অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীর একটি ভিডিয়ো ক্লিপ নিয়ে বাংলায় বিজেপি-বাম-কংগ্রেস ‘যোগসাজশের’ অভিযোগ আবার সামনে আনল তৃণমূল। যে ভিডিয়োয় অধীরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, তৃণমূলের চেয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়াও ভাল। আট সেকেন্ডের সেই ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
মঙ্গলবার জঙ্গিপুরের কংগ্রেস প্রার্থী মোর্তাজা হোসেনের সমর্থনে সভা করতে গিয়েছিলেন অধীর। সেই সভায় ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক তথা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের বাম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমও। তৃণমূল যে ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দিয়েছে তাতে অধীরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে, তার থেকে ভাল বিজেপিকে ভোট দিয়ে জেতানো।’’ এর পর মাইক্রো সেকেন্ডের ব্যবধানে অধীরকে ফের বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে, তার থেকে অনেক ভাল বিজেপিকে ভোট দিয়ে দেওয়া।’’ সেই ক্লিপ তৃণমূলের একাধিক সাংসদ, নেতা-নেত্রী এক্সে পোস্ট করে অধীর এবং বিজেপির ঘনিষ্ঠতা ও বোঝাপড়া নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এমনকি, জুড়ে দিয়েছেন কংগ্রেসের জোটসঙ্গী সিপিএমকেও।
এই বক্তব্য নিয়ে অধীরের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকে একাধিক বার ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘‘ওই ভিডিয়ো বিকৃত করে তৃণমূল বাজারে ছেড়েছে। আসলে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তৃণমূল মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনটি আসনেই হারবে বলে ভয় পেয়েছে। তাই এ সব করছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির পরোক্ষ জোটের কথা সবাই জানে। নরেন্দ্র মোদী যেমন কংগ্রেসমুক্ত ভারত করতে চান, তেমন তৃণমূলও কংগ্রেসমুক্ত বাংলা করতে চায়। তাই লক্ষ্যবস্তু অধীর চৌধুরী।’’
অধীরের যে ভিডিয়ো তৃণমূল প্রকাশ্যে এনেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে মঞ্চে আসীন রয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সেলিমও। তিনিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ঘরোয়া আলোচনায় জেলা সিপিএমের নেতারা বলছেন, অধীর যে ভাবে কথাটা বলেছেন, তা নিয়ে ভুল বোঝাবার অবকাশ রয়েছে। এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘ওই কথার পরে অধীর বলেছেন, বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীকে জেতাতে হবে। অধীর এ-ও বলেছেন, তৃণমূল-বিজেপি আসলে একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু তৃণমূল একটি অংশই তুলে ধরছে।’’ মুর্শিদাবাদের এক তরুণ সিপিএম নেতা বলেন, ‘‘অধীরবাবু ফুলটস বল দিয়ে দিয়েছেন। তৃণমূল তার সুযোগ নিচ্ছে। তাঁর আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’’
গত সোমবার অধীরের কেন্দ্র বহরমপুরে সভা করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। মঙ্গলবার সেই বহরমপুর লোকসভার অন্তর্গত রেজিনগর বিধানসভা এলাকায় সভা করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তৃণমূলের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নড্ডা এবং যোগী— দু’জনের কেউই বহরমপুরে দাঁড়িয়ে অধীরকে নিশানা করেননি। তাঁদের গোটা বক্তৃতা জুড়ে ছিল তৃণমূলের সমালোচনা। দুইয়ে দুইয়ে চার করে তৃণমূল দেখাতে চাইছে, অধীরকে সুবিধা করে দিতেই এই কৌশল নিয়েছেন নড্ডা এবং যোগী। বুধবার নতুন ভিডিয়ো সামনে এনে সেই ধারণাকেই আরও পোক্ত করতে চাইল তৃণমূল। যাকে চক্রান্ত বলছে কংগ্রেস।