(বাঁ দিক থেকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দাস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
প্রায় পৌনে দু’বছর জেলে রয়েছেন বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাই তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব তৃণমূলের আদি নেতা অঞ্জন দাসকে দিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে অঞ্জনকে যাবতীয় দায়িত্ব বুঝে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অঞ্জন বেহালার ভূমিপুত্র। এক সময় বেহালা পশ্চিমের অন্তর্গত ১২৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। ২০০০ সালে তৃণমূল কলকাতা পুরসভা দখল করলে বোরো ১৪-র চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী সংহিতা দাস ১২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হওয়ার পাশাপাশি বোরো ১৪-র চেয়ারপার্সন। এককথায় বেহালা পশ্চিম অঞ্জনের কাছে হাতের তালুর মতো চেনা জায়গা। তা ছাড়া নিজের ভোটে লড়াই করার পাশাপাশি বড় ভোটে দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তাই এমন একজন অভিজ্ঞ নেতাকেই লোকসভা নির্বাচনে ব্যবহার করতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
কলকাতা পুরসভার ১১৮-১১৯, ১২৫-১৩২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র। ২০০১ সাল থেকে পার্থ যে পাঁচ বার বেহালা পশ্চিমে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন, তত বার তাঁর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছিলেন অঞ্জন। এ ছাড়াও লোকসভা নির্বাচনে বেহালা পশ্চিমে তৃণমূল প্রার্থীদের প্রতিনিধি হতেন তিনিই। ২০০৪ সালে যখন বেহালা পশ্চিম বিধানসভা যাদবপুর লোকসভার অন্তর্গত ছিল, সেই সময় তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণা বসুর প্রতিনিধি ছিলেন অঞ্জন। আবার ২০০৯ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পর যখন বেহালা পশ্চিম দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার অংশ হল, তখনও তৃণমূল প্রার্থী মমতার প্রতিনিধি হিসেবে ভোটে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী কিংবা মালা রায়ের দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রেও বেহালা পশ্চিমের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই বিধায়কের অনুপস্থিতিতে বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব অঞ্জনকে দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করছে তৃণমূলের একাংশ।
কিন্তু এ প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ অঞ্জন। তিনি বলেন, ‘‘দল আমাকে কী দায়িত্ব দিয়েছে, সেটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমি এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে কিছুই বলতে পারব না।’’ উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৩ জুলাই নিয়োগ দুনীতিকাণ্ডে পার্থকে তাঁর নাকতলার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে ইডি। সেই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই তৃণমূল মহাসচিব-সহ দলের সব পদ থেকে পার্থকে সরিয়ে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় থেকে কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বেহালা পশ্চিম। ওয়ার্ডভিত্তিক বেহালার কাউন্সিলরেরা এলাকার মানুষকে পরিষেবা দিয়ে বিধায়কের অনুপস্থিতি ঢাকার চেষ্টা করছেন। তা সত্ত্বেও পার্থের কারাগারে থাকার বিষয়টিকে তুলে ধরে লাগাতার আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে বিজেপি এবং সিপিএম। যা নিয়ে অস্বস্তি সহ্য করতে হচ্ছে বেহালার তৃণমূল নেতৃত্বকে। এমতাবস্থায় পার্থের সঙ্গে সব সংযোগ ছিন্ন করেই সাংগঠনিক কাজ করেছেন বেহালার তৃণমূল নেতারা। এমনকি, বেহালা ম্যান্টনে থাকা পার্থের বিধায়ক কার্যালয়টিকেও ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। লোকসভা ভোটের কাজেও ব্রাত্য রয়েছে ওই কার্যালয়টি। বহুজাতিক সংস্থার চাকরি ছেড়ে ২০০১ সালে পুরো সময় রাজনীতিক হন পার্থ। সে বারের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রতীকে ভোটে দাঁড়িয়ে জয় পান। তার পর থেকে টানা পাঁচ বার বেহালা পশ্চিম থেকে জয়ী হয়ে বিধানসভার সদস্য হয়েছেন। কখনও বিরোধী দলনেতা, কখনও আবার রাজ্যে শিক্ষা এবং শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০০১ সালের পর এই প্রথম বাংলার কোনও ভোট হচ্ছে, যেখানে পার্থের সক্রিয় অংশগ্রহণ নেই। সেই পরিস্থিতিতে এ বার বেহালা পশ্চিমের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব অভিজ্ঞ অঞ্জনের কাঁধে দিয়েছেন মমতা।