প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র ।
লোকসভা ভোটের প্রথম চার দফার প্রচারে আগাগোড়া হিন্দু-মুসলমান, মোগল নিয়ে মন্তব্য করার পরে পঞ্চম দফার আগে কিছুটা ভারসাম্যের রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেটা করতে গিয়ে কয়েক দিন আগে তিনি মন্তব্য করেছেন, তিনি ছোটবেলায় মুসলমান ভাইদের বাড়ি থেকে আসা ইদের খাবার খেতেন। আর তাঁর এই মন্তব্যের পরেই তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন খোদ রাহুল গান্ধী।
শনিবার নয়াদিল্লির চাঁদনি চক এলাকার এক জনসভায় রাহুল গান্ধীর প্রশ্ন, “গোটা দেশকে চব্বিশ ঘণ্টা বলেন, তিনি নিরামিষাশী। মোদীজি, আপনি কি সত্যিই নিরামিষাশী নন? তা হলে মুসলমান ভাইদের পাঠানো ইদের খাবার আপনি খেতেন কি করে?”
আগামী শনিবার রাজধানীর ৭টি আসনে ভোট, যেখানে প্রথম বারের জন্য আসন সমঝোতা করেছে কংগ্রেস এবং আপ। আজ সন্ধ্যায় রাহুলের জনসভায় কংগ্রেস প্রার্থীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আপ বিধায়কেরাও। সেখানে রাহুল বলেন, “মোদী তো আমার সঙ্গে প্রকাশ্য বিতর্কসভায় যোগ দেবেন না। দিলে যা যা প্রশ্ন করব, উনি ফেঁসে যাবেন। কিন্তু আপনারা ওঁকে দিয়ে যা বলাতে চান, জানান। আমি ওঁকে দিয়ে বলিয়ে দেব! কারণ, আমি বক্তৃতায় যা বলি, উনি দু’দিন বাদেই তাঁর উল্লেখ করে বসেন! প্রশ্ন তুলেছি, মোদীজি, আপনি কেন আদানি-অম্বানীর নাম নেন না? সঙ্গে সঙ্গে উনি বক্তৃতায় আদানি-অম্বানী নিয়ে সরব হয়েছেন! মহালক্ষ্মী যোজনায় দেশের এক কোটি গরিব পরিবারের একজন করে নারী প্রতিনিধির ব্যাঙ্কে বছরে ১ লাখ করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা করে বলেছিলাম, প্রতিমাসে এক কোটি মহিলার ব্যাঙ্কে সাড়ে আট হাজার টাকা ঠকাঠক ঠকাঠক করে ঢুকে যাবে। এর পরই দেখি মোদী তাঁর বক্তৃতায় এই ঠকাঠক বলতে শুরু করেছেন! তাঁর ঘৃণার রাজনীতির
সমালোচনা করেছি, ধর্মের রাজনীতির নিন্দা করেছি। এখন তিনি বলছেন, তাঁর ছোটবেলায় ইদের দিন মুসলমান পরিবার থেকে নাকি তাঁর বাড়িতে খাবার আসত!” এর পরই মোদীর নিরামিষ খাদ্যাভাসের প্রসঙ্গ তুলে রাহুল ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, মোদী সত্যি কথা বলছেন না।
কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি লেলিয়ে দিয়ে বিপক্ষের উপর চাপ তৈরির অভিযোগ আজ বিজেপি-র বিরুদ্ধে এনেছেন রাহুল। বলেছেন, “যে-ই এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। আমাকে ইডি ৫৫ ঘন্টা জেরা করেছে। আমার ঘর কেড়ে নিয়েছে। আমি চাবি দেওয়ার সময় ওদের বলে এসেছি, আমার ঘরের প্রয়োজন নেই, এই চাঁদনি চকেই আমার হাজার মানুষের ঘর রয়েছে। গোটা দিল্লির মানুষের হৃদয়ে আমার ঘর রয়েছে। চার হাজার কিলোমিটার হেঁটে আমি এই ঘৃণার বাজারে মহব্বতের দোকান খুলেছি।”
মোদীর সঙ্গে তর্কের আসরে নামলে যে প্রশ্নগুলি করতেন, আজ সেগুলি তাঁর বক্তৃতার মধ্যে সাজিয়েছেন রাহুল। বলেছেন, “প্রথম প্রশ্নটাই মোদীজিকে করতাম যে, আপনার সঙ্গে আদানির কী সম্পর্ক? কেন আপনি দেশের বন্দর, রেল, প্রতিরক্ষা সব তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন? নির্বাচনী বন্ডের খেলায় দেখা যাচ্ছে, যাকেই বরাত দিয়েছে, সেই সংস্থাই বিজেপিকে হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। এর পিছনে রহস্যটা কী? শি জিনপিংকে দোলনায় দোলাচ্ছেন আর সে আমাদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। কেন? আমি জানি, এই সব প্রশ্নের উত্তর তাঁর কাছে নেই। আর তাই আমি প্রস্তুত থাকলেও তিনি কোনও বিতর্ক সভায় আসতে পারবেন না।”
বেকারত্ব এবং মূল্যবৃদ্ধি যে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের মূল বিষয় হয়ে উঠেছে, সে কথা তুলে রাহুলের বক্তব্য, “ভারত জোড়ো যাত্রার সময় যুবদের কাছে জানতে চাইতাম, তাঁরা কে কী করছেন। বেশির ভাগ উত্তরই আসত, কিছু নয়। আজ চাঁদনি চকের ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাইছি, গত দশ বছরে মোদী সরকার আপনাদের জন্য কী করেছে? নোট বাতিল করে বিপদে ফেলেছে। পাঁচটি আলাদা আলাদা কর এনে চাপ বাড়িয়েছে। ছোট ব্যবসায়ীদের, কৃষকদের ঋণ মকুব না করে অম্বানী-আদানিদের মতো বাইশ থেকে পঁচিশ জন ধনপতির মোট ১৬ লাখ কোটি টাকা ঋণ মাফ করেছেন মোদী সরকার। ভেবে দেখুন, এই টাকা চব্বিশ বছরের মনরেগা-র সমতুল অর্থ!”
ইদানিং প্রতিটি জনসভাতেই মোদী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকদের নিয়ে ব্যঙ্গ করছেন। আজই রাহুলের থেকে কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে নির্বাচনী সভা করেছেন মোদী। সেখানে তিনি কংগ্রেস এবং আপ-এর জোট নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন, “দিল্লি এবং হরিয়ানায় দোস্তি আর পঞ্জাবে কুস্তি—এটা কেমন করে হয়!” রাহুল তাই আজ বারবার আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে যাতে পারস্পরিক ভোটের আদানপ্রদান ঠিক মতো হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করতে চেয়েছেন তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের। সাতটির মধ্যে চারটি আসনে আপ-এর প্রার্থী লড়ছেন, তিনটিতে কংগ্রেসের। রাহুল আজ বারবার বলেছেন, “যেখানে কংগ্রেস লড়ছে না, সেখানেও কিন্তু আপ-এর প্রার্থীর ঘরে পুরো কংগ্রেসের ভোট যাওয়া চাই। একই ভাবে কংগ্রেসের তিন প্রার্থীর কাছে যেন আপ-এর পুরো ভোটটাই আসে, সে ব্যাপারে নজর থাকতে হবে।”