রাহুল গান্ধী। — ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাধারণত বাম নেতৃত্বের মতের মিল হয় না। তবে ‘ইন্ডিয়া’য় আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের আচার-আচরণ দুই বিপরীত মেরুতে থাকা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে একই মেরুতে কার্যত নিয়ে এল। তৃণমূল কংগ্রেসের মতো এখন বাম নেতৃত্বও আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের মনোভাবে অখুশি। সিপিএম নেতৃত্ব এখনও পশ্চিমবঙ্গে জোটের কথা মাথায় রেখে এ নিয়ে মুখ না খুললেও সিপিআই শীর্ষ নেতৃত্ব এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বামেদের মতে, ‘ইন্ডিয়া’য় একমাত্র বামদলগুলিই নিঃশর্ত ভাবে কংগ্রেসের পাশে রয়েছে এবং থাকবে। অন্য কোনও দল ‘ইন্ডিয়া’ ভেঙে লোকসভা নির্বাচনের আগে বা পরে বিজেপির দিকে চলে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু বামেদের নিয়ে কংগ্রেসের সেই চিন্তা নেই। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস বিভিন্ন রাজ্যে বামেদের আসন ছাড়ার বিষয়ে ‘যথেষ্ট উদার মনোভাব’ দেখাচ্ছে না বলেই তাদের অভিযোগ।
গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বামেদের দুর্গ কেরলে গিয়ে ওয়েনাড় আসনে রাহুল গান্ধীর দাঁড়ানো নিয়ে বামেদের ক্ষোভ রয়েছে। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নিজে তা নিয়ে মুখ খুলেছেন। কংগ্রেসকে এ নিয়ে পুনর্বিবেচনার অনুরোধও জানানো হয়েছিল। শুক্রবার রাতে কংগ্রেসের প্রথম প্রার্থী তালিকায় ঘোষণা করা হয়েছে, রাহুল ওয়েনাড় থেকে এ বারও প্রার্থী হচ্ছেন। সিপিআই আগেই ওই আসনে দলের জাতীয় কর্মসমিতি ও মহিলা সংগঠনের নেত্রী অ্যানি রাজাকে প্রার্থী করেছে। তিনি আবার সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী।
ডি রাজা আজ এ নিয়ে বলেছেন, “কোন দল কাকে কোথায় প্রার্থী করবে, সেটা তাদের বিষয়। তবে রাহুল গান্ধীর স্তরের কংগ্রেস নেতার উচিত এমন কোনও আসনে প্রার্থী হওয়া, যেখানে তিনি কেন্দ্রে শাসক দল আরএসএস-বিজেপিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন। রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের এ বিষয়ে আত্মমন্থন করা উচিত। রাহুল যখন বিজেপি-আরএসএসের মতাদর্শের বিরুদ্ধে ভারত যাত্রা করেছেন, তখন বামেরা তাকে স্বাগত জানিয়েছে। রাহুল গান্ধীকে এখন ঠিক করতে হবে, তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কে? বিজেপি না বাম?”
সিপিআইয়ের এই ক্ষোভের কারণ হল, কেরলের ২০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বাম জোটে সিপিআই মাত্র চারটি আসন পেয়েছে। তার মধ্যে ওয়েনাড় একটি। সেই ওয়েনাড়ে রাহুল নিজে প্রার্থী হচ্ছেন। যে সব রাজ্যে কংগ্রেস শক্তিশালী, সেখানে সিপিআই কংগ্রেসের থেকে নয়টি আসন চেয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস কোনও ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।
একই ক্ষোভ সিপিএমের মধ্যেও। গত লোকসভা ভোটে কেরলে একটিমাত্র আসনে জিতেছিল সিপিএম। সেই আলাপুঝাা আসনে রাহুলের ঘনিষ্ঠ কে সি বেণুগোপালকে প্রার্থী করা হয়েছে। সিপিএমের অবশ্য দাবি, বেণুগোপালের পক্ষে আলাপুঝা জেতা কঠিন। সিপিএম চাইছে, মহারাষ্ট্রে দিন্দোরি, রাজস্থানের কোনও একটি আসন কংগ্রেস সিপিএমকে ছেড়ে দিক। সেখানেও কংগ্রেসের দিক থেকে ইতিবাচক বার্তা মেলেনি।
ত্রিপুরার দু’টি আসনে কংগ্রেস, সিপিএমের মধ্যে আসন সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে কথা চলছিল। সেই কথাবার্তা পাকা হওয়ার আগেই কংগ্রেস পশ্চিম ত্রিপুরা থেকে আশিস কুমার সাহাকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। সিপিআইয়ের উত্তর-পূর্বের ভারপ্রাপ্ত নেতা পল্লব সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, সিপিআই মণিপুরের একটি আসন লড়বেই। সেখানে সিপিআইয়ের ৬ শতাংশ ভোট রয়েছে। এর বাইরেও অসমে সিপিআই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা চাইছে। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র, ওড়িশাতেও আসনের দাবি জানিয়েছে সিপিআই।
সিপিএম নেতারা বলছেন, ‘ইন্ডিয়া’র স্বার্থে তাঁরা ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র শেষে মুম্বইয়ের জনসভায় যোগ দেবেন। কংগ্রেসেরও একই রকম ইতিবাচক মনোভাব নেওয়া উচিত। বিহার, তামিলনাড়ুতে আসন পাওয়ার বিষয়ে অবশ্য আরজেডি, ডিএমকে-র সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন বাম নেতারা।
এমনিতে পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে জোট হলে সিপিএমের সঙ্গে সিপিআই, আরএসপি, ফরোয়ার্ড ব্লকের মতো দলগুলিকে কম আসনে লড়তে হবে। কিন্তু সব দলই চাইছে, যত বেশি সম্ভব আসনে লড়তে। আসন জিততে না পারলেও নির্দিষ্ট হারে ভোট পেলে রাজ্য দলের তকমা থাকবে। এমনিতেই সিপিএম ছাড়া বাকি সব বাম দলেরই জাতীয় দলের তকমা
চলে গিয়েছে।