তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সিবিআই তলবের নোটিস। ছবি: সংগৃহীত।
ভূপতিনগরকাণ্ডের আবহে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এলাকা কাঁথিতে তৃণমূলের ৩০ জন নেতা-কর্মীকে সিবিআইয়ের তলব নিয়ে শোরগোল পড়ল। যদিও ভূপতিনগরে এনআইএর হাতে তৃণমূলের দুই নেতার গ্রেফতার হওয়ার ঘটনার আগেই কাঁথির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের তলব করা হয়েছিল। তৃণমূল সূত্রে খবর, যাঁদের তলব করা হয়েছিল, তাঁরা কেউই সিবিআইয়ের মুখোমুখি হননি। শাসকদলের বক্তব্য, বিজেপির ষড়যন্ত্রে এ সব হচ্ছে। লোকের ভোটের আগে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তৃণমূল খবর সূত্রে খবর, গত বিধানসভা ভোটের পর পরই কাঁথিতে এক বিজেপি নেতা খুনের মামলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের তলব করা হয়েছিল। যাঁদের তলব করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে এক জন হলেন কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা দলের শ্রমিক সংগঠনের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিকাশ বেজ। কিন্তু তাঁদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ভোটের কাজে তাঁরা ব্যস্ত। সেই কারণে তাঁরা হাজিরা দিতে পারবেন না। বিকাশ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘গত ৩ এপ্রিল ১৩ জনকে সিবিআই নোটিস পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতায় ডেকেছিল। ৪ তারিখে সকলকে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ৪ তারিখে আরও ১৭ জন তৃণমূল নেতাকে সিবিআই নোটিস পাঠিয়ে ৫ তারিখে ডেকেছিল।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় কাঁথি-৩ ব্লকের তৃণমূল নেতা নন্দ মাইতিকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল এলাকারই বাসিন্দা বিজেপির দাপুটে নেতা জন্মেজয় দলুইয়ের। ভোট পরবর্তী সময় ওই বিজেপি নেতাকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফাঁকা মাঠ থেকে উদ্ধার হয় ওই বিজেপি নেতার দেহ। এই ঘটনা পরে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ মামলায় অন্তর্ভুক্ত হয়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ মামলায় খুন ও ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত করছে সিবিআই। বিকাশের বক্তব্য, ‘‘২০২১ সালে এক জন ডাকাতের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে লোকসভা ভোটের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা মনে পড়েছে সিবিআইয়ের। ওই মামলায় চার্জশিট তৈরি হয়ে গিয়েছে। এর আগেও ডেকে পাঠিয়েছিল। তখনও কিছু হয়নি। আবার লোকসভা ভোটের সময় এই তলব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সিবিআইয়ের নোটিসের জবাবে আমরা জানিয়ে দিয়েছি, নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারছি না।’’
দু’বছরের পুরনো ভূপতিনগর বিস্ফোরণ মামলায় গত শনিবার এনআইএর হাতে দু’জন তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। তা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। ভূপতিনগরও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এ বার যুযুধান বিজেপির সৌমেন্দু অধিকারী ও তৃণমূলের উত্তম বারিক। তৃণমূলের দাবি, ভোটের আগে চাপ তৈরি করতেই কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের ভয় দেখাতে চাইছে বিজেপি। সেই কারণে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের তলব করা হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, ভূপতিনগরে এনআইএর ধরপাকড় নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই পুরনো ওই বিস্ফোরণ মামলায় তৃণমূলের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মানব পড়ুয়া-সহ তিন নেতাকেও তলব করা হয়েছে। সোমবার তাঁদের কলকাতায় এনআইএর দফতরে হাজির হতে বলা হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, বিজেপি বেছে বেছে তাদের দলের ‘ভোট-মাস্টার’দের গ্রেফতার বা ভয় দেখিয়ে এলাকাছাড়া করাতে চাইছে। কাঁথির দলীয় নেতা-কর্মীদের তলবও তার প্রমাণ।
বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের পাল্টা নালিশ, তৃণমূলের এই ভোট-মাস্টাররা বুথ দখল, ছাপ্পা দিয়েই ভোট করিয়েছে বরাবর। তাই এখন ভয় পাচ্ছে।