(বাঁ দিকে) হিরণ চট্টোপাধ্যায় এবং দেব (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
খানিকটা বিদ্রুপ, খানিকটা মশকরার মিশেলে ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে ‘খাঁটি সোনা’ বলে মন্তব্য করলেন তৃণমূল প্রার্থী দেব। আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে দেবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রতিপক্ষ হিরণকে দশে কত দেবেন? দেবের জবাব, ‘‘দশে একশো!’’
তার পরেই দেবের সংযোজন, ‘‘ও ২৪ ক্যারাটের খাঁটি সোনা। ও খাঁটি রাজনীতিকও।’’ কিন্তু সোনাতেও তো তো খাদ থাকে? দেবের জবাব, ‘‘২৪ ক্যারাটের সোনা। খাদ নেই।’’ তবে এক নিঃশ্বাসে দেব এ-ও জানিয়েছেন যে, হিরণ যে আচরণ করছেন, সে পথে তিনি হাঁটবেন না। কারণ, তৃণমূল প্রার্থীর বক্তব্য, ‘‘সেই কারণেই আমি বেশি ভোট পাব।’’ তাঁর রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে দেব বলেছেন, ‘‘মানুষ এখন কথা শোনার রাজনীতিক খুঁজছেন। গত বার যাঁরা আমায় ভোট দেননি, আমি তাঁদের মনও জয় করতে চাই। তাঁদের কথাও শুনতে চাই। কেউ যেন না বলতে পারেন , যে আমি কারও কথা শুনিনি।’’
মার্চ মাসের গোড়ায় বিজেপি প্রথম দফায় বাংলার ২০টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল। দেখা যায়, ঘাটালে প্রার্থী করা হয়েছে হিরণকে। যিনি ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে খড়্গপুর সদর থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘাটালে ঘোষণা হওয়ার পরেই দেবকে আক্রমণ করা শুরু করেন হিরণ। দেবের বিরুদ্ধে হিরণের অভিযোগ ছিল, ১০ বছরের সাংসদ সংসদে গিয়ে মানুষের হয়ে কথা না বলে কেবল শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। পাশাপাশিই গরু পাচার, ৩০ শতাংশ কাটমানি নেওয়ার অভিযোগেও দেবকে লক্ষ্য করে বাক্যবাণ শানাতে শুরু করেছিলেন টালিগঞ্জে দেবের সহকর্মী। গরু পাচার মামলায় দেবকে তলব করেছিল সিবিআই এবং ইডি। দেব জানিয়েছেন, জোড়া কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকেই তিনি জানিয়েছেন, যে এনামুল হকের নাম উঠে আসছে, তাঁকে তিনি কখনও চোখেই দেখেননি। চেনেনই না!
কিন্তু হিরণের বিবিধ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে দেব কখনও ক্রুদ্ধ হননি। কখনও দু’মিনিট টানা হেসে গিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারে বলেছেন ‘খাঁটি সোনা’। বিরোধীদের উদ্দেশে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করার পথে কখনও হাঁটেননি দেব। বরং সৌজন্যের নতুন নতুন নজির রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। প্রথম বার ২০১৪ সালে ঘাটালে প্রার্থী হয়েছিলেন দেব। সে বার তাঁর মূল প্রতিপক্ষ ছিলেন সিপিআইয়ের সন্তোষ রানা। প্রচার শুরুর দিনই সন্তোষের বাড়িতে গিয়ে, তাঁকে প্রণাম করে কর্মসূচি শুরু করেছিলেন দেব। সেই ধারায় ছেদ পড়েনি এখনও। মিঠুন চক্রবর্তী থেকে সুকান্ত মজুমদারদের উদ্দেশে তৃণমূলের বাকি নেতারা যখন একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন, তখন দেব ব্যতিক্রমীই থাকতে চেয়েছেন। যা নিয়ে কুণাল ঘোষদের ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। দেব স্পষ্টই বলেছেন, তিনি তৃণমূলে স্বাধীন ভাবে, তাঁর মতো করে রাজনীতি করতে পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাতে সায় আছে বলেও দাবি করেছেন ঘাটালের বিদায়ী সাংসদ।