Lok Sabha Election 2024

লোকসভা ভোটে চাকা ঘোরাতে ১২ আসনে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে সিপিএম, সঙ্গী কংগ্রেস

সিপিএমের অন্দরের খবর, সাংগঠনিক রিপোর্ট এবং বাইরের সমীক্ষার তথ্যের ভিত্তিতে রাজ্য জুড়ে ১২টি আসনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে ভাল লড়াই দেওয়া সম্ভব।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:১৭
Share:

সিপিএমের প্রচারে সুজন চক্রবর্তী। — নিজস্ব চিত্র।

শূন্যের গেরো থেকে বেরোতেই হবে! ঘুরে দাঁড়ানোর এই লড়াইয়ে রাজ্যের এক ডজ়ন লোকসভা আসনে বিশেষ নজর দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাচ্ছে সিপিএম। সঙ্গী কংগ্রেস।

Advertisement

রাজ্য বিধানসভায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব এখন শূন্য। সিপিএম শূন্য লোকসভাতেও। কংগ্রেস গত বার এই রাজ্য থেকে দু’টি লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে দেখতে গেলে বহরমপুরের মতো আসনেও কংগ্রেস বহু ভোটে পিছিয়ে। তিন বছর আগের বিধানসভা ভোটের ফলের হিসেবে বিচার করলে সিপিএম ও কংগ্রেসের হাতে এখন কার্যত কিছুই নেই! মাঝে চাকা ঘুরেছিল সাগরগদিঘি উপনির্বাচনে। কিন্তু সেখানেও কংগ্রেসের প্রতীকে জয়ী বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস দল বদলে চলে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপির দ্বিমেরু রাজনীতির জাঁতাকল থেকে বেরোতে আসন জয় আবশ্যিক বলে মনে করছেন রাজ্য সিপিএম ও প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।

সিপিএমের অন্দরের খবর, সাংগঠনিক রিপোর্ট এবং বাইরের সমীক্ষার তথ্যের ভিত্তিতে রাজ্য জুড়ে ১২টি আসনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে ভাল লড়াই দেওয়া সম্ভব। তার মধ্যে উত্তর দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ মিলিয়ে ৬টি আসন রয়েছে অগ্রাধিকারের শীর্ষে। বস্তুত, সিপিএম ও কংগ্রেস, দুই শিবিরেরই আশা, সুষ্ঠু ভোট হলে ওই ৬ আসনের মধ্যে অন্তত চারটিতে জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব। এর পরেই রয়েছে দমদম, যাদবপুর ও শ্রীরামপুর। এই সব আসনে সিপিএমের তরফে বাছাই করে এমন মুখকে প্রার্থী করা হয়েছে, যারা জনসংযোগে দড় এবং সাধারণ ভাবে ‘গ্রহণযোগ্যতা’ রয়েছে। সিপিএমের গোটা প্রার্থী তালিকায় এ বার অভিজ্ঞ নেতা থাকছেন মাত্র দু’জন। তাঁদের মধ্যে এক জন, দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম মুর্শিদাবাদ আসনে প্রার্থী। অন্য জন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী লড়ছেন দমদমে। সিপিএমের খাতায় দু’টি আসনই ‘ইতিবাচক’ এবং সেই হিসেবেই সেলিম-সুজন সেখানে লড়তে গিয়েছেন।

Advertisement

হিন্দ মোটরে প্রচারে শ্রীরামপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর। — নিজস্ব চিত্র।

একই ভাবে যাদবপুর ও শ্রীরামপুর চষে বেড়াচ্ছেন সিপিএমের ছাত্র রাজনীতির দুই উল্লেখযোগ্য মুখ সৃজন ভট্টাচার্য ও দীপ্সিতা ধর। সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, নওসাদ সিদ্দিকীর আইএসএফ সঙ্গে থাকলে দুই কেন্দ্রে দুই তরুণ প্রার্থীর সুবিধা হত। শ্রীরামপুরে আইএসএফ অবশ্য প্রার্থী দিয়ে রেখেছে, বামেদের সঙ্গে সমঝোতা না হলে যাদবপুরেও তারা শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকবে না। সেই ‘বাস্তবতা’ ধরে নিয়েই এখন সিপিএমকে এগোতে হচ্ছে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ধারণা, শেষ মুহূর্তে ২০২১ সালের মতো তীব্র মেরুকরণের আবহ তৈরি না হলে সৃজন-দীপ্সিতাদের সঙ্গেই নিজেদের কেন্দ্রে তৃণমূলের মূল লড়াই হবে।

এর বাইরে থাকছে বীরভূম, কৃষ্ণনগর ও আসানসোলের মতো কেন্দ্র। যেখানে বিজেপি ও তৃণমূলের নামী বা তারকা প্রার্থীদের বিপরীতে কংগ্রেস-সিপিএম ময়দানে নামিয়েছে মেঠো রাজনীতি করা মুখেদের। সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা, একেবারে তলানি থেকে মিল্টন রশিদ, এস এম শাদি, জাহানারা খানেরা যথেষ্ট সমর্থন টেনে আনতে সক্ষম হবেন শেষ পর্যন্ত। তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই শাসক পক্ষেরই বিরোধী ভোটের ভাগ পাবেন।

লোকসভা ভোটের আগে প্রায় কোনও জনমত সমীক্ষাই বাম-কংগ্রেসের সম্ভাবনাকে বিশেষ আমল দেয়নি। বিজেপি এবং তৃণমূল নেতৃত্বও কটাক্ষ করছেন, বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের জামানত থাকবে না! তবে একই সঙ্গে বিজেপি নেতারা প্রচার করছেন, বাম বা কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে তৃণমূলকে সাহায্য করা। আর তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করছেন, বাম ও কংগ্রেসকে সমর্থন করা মানে বিজেপির হাত শক্ত করা! রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, বামেরা কেমন ভোট পাবে, তার উপরে যে বেশ কিছু আসনেই অঙ্ক ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে, তা বুঝেই বিজেপি ও তৃণমূলের এই কৌশল।

এই ‘তাচ্ছিল্যে’র বাতাবরণে দাঁড়িয়েই মরিয়া চেষ্টায় নেমেছেন মহম্মদ সেলিম ও অধীর চৌধুরী। সেলিমের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের দুর্নীতি এবং দুষ্কৃতী-রাজ থেকে বেরিয়ে রাজ্যে সুষ্ঠু রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে বামেদের পুনরুত্থান ঘটাতেই হবে!’’ একই লক্ষ্য সামনে রেখে অধীর বলে রেখেছেন, ‘‘বিজেপি এবং তৃণমূল ভোটের জন্য যে কোনও কিছুই করতে পারে, জানি। আমরা নাটক করতে জোট করিনি!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement