বিনয় তামাং এবং অজয় এডওয়ার্ড। —ফাইল চিত্র।
অনেক দিন ধরেই জল্পনা, পাহাড় ও সমতলের পরিচিত মুখ বিনয় তামাংকেই দার্জিলিং আসনে প্রার্থী করতে পারে কংগ্রেস। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিল্লি গিয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ডের নাম লেখানো ও তাঁর এক ‘সঙ্গী’ কংগ্রেসে যোগ দিতেই আপাতত সেই জল্পনায় জল পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, অজয় চাইছেন, তাঁর ‘সঙ্গী’কেই দার্জিলিঙে হাত শিবিরের প্রার্থী করা হোক।
বিরোধী জোটে অজয় যেতে পারেন বলে কিছু দিন ধরেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল পাহাড়ে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ পাহাড় হয়ে যাওয়ার সময় তাতেও যোগ দিতে দেখা গিয়েছিল হামরো প্রধানকে। এর পর বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরে গিয়ে বিরোধী জোটে যোগ দেন অজয়। কংগ্রেস সূত্রে খবর, অজয় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন পাহা়ড়েরই নেতা মুনীশ তামাংকে। মুনীশ কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। দলীয় সূত্রে দাবি, সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি (এআইসিসি)-র কাছে অজয়ের দাবি ছিল, দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে মুনীশকে দার্জিলিঙের প্রার্থী করা হোক।
বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরোধী একাধিক রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে পাহাড়ে এক বার গোর্খাল্যান্ড টাস্ক ফোর্স (জিটিএফ) গড়া হয়েছিল। তার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুনীশ। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও। কংগ্রেস সূত্রের দাবি, অজয়ের দাবিতে আপাতত সম্মতি দিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। সব কিছু ঠিক থাকলেই তাঁকেই প্রার্থী করা হবে। যদিও এ ব্যাপারে এখনই কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ।
পাহাড়ে কংগ্রেসের একাংশ চাইছিলেন, বিনয়কে এ বার প্রার্থী করা হোক। কংগ্রেস সূত্রে খবর, প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বড় অংশ এআইসিসি-র কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। প্রার্থী ও বাম জোট নিয়ে নানা আলোচনা এবং ‘ধোঁয়াশার’ মধ্যেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দিল্লিতে হাই কমান্ডের সঙ্গে বিনয় প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। রাজ্যের একাংশ বিনয়ের নামই প্রস্তাব করেছেন। দলের একাংশের যুক্তি ছিল, বিনয়কে প্রার্থী করা হলে অজয়ের সমর্থন পাওয়া যেতে পারে। আবার বিমলকেও বিনয়ের জন্য অনুরোধ করার জায়গা তৈরি হবে। কারণ, পাহাড়ের বর্তমান শাসক দল অনীত থাপার প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিন জনকে গত বছর এক সঙ্গে দেখা গিয়েছে। তা ছাড়া, কংগ্রেস গত তিন দশকে পাহাড়ের জন্য কী কী করছে, তা প্রচারের বিষয় করে গোর্খা মুখ হিসাবে বিনয়কে রাখলে কংগ্রেস দার্জিলিঙে লড়াইয়ের জায়গা তৈরি করতে পারবে বলে মনে করছিলেন তাঁরা।
কংগ্রেস সূত্রে দাবি, বিনয় অবশ্য প্রথমে রাজি না থাকলেও, পরে তিনি মত বদলেছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে নিয়মিত পাহাড়ের পুরনো কংগ্রেস নেতা, কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন দলের পরিচিতদের সঙ্গেও কথা বলেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিনয়। প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, দল চাইলে তিনি প্রার্থী হবেন। কংগ্রেস নেতাদের দাবি, পাহাড়ে তৃণমূলের প্রতি একটা অংশের খুব একটা আস্থা নেই। সেখানেই অনীতদের লড়াইটা কঠিন। বিজেপি গত ১৫ বছরের আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি ছাড়া, পাহাড়ের জন্য আলাদা করে কিছু না দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সে জায়গা থেকে বিনয়কে সামনে রেখে লড়াইয়ে নামতে চাইছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। পাহাড়ের এক কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘‘২০০৭ সালের পর থেকে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে প্রতিটা ভোটে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন বিনয়। গুরুংয়ের সঙ্গ ছেড়ে এসেও বিধানসভা ভোটে লড়েছেন। পাহাড়ের ভোটের হিসাব সম্পর্কে তাঁর বিশদ ধারণা রয়েছে। তাই বিনয়ই যোগ্য প্রার্থী হতে পারেন।’’
আচমকাই কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে মুনীশের নাম ভেসে ওঠায় বেঁকে বসেছেন সদ্যই তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া বিনয়। মুনীশের কংগ্রেসে যোগদান প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়ে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এই যোগদানে তাঁর সম্মতি নেই। মুনীশকে প্রার্থী করা হলে তিনি মানবেন না বলেও জানিয়েছেন বিনয়। যদিও এ প্রসঙ্গে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সহ-সম্পাদক জীবন মজুমদার বলেন, ‘‘বিনয় তামাংকে আমরা প্রার্থী হওয়ার কথা বললেও সে পরিষ্কার ভাবে কিছু জানাননি। পরবর্তীতে তিনি পিছিয়ে যান। অজয় নিজে থেকেই ভারত জোড়ো যাত্রায় শামিল হয়েছেন। একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। অজয় কলেজের এক প্রফেসরকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়েছে। অজয়ের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে পাহাড়ে। তবে এ বার কোনও দলই খুব সহজেই পাহাড়ে জয় পাবে না। বিজেপি ভুল বোঝাচ্ছে। রাজ্যের শাসকদলও তা-ই করছে। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, আলাদা রাজ্য বা স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের মধ্যে আমরা নেই৷ পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য রয়েছি।’’