। এখন রক্ত নেওয়ার লোক নেই।’’ এই পরিস্থিতিতেই কোথাও আবার মোটা টাকায় রক্ত বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি এ দেশে রক্ত বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সর্বোচ্চ আদালত। যে কোনও সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বিনামূল্যে রক্ত পাওয়ার কথা সরকারি হাসপাতালের রোগীর। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক কিছু টাকা নিলেও তা নেয় রক্ত রাখার ব্যবহৃত ব্যাগ, দাতার রক্তের পরীক্ষা, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ এবং অন্যান্য কয়েকটি খাতের খরচ হিসাবে। রক্তের বিনিময়ে এ ছাড়া নেওয়া সব টাকাই বেআইনি বলে দাবি রক্তদান আন্দোলনের কর্মীদের।
রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের ডেপুটি ডিরেক্টর বরুণ সাঁতরাকে ফোন করা হলেও উত্তর মেলেনি। টেক্সট মেসেজেরও জবাব দেননি। তবে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, রক্তের এই আকাল সামাল দিতে জরুরি বৈঠকের পরিকল্পনা করা হয়েছে।