কলকাতায় বামফ্রন্টের মিছিল। — নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে করতে ধীরে ধীরেই এগোচ্ছে সিপিএম। নির্বাচন কমিশন শনিবার লোকসভা নির্বাচনের যে নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে, সেই অনুযায়ী রাজ্যে ভোট হবে ৭ দফায়। এই নির্ঘণ্টের ফলে তাঁদের জট কাটাতে আরও একটু সময় পাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন সিপিএম ও প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। বাম শরিকদের সঙ্গে সিপিএমের পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনার জন্য আজ, রবিবার প্রথমে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং তার পরে বামফ্রন্টের বৈঠক বসছে।
উত্তরবঙ্গের তিন আসন কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে ভোট হবে প্রথম দফায়, আগামী ১৯ এপ্রিল। এর মধ্যে কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং জলপাইগুড়িতে সিপিএম প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ারে লড়াই করে আর এক বাম শরিক আরএসপি। সূত্রের খবর, ওই আসনে কংগ্রেসের দাবি থাকলেও আরএসপি-র জন্যই আসনটি ধরে রাখার চেষ্টা করছে সিপিএম। যা ঠিক হয়েছে, কংগ্রেস তাদের আসনগুলির প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকের পরে। আর বামেরা পৃথক ভাবে বাকি আসনে প্রার্থীদের নাম জানাবে। সিপিএম সূত্রের খবর, নানা মহলের জল্পনা ও দাবি থাকলেও যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করা হচ্ছে না। রাজ্য জুড়ে তাঁকে প্রচারের মূল ভূমিকায় কাজে লাগাতে চায় সিপিএম।
ঠিক হয়েছিল, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আজ, রবিবার কলকাতায় বিধান ভবনে আসবেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে। ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরে এ দিন দিল্লিতে প্রদেশ সভাপতি অধীর বলেছেন, ‘‘শুধু প্রার্থী ঘোষণাই হয়, ভোটের জন্য দলের একটা প্রস্তুতি থাকে। রাহুল গান্ধী যে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ করছেন, সেটাও এক ধরনের প্রস্তুতি। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে, অন্যেরা যখন প্রার্থী নিয়ে ভাবছে, আমাদের প্রস্তুতি তার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ কয়েক দিনের মধ্যে বামেদের সঙ্গে সমঝোতাও হয়ে যাবে এবং প্রার্থী ঘোষণা হবে বলে আশাবাদী প্রদেশ সভাপতি।
লোকসভার আসনভিত্তিক প্রচারের আগে দুর্নীতি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং নির্বাচনী বন্ডের কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে এ দিন কলকাতায় মিছিল করেছে বামফ্রন্ট। ধর্মতলা থেকে শুরু করে মল্লিকবাজার পর্যন্ত মিছিলে ছিলেন বামফ্রন্টের সব শরিক দলের নেতারা। মিছিল শেষে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘নির্বাচন এলেই কেন সিএএ-র কথা আসে? গত দু’টো নির্বাচনে এই আইনকে বিজেপি ও তৃণমূল ব্যবহার করেছে বিভাজন সৃষ্টির জন্য। যেন এটা শুধু মুসলিম-বিরোধী আইন! এই আইন যে সংবিধান বিরোধী, আমরা সেই কথা বলছি।’’ কর্মসংস্থান-সহ সাধারণ মানুষের জন্য জরুরি দাবিগুলিকে তাঁরা যে সামনে আনতে চান, ফের তা উল্লেখ করেছেন বাম নেতৃত্ব। নির্বাচনী বন্ড বাতিলের জন্য রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি ৬ বছর আদালতে লড়াই চালিয়েছে সিপিএম। সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেলিমের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনী বন্ড একটা বড় কেলেঙ্কারি। সব চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে বিজেপি, তার পরে তৃণমূল। ওষুধ সংস্থা ওষুধের দাম বাড়িয়েছে, সেই টাকা লুট করেছে। ভাগ পেয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল। এখানে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সিইএসসি টাকা দিয়েছে তৃণমূলকে! সিপিএমই গর্ব করে বলেত পারে, আমরা শুধু এই টাকা নিইনি, তা-ই নয়। সুপ্রিম কোর্ট যে কথা বলছে, সিপিএম অনেক আগে থেকেই সেটা বলে আসছে। এ বার সিদ্ধান্ত নিতে হবে মানুষকে।’’