মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূলের মতো দল এ দেশে কেন, সারা পৃথিবীতে দুর্লভ। এক ঘর-সংসারে চলতে গেলে, এক জন দুষ্টু হয়। কেউ মিষ্টি হয়। কেউ দুষ্টুমি করলে পদক্ষেপ করতে ছাড়ি না। বিজেপি আজ পর্যন্ত করেনি। গুজরাতে দাঙ্গায় হাতে রক্ত মেখেছে। হাথরস, গুজরাতের নির্যাতিতা বিচার পায়নি। কুস্তিগীর সাক্ষীর উপর অত্যাচার করা হয়েছে। যিনি অত্যাচার করলেন, তাঁকে নেতা বানিয়ে দিল। বিজেপিকে হরিয়ানায় ঢুকতে দিচ্ছে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘ওদের লজ্জা নেই। ঘৃণা নেই। মোদীবাবুর বড় ত্রাতা অমিতবাবু মহাশয় মেমারিতে এসে বলে গেলেন, রাজ্য ২ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকার হিসাব দেয়নি। আগের সভায় চাঁচলে বলে এলাম, কোনও ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট দেওয়া বাকি নেই। ক্ষমা চাইতে হবে, নয় তো জনগণের সামনে নাকে খত দিতে হবে। সিএজি রিপোর্টে বলা রয়েছে, ৪.১ ধারায়, ৩২টি দফতর ৫২ হাজার কোটি টাকা ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট দিতে পারেনি।’’
মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূল চোর, রোজ বলো। চুরি করল কোথায়? প্রমাণ দাও। ক্ষমতা থাকলে মোদীবাবু, শ্বেতপত্র বার করো। সাড়ে তিনশো কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়েছ। কিছু বার করতে পারোনি। তা সত্ত্বেও ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করেছ। ১,৭৪,০০০ কোটি টাকা আটকে রেখেছ। ১০০ দিনের কাজের টাকা, বাড়ির টাকা বন্ধ করেছ।’’
মমতা বলেন, ‘‘দেহ বহন করে আনা সব থেকে দুঃখের কাজ। সেটাতেও আমরা পাশে দাঁড়াই। আমাদের প্রকল্প রয়েছে। যত দিন পারব, করে যাব। আমার পরেও যারা তৃণমূল করবে, সাহায্য করবে। ’’
মমতা বলেন, ‘‘আগামী দিনে ভাল থাকতে চান? লক্ষ্মীর ভান্ডার চলবে? মা-বোনেরা পাচ্ছেন? নাম লিখিয়েছেন? ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করেছি। বিজেপি বলেছে তিন মাস পর বন্ধ করব। আমি বলেছি, সাহস ভাল, দুঃসাহস ভাল না। বুঝবি, মায়ের ঝান্ডার কী দাম! যে কড়াইয়ে রান্না করেন, তা মাথায় মারলে বুঝবি! যত দিন বেঁচে থাকবেন, পাবেন। ৬০ বছর পর্যন্ত লক্ষ্মীর ভান্ডার। তার পরে লক্ষ্মীর ভান্ডার-২।’’
মমতা বলেন, ‘‘সাধুরা গেরুয়া পরে। আজ গেরুয়া পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে চোর, ডাকাত, মাফিয়া। এদের মনুষ্যত্বের দাম রয়েছে? নেই। তাই ওরা একটাই কথা জানে, যত পারো, মিথ্যে বলে যাও। ভাবে এ ভাবেই মিথ্যে এক দিন সত্যি হবে। মনে রাখবেন তাই, আপনার এক ভোটের মূল্য অনেক বেশি। কোটিপতির যা ভোটের দাম, সাধারণ মানুষেরও তা-ই ভোটের দাম।’’
মমতা বলেন, ‘‘কেউ মাকে মা বলে, কেউ আম্মা, কেউ মাদার। আদতে মা একই থাকে। তা হলে কেন দাঙ্গা নিয়ে সুড়সুড়ি দেওয়া হবে? কেন এনআরসি, সিএএ হবে? কেন ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া হবে? কেন নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজিকে ভুলিয়ে দেওয়া হবে? দূরদর্শনকেও গেরুয়া করা হয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘একটা হিন্দু ধর্মের আমদানি করেছে। ওরাই নাকি সব। যখন স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল, ওরা জন্মায়নি। আমরা যেন হিন্দু নই। এই তো দুর্গাপুজো আসছে। ইদ চলে গেল। এর পর পুজো। আমরা করি না? দুর্গা, শিব, সরস্বতী, রক্ষাকালী, শীতলার পুজো করি না? আমাদের হিন্দু ধর্ম শেখাচ্ছে? ইতিহাসের ছাত্র-ছাত্রীরা জানেন, তপোবন থেকে হিন্দু ধর্মের উদ্বোধন হয়েছিল। চার বেদ। যে কথা রামকৃষ্ণ বলেছেন, সে কথা নেতাজি বলেছেন। কথা হয়তো একটু অন্য ভাবে হতে পারে। কিন্তু আদতে এক।’’
মমতা বলেন, ‘‘যদি এনআরসি, সিএএ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আটকাতে চান, বিজেপিকে আটকাতে হবে। নাগরিক অধিকার চাইলে ওদের হারাতে হবে। তফসিলি, জনজাতি, হিন্দু, মুসলমান— কারও কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। সকলতে ঘাড় ধরে বার করে দেবে।’’
মমতা বলেন, ‘‘বিরোধীদের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চায়। সব এজেন্সি কিনে নিয়েছে। বিচারের শেষ জায়গাও কিনতে চাইছে। এই অবস্থায় যদি বিজেপিকে না পাল্টান, সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা নিজেদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি করে কিছু তৃণমূল এবং কিছু কংগ্রেসকে দেওয়ার চেষ্টা করেন, ভারতবর্ষ বাঁচবে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা যাঁদের চাকরি দিচ্ছি, তাঁদের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। খেয়ে উল্লাসিত হয়ে বলছে, বোমা ফাটাব। ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে। আমরা বলি মেঘ দেখে করিসনে ভয়। আড়ালে সূর্য হাসে। আজ যাঁরা অন্যের চাকরি গেলে খুশি হন, তাঁরা কি ভাবেন, তাঁদের বাড়ির লোকের চাকরি গেলে কী হত? কোটি কোটি টাকা করে বিজেপিতে গিয়েছে। কালো টাকা সাদা করছে। জিনিসের দাম বাড়ছে, বিজেপি হাসছে। চাকরি যাচ্ছে, বোমা ফাটাচ্ছে। বিজেপি কাঁদবে।’’
মমতা বলেন, ‘‘জিনিসের দাম এত বেড়েছে। সেই নিয়ে কি মোদীবাবু মাথা ঘামাচ্ছেন? দিল্লিকে জিজ্ঞেস করুন।’’
মমতা দিল্লিতে বদলের ডাক দিলেন। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লিতে পরিবর্তন দরকার। হাজার টাকার গ্যাস। ঘরে ঘরে গ্যাস, কিন্তু তার এত দাম যে মানুষ ছুঁতে পারে না। সব ওষুধের দাম বেড়েছে। খোঁজ রাখেন? ডায়বিটিস, হার্ট, অ্যান্টিবায়োটিক— সব ওষুধের দাম বেড়েছে। রমজানে আমরা সুফল দিয়ে কম দামে ফল বিক্রি করি। মা ক্যান্টিনে ৫ টাকায় ডাল, ভাত, তরকারি, ডিম দিই।’’
মমতা বলেন, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনে আম, আমসত্ত্ব চেয়েছিলাম, আপনারা দু’হাত ভরে দিয়েছেন। তাই আজ আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আমরা কৃতজ্ঞ। তাই এনআরসি আটকাতে পেরেছি। এখানে অসমের মতো হত। আমরা আটকে দিয়েছি। এই জন্য বলছি, দিল্লিকে বদলান। ’’
মমতা বলেন, ‘‘বিজেপির নিশানা বাংলাকে বদনাম করা। মালদহে দু’টি লোকসভা আসন রয়েছে। তৃণমূল জন্মের পর থেকে একটিতেও জয়লাভ করেনি। একটায় বিজেপি, একটায় কংগ্রেস জেতে। আমরা কি কাউকে বঞ্চিত করেছি? কেউ বলতে পারবেন যে লক্ষ্মীর ভান্ডার পান না? কন্যাশ্রী পান না? শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী, সবুজশ্রী পান না? সবটাই ভাগ করে নিই আমরা। আমাদের ভেদাভেদ নেই।’’
মমতা বলেন, ‘‘ভারতের জাতীয় সঙ্গীত, জনগণমন অধিনায়ক। কার লেখা? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। নেতাজি স্লোগান তুলেছিলেন জয় হিন্দ। আজ সারা পৃথিবী বলে। বন্দে মাতরম কার লেখা? বঙ্কিমচন্দ্রের। বাংলার সঙ্গে বিজেপির মেলে না। এখানে প্রত্যেক জায়গার আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। মালদহে আম, বর্ধমানে মিহিদানা, সীতাভোগ, বীরভূমে তারাপীঠ। সবটাই বাংলা।’’
মমতা বলেন, ‘‘সংবিধানকে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। গান্ধীজিকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে আজও জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেনি। বিদ্যাসাগর, বিরসা মুন্ডা, বঙ্কিমচন্দ্র, রামমোহন রায়— যত নাম নেবেন, তাঁরা দেশের নবজাগরণ এনেছেন। বাংলা থেকে শুরু হয়েছে। বাংলা এক সময় অবিভক্ত ভারতের রাজধানী ছিল। এখান থেকে গান্ধীজি, নেতাজি, মাতঙ্গিনী আন্দোলন শুরু করেছেন।’’
মমতা বলেন, ‘‘আজ সারা পৃথিবীতে যান, সকলে বলছেন, ভারতে কী চলছে। আমার লজ্জা করে। আমি দেশভক্ত। ভারতীয় হিসাবে গর্বিত আমি।’’
মমতা বলেন, ‘‘অটলবিহারীজি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন স্লোগান উঠেছিল, ইন্ডিয়া ইজ় সাইনিং। ভারত উজ্জ্বল হচ্ছে। এই ভোটে বিজেপির, মোদীবাবুর স্লোগান হল, মোদীবাবুর গ্যারান্টি। গ্যারান্টি কী? দেশ বিক্রি করেছে।’’