অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে অভিমানের সুর শোনা গিয়েছিল অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে তাঁকে বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেটা করতে গিয়ে প্রাচীন জনপদ বরাহনগরের দলীয় কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ তৈরি হল না তো?
যদিও বরাহনগরে শাসকদলের প্রায় সব নেতা-নেত্রীই প্রকাশ্যে ‘ক্ষোভের’ কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে দলের নিচুতলার কর্মীদের অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, তাঁদের দাবি ছিল, রাজনীতির পীঠস্থান বরাহনগরে এ বার ভূমিপুত্র কাউকে প্রার্থী করুক শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু তা না হওয়ায় কার্যত আশাহত তাঁরা। শনিবার স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করতে এসে সায়ন্তিকার দাবি, ‘‘বরাহনগরের প্রতিটি মানুষ, নেতা-কর্মী আমার পরিবার।’’
কিন্তু অভিনেত্রী প্রার্থী ভোটে জিতলেও, কতটা সকলকে আপন করে নিতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষের অনেককে। তাঁরা বলছেন, ‘‘তাপস রায় বরাহনগর চষে ফেলতেন। তারকা বিধায়ক কি আর সেটা করবেন?’’ একই রকমের সংশয় রয়েছে দলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের মধ্যেও। যদিও বরাহনগরে তিনি অভিনেত্রী তকমা মুছে রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রতিষ্ঠিত করে দায়িত্ব পালন করতে চান বলেই দাবি সায়ন্তিকার।
তাপস রায় দলত্যাগের পরে কে ওই আসনে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা শুরু হয়েছিল। পুরসভার উপপ্রধান দিলীপনারায়ণ বসু, চেয়ারম্যান পারিষদ অঞ্জন পাল, রামকৃষ্ণ পালের নাম নিয়ে শুরু হয়েছিল চর্চা। আশাহত হওয়ার ক্ষোভ কি রয়েছে? তিন জনেরই দাবি, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। জয়ের ব্যবধান বাড়ানোই প্রধান লক্ষ্য।’’
তবে বরাহনগরবাসীর বড় অংশ এবং দলের একাংশ কিন্তু লড়াইকে এতটা সহজ ভাবে নিচ্ছেন না। বরং বিভিন্ন এলাকার দোকানদার থেকে সাধারণ মানুষ বলছেন, ‘‘লোকসভায় বরাহনগর থেকে তৃণমূলের চিন্তা নেই। বিধানসভা ভাবতে হবে!’’ স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ মানুষকে বোঝানোর উপরে জোর দিতে চাইছেন।
রাজনৈতিক ক্ষেত্র বরাহনগরে দীর্ঘ ২১ বছর বিধায়ক ছিলেন জ্যোতি বসু। তার পরে মতীশ রায়, শিবপদ ভট্টাচার্য, অমর চৌধুরী, তাপস রায়ের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিধায়ক হয়েছিলেন। উপনির্বাচনে বিজেপি-ও প্রার্থী করেছে পোড় খাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তি সজল ঘোষকে।
অনেকে এটাও বলছেন, একটা সময়ে বরাহনগরের অনেক নেতা-কর্মীই সজলের হাত ধরে কংগ্রেসে রাজনীতি করেছেন। সেই জায়গায় চোরা স্রোতের সংশয়ও থেকেই যাচ্ছে। যদিও সায়ন্তিকার কথায়, ‘‘বরাহনগরের প্রার্থী হওয়ায় আমি এখান থেকেও অনেক রাজনৈতিক শিক্ষা পাব।’’
মাত্র তিন বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থাকা সায়ন্তিকাকে প্রার্থী করায় আক্ষেপ রয়েছে দলের কর্মীদের একাংশে। অনেকে বলছেন, ‘‘বসিরহাটের পুনরাবৃত্তি বরাহনগরে হবে না তো?’’ সায়ন্তিকার দাবি, ‘‘আমি উত্তর ২৪ পরগনারই মেয়ে। বরাহনগর আমার নিজেরই পাড়া।’’