—প্রতীকী ছবি।
অনেক দিন আগে সুমন চট্টোপাধ্যায় (তখনও কবীর নন) গেয়ে রেখেছিলেন, ‘আমাকে ভাবায়, সুকমার রায়...’। উত্তরবঙ্গে ভোটের প্রচারে এসে দুর্নীতির প্রশ্নে রাজ্যের শাসক দলকে বিঁধতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্মরণ করেছেন সুকমারকে। এরই মাঝে সুকুমারের ‘আবোল তাবোল’ উঠে এসেছে সিপিএমের তূণে!
ভোটের মরসুমে ডিজ়িটাল মাধ্যমে বঙ্গ সিপিএম ছড়া বেঁধেছে, ‘সেই খুড়ো আজ কল করেছেন আপন বুদ্ধি বলে / জাতের নামে দেশ ভাঙবেন, দ্বেষ বাড়াবেন ছলে। দেখে এলাম কলটি অতি সহজ এবং সোজা / কাগজ চাইছে পরিচিতি, চলছে ধর্ম খোঁজা’। এই ছড়ার ‘খুড়ো’ কে, বুঝে নেওয়ার জন্য কোনও পুরস্কার নেই! ঠিক তেমনই এই ছড়া যে আসলে সুকুমারের অতুল কীর্তির প্যারডি, তা-ও বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। সিপিএমের ডিজ়িটাল প্রচারে এ বার উপকরণ এই ‘নির্বাচনী আবোল তাবোল’। সঙ্গে সুকুমারী কায়দায় ব্যঙ্গচিত্র।
সিপিএমের এই নির্বাচনী আবোল তাবোলে সুকুমারের মূল ছড়ার শিরোনামেও কিছু অদল-বদল ঘটানো হয়েছে। ‘খুড়োর ছল’ বা ‘পালাবদল’ তার উদাহরণ। দ্বিতীয়টিতে বলা হচ্ছে, ‘মক্ষীরানি হীরকরাজ / লক্ষ্মী ছেলে, দস্যি আজ। আলোয় কাটে অন্ধকার / রুটি-রুজির চিৎকার। আনবে আলো, নতুন ভোর / লড়াই হবে ভীষণ জোর’। তেমনই আছে ‘একুশে বে-আইন’। সেখানে রয়েছে, ‘হেথায় রাত নামার আগে / বেরোতে হলে টিকিট লাগে। বেরিয়ে গেলে বিনটিকিটে / ‘ছোট ঘটনা’ চাপায় পিঠে...।’ আরও একটি নমুনা ‘জালিবাজি’। যার বক্তব্য, ‘পাক্কা নতুন টাটকা ওষুধ এক্কেবারে দিশি / দাম বাড়িয়ে বাজার আগুন, হাজার টাকার শিশি’।
এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলছেন, ‘‘শুধু প্রথাগত প্রচারের দিন আর নেই। নতুন নতুন পদ্ধতিতে এখন মানুষের মন কাড়ার চেষ্টা করতে হয়। আমাদের কাছে নির্বাচনী বন্ডের টাকা নেই, বিপুল খরচে চোখ ধাঁধানো প্রচার করার ক্ষমতা নেই! আমাদের নিজস্ব টিম অভিনব নানা চেষ্টা করছে। সঙ্গে চলছে চেনা পদ্ধতিতে জনসংযোগও।’’
বিধানসভা ভোটের মতো এ বার লোকসভা নির্বাচনের সময়ে গানের প্যারডিও প্রচারে এনেছে সিপিএম। সম্প্রতি বলিউডের ‘অ্যানিমাল’ ছবিতে ব্যবহৃত একটি ইরানীয় প্রার্থনা সঙ্গীত জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই ‘জামাল কুদু’র সুরেই প্যারডি তৈরি করে বামেদের পক্ষে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে তরুণ প্রজন্মের একাংশ। গানটি তৈরি করেছেন মানিকতলার রাহুল পাল। যিনি নিজে সিপিএমের যুব সংগঠনের সক্রিয় কর্মী। গানটি গেয়েছেন নীলাব্জ নিয়োগী ও রিয়া দে। গানের কথায় তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ করা হয়েছে। চাকরি চুরি, গরু চুরি, কয়লা চুরি, সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, ধর্মীয় বিভাজন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), দলবদল— সবই এসেছে প্যারডিতে। গানের মাধ্যমেই অনুরোধ করা হয়েছে, রুটি-রুজির দাবিকে সামনে রেখে লোকসভা নির্বাচনে বাম প্রার্থীদের ভোট দিতে।
রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বামেদের ডাকা ব্রিগেড সমাবেশের সমর্থনে এই ত্রয়ীই ‘টুম্পা সোনা’র প্যারডি তৈরি করেছিল। সেই গান সমাজ মাধ্যমে প্রচুর শেয়ার হয়েছিল। তবে গণসঙ্গীত থেকে ‘টুম্পা সোনা’য় চলে যাওয়ায় বিতর্কও হয়েছিল। তার পর থেকেই বিভিন্ন নির্বাচনে বামেদের পক্ষে জনপ্রিয় গানের প্যারডি বানিয়ে প্রচার করছেন রিয়ারা। এই লোকসভা ভোটের আগে এটাই তাঁদের তৈরি প্রথম প্রচার সঙ্গীত। এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সদস্য রিয়ার কথায়, ‘‘আগেও গান বানিয়েছি। এ বারও করলাম। আমাদের মতো করে সঙ্গত কথাগুলি যে ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টাই করছি।’’
দেশি সুকুমারের ছড়া থেকে বিদেশি সুর, ভাবাচ্ছে এখন সবই!