কংগ্রেস প্রার্থীর দিকে ফুল ছুড়ছেন বিজেপি প্রার্থী। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যস্ততা তুঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নিরাপত্তারক্ষীদের। বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থীর গাড়ি তখন ঘিরে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। একাধিক বার অধীরের প্রচারে ‘বাধা’ আসার পর হয়তো একটু বেশিই হুঁশিয়ার তাঁরা। তবে এ বার ‘গো ব্যাক’ স্লোগান নয়, গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভও নয়, প্রচারে বেরিয়ে বিরোধীর কাছে ফুল পেলেন অধীর। ধন্যবাদ জানালেন তিনিও। শনিবার শেষ দফার প্রচারে কংগ্রেস এবং বিজেপি প্রার্থীর প্রচারে সৌজন্যের রাজনীতি দেখল বহরমপুর।
শনিবার সকালে রাস্তার দু’পাশের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চলতি পথের অফিস যাত্রীদের মধ্যে ব্যস্ততা এবং উত্তেজনা, দুই-ই তুঙ্গে। রাস্তার এক দিক থেকে আসছে কংগ্রেস প্রার্থী অধীরের রোড-শো। উল্টো দিক দিয়ে আসছে বিজেপি প্রার্থী নির্মল সাহার প্রচারগাড়ি। এক দল ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিচ্ছেন। অন্য দিক থেকে আসছে ‘বন্দেমাতরম’ স্লোগান। এই বুঝি আবার অশান্তি বাধে, এই আশঙ্কা থেকে রাজ্য পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের মধ্যেও ব্যস্ততা ছিল। হুডখোলা জিপে হাত নাড়তে নাড়তে এগিয়ে আসছেন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর। কয়েকশো দলীয় কর্মী-সমর্থক নিয়ে হুডখোলা গাড়িতে উল্টো দিক থেকে আসছেন বিজেপি প্রার্থী নির্মল এবং জেলা বিজেপি সভাপতি শাখারভ সরকার। দুটো গাড়ির মধ্যে দূরত্ব মাত্র কয়েক ফুট। সবার নজর দুই প্রার্থীর দিকে। নাগালের মধ্যে পেতেই কংগ্রেস প্রার্থীর দিকে ফুল ছুড়ে শুভেচ্ছা জানালেন বিজেপি প্রার্থী। সঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতিও। নমস্কারে সৌজন্য জানালেন অধীরও। তত ক্ষণে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। স্লোগানের শব্দ থেমে গিয়ে হাততালিতে ফেটে পড়ল বহরমপুরের লালদিঘি চত্বর। কংগ্রেস এবং বিজেপি গোটা ঘটনাকে রাজনৈতিক সৌজন্য বললেও, কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকারের মন্তব্য, ‘‘আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার বলে গিয়েছেন, বিজেপির ডামি প্রার্থী অধীর চৌধুরী। আজকে সেই তত্ত্বে সিলমোহর পড়ল।’’
বহরমপুরে নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস কার্যালয় থেকে রোড-শো করে প্রচার শুরু করেছিলেন বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী অধীর। উল্টো দিক থেকে বিজেপি প্রার্থী নির্মলও হুডখোলা গাড়িতে কয়েকশো দলীয় সমর্থক সঙ্গে নিয়ে রোড-শো শুরু করেন বহরমপুর কুঞ্জঘাটা এলাকা থেকে। সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ বহরমপুর পুরসভা লাগোয়া লালদিঘির পাশের রাস্তায় মুখোমুখি হয় দুই প্রার্থীর প্রচারগাড়ি। নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিনে এসে রাজনৈতিক সৌজন্যের নজির দেখল বহরমপুর। এ নিয়ে বিজেপি প্রার্থী বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। তাই বলে সৌজন্যবোধের অভাব হবে কেন? মানুষ যাঁকে চাইবেন, তিনি নির্বাচিত হবেন। এটাই গণতন্ত্রের নিয়ম।’’ আর কংগ্রেস প্রার্থীর প্রশ্ন, ‘‘ইট ছুড়লে সেটাই কি স্বাভাবিক হত?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘রাজনীতির আঙিনায় বিতর্ক থাকবেই। তাই বলে সব সৌজন্য শেষ করে দিলে মানবিক বোধটা তো হারিয়ে যাবে।’’ বিজেপির একটি সূত্র বলছে, পারিবারিক ভাবে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ হলেও অধীরের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের ‘সুসম্পর্ক’ বিজেপি প্রার্থী নির্মলের। এক সময় অধীরের ব্যক্তিগত চিকিৎসকও ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। তাই এই সৌজন্য ভোটযুদ্ধেও বজায় থাকবে।
আসলে ভোট ঘোষণার পর থেকে বার বার উত্তেজনা ছড়িয়েছে বহরমপুরে। প্রচারে বেরিয়ে বার বার বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন অধীর। আবার শক্তিপুরের অশান্তির ঘটনায় আক্রান্তদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে দেখতে গিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি শাখারভের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন অধীর। বিজেপি নেতা অভিযোগ করেন, ‘‘গুন্ডাগিরি করেছেন অধীর চৌধুরী।’’ অধীরকে ঘিরে বিজেপি নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল হাসপাতাল চত্বর। আবার প্রচারে বেরিয়ে কখনও তৃণমূল, তো কখনও বিজেপির বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন বহরমপুরের পাঁচ বারের সাংসদ অধীর। ‘গো ব্যাক’ শুনে মেজাজ হারিয়েছেন। সেখানে নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর এই সৌজন্য নজর কাড়ল পথচলতি মানুষের।