লোকসভা নিবার্চনের প্রচারে (বাঁ দিকে) বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী এবং তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
প্রবল গরমের সেই জ্বালা-পোড়া ভাব উধাও। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রোদের তেজও কমেছে অনেকটাই। তার উপরে রবিবারের আবহাওয়ার এই ভোলবদলে সুযোগ হাতছাড়া করলেন না প্রার্থীরা। কেউ অন্য দিনের তুলনায় বেশি সকালে বেরিয়ে বাড়তি কয়েক ঘণ্টা প্রচার সারলেন, কেউ সকালে গরমের জন্য বন্ধ থাকা রোড-শো ফের শুরু করলেন। শাসক-বিরোধীর তরজায় ভোটের পারদ চড়লেও আবহাওয়া স্বস্তি দিল সব প্রার্থীকেই।
টানা কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে শহরে। দুপুর গড়াতেই আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামছে। এক ধাক্কায় তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। যদিও কয়েক দিন আগেই শহরের আবহাওয়া ছিল পুরোপুরি আলাদা। ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করা তাপমাত্রায় দিনে বাইরে বেরোনোই দুষ্কর হয়ে উঠেছিল। ভোটের মুখে তাতে ধাক্কা খাচ্ছিল প্রার্থীদের প্রচারও। কার্যত বাধ্য হয়ে প্রচারে কাটছাঁট করেছিলেন অনেকে। যদিও শহরে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরতেই বাড়তি উৎসাহে রবিবার জনসংযোগে মনোনিবেশ করলেন অধিকাংশ প্রার্থী।
সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম।
এ দিন সকালে এন্টালিতে ‘চায়ে পে চর্চা’ দিয়ে প্রচার শুরু করেন উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। এর পরে তিনি প্রচার করেন বেলেঘাটায়। কখনও হুড খোলা গাড়িতে, কখনও হেঁটে তাঁকে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে। গরম কমে যাওয়ায় যে প্রচারে স্বস্তি ফিরেছে, তা স্বীকার করছেন তাপস। কর্মীদেরও সুবিধা হচ্ছে বলে জানালেন। তাঁর কথায়, ‘‘গরমে কষ্ট হলেও প্রচার নিজের নিয়মে হচ্ছিল। তবে এখন যা আবহাওয়া, তাতে অনেকটা বাড়তি স্বস্তি দিয়েছে। কর্মীরাও বাড়তি উদ্যমে প্রচারে শামিল হতে পারছেন।’’
ছুটির সকালে বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত পোস্তা এলাকায় প্রচার সারেন কলকাতা উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন হুড খোলা গাড়িতে কলকাতা পুরসভার ২২ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ঘোরেন তিনি। পতাকা হাতে সেই মিছিলে হাঁটা এক তৃণমূল কর্মী বললেন, ‘‘ক’দিন আগেও মিছিলের নাম শুনলেই গায়ে জ্বর আসত। বাইরে বেরোলে মনে হচ্ছিল, ঝলসে যেতে হবে। এখন কিছুটা শান্তি। ভোট পর্যন্ত এমন থাকলেই বাঁচোয়া!’’
এ দিন বেহালা এলাকায় জনসংযোগে মিছিল, বাড়ি বাড়ি প্রচার করা থেকে শুরু করে পথসভা— কোনও কিছুই প্রায় বাদ রাখেননি দক্ষিণ কলকাতার সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম। দুপুরে বিশ্রামের ফাঁকে তিনি বললেন, ‘‘আর তো হাতে মাত্র তিন সপ্তাহ। তার উপরে গরমটাও উধাও। জনসংযোগের সুযোগ হাতছাড়া করলে চলে?’’ ভোটের আগে এমন আবহাওয়ায় প্রচারে কর্মীরাও যে বাড়তি উৎসাহ পাচ্ছেন, তা-ও জানালেন সিপিএম প্রার্থী। বাড়তি উৎসাহে এ দিন সকালে টালিগঞ্জ, কসবা এলাকায় প্রচার করেন ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী। সেই সুসজ্জিত মিছিলে দলীয় কর্মীদের হাতে ছিলঢাক-ঢোল, বেলুন। সকালের প্রচারে এত দিন রোড-শো না করলেও এ দিন দু’টি ওয়ার্ডে রোড-শো সারলেন কলকাতা দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। ৯০ এবং ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার করেন তিনি। মালা বলেন, ‘‘গরমের জন্য তো এত দিন প্রচারটাই ভাল ভাবে জমছিল না। রোদের তাপে সবাইকে নিয়ে হাঁটতেই রীতিমতো কষ্ট হচ্ছিল। এখন তা-ও শান্তি। ভোটের আগে ক’দিন এমন থাকলেই ভাল!’’