মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের রায় মানবেন না—এই হুঙ্কার দিয়ে ফের আদালতকে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তাঁর অভিযোগ, ‘‘এরা (বিজেপি) হাই কোর্ট কিনে নিয়েছে!’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের কথা বলছি না। সেখানে বিচারের আশায় আছি।’’
পাল্টা সুর চড়িয়ে বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই আঙুল তুলেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা আক্রমণ, ‘‘যাঁরা মামলা করেছেন, যাঁরা মামলা লড়েছেন বা প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, এই পরিস্থিতির জন্য কারও কোনও ভূমিকা নেই। বিজেপি এত দিন তৃণমূলকে চোর বলত। হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিলমোহর লাগিয়ে দিল— মমতার পুরো মন্ত্রিসভা চোর!’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এখন আট থেকে আশি, সবাই তা-ই বলছে।’’ পাশাপাশি, আদালতের রায়ে চাকরি হারানো যোগ্য প্রার্থীদের আইনি সাহায্য দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
নিয়োগ বাতিলের রায়কে ‘বেআইনি’ চিহ্নিত করে তাকে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই রায়ের সূত্রেই বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের ‘অবস্থান’ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে এ দিন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত বর্ধমানের গলসির জনসভায় বিজেপি সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘‘এরা কোর্ট কিনে নিয়েছে, আমি সুপ্রিম কোর্টের কথা বলছি না। সিবিআই-কে কিনে নিয়েছে, বিএসএফ-কে কিনে নিয়েছে!’’ তবে এই সূত্রেই তিনি জানিয়েছেন, বিচারপতিদের সম্পর্কে তিনি কিছু বলছেন না। রায়ের সমালোচনা করছেন।
নিয়োগ-দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর থেকে আদালত ও তাদের নির্দেশ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞাননমকে চিঠি লিখেছেন বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচী। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননায় মামলা দায়েরের আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
ভোটের মুখে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের রায় প্রত্যাশিত ভাবেই রাজনীতিতে প্রবল আলোড়ন ফেলেছে। গত দু’দিন ধরেই নির্বাচনী সভাগুলিতে এই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে দুষেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোঁসাই।’’ বিজেপি-ই যে চাকরি ‘খেয়ে নিচ্ছে’, প্রচারে তা সামনে এনে মমতা ফের বলেন, ‘‘আমার হাতে এখনও ১০ লক্ষ চাকরি আছে। শুধু সরকারি দফতরের।’’ এবং সেই চাকরিতে বাধা হিসেবে বিজেপিকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘‘কোর্টে গিয়েই আটকে দিচ্ছে। বিজেপির একটা মহাতীর্থকেন্দ্র। সেখানে (আদালতে) বিজেপি আবেদন করলে, একেবারে যা বলবে, তা-ই। অন্য কেউ যদি বিচার চায়, তাদের জন্য দরজা বন্ধ!’’ সেই সঙ্গেও মমতা জানিয়েছেন, আইনজীবী হিসেবে তিনি এখনও বার কাউন্সিলের সদস্য। যে কোনও দিন আদালতে সওয়াল করতে দাঁড়াতে পারেন।
শিক্ষক নিয়োগের এই মামলায় অতিরিক্ত পদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রিসভার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেই ‘দায়’ অস্বীকার করে এ দিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ফের বলেন, ‘‘কোনও দফতর যখন চাকরি দেয়, সেটা সেই দফতরের ব্যাপার। সেখানে আমি মাথা গলাই না।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘এক কথায় ২৬ হাজার চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। এটা কী মজা? মজার মুলুক?’’
তমলুকের ডিমারি হাইস্কুলের মাঠে এ দিন নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ‘দায়’ চিহ্নিত করেই শুভেন্দু পাল্টা বলেছেন, ‘‘সম্পূর্ণ ঘটনার জন্য যদি কেউ দায়ী হয়ে থাকেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পালাবেন কোথায়?’’ তাঁর দাবি, ‘‘২০২১-এর আগে বলেছিল, ডাবল ডাবল চাকরি হবে। এখন ডাবল ডাবল চাকরি যাচ্ছে!’’
চাকরি হারানোর বিষয়টিকে সামনে রেখে ভোটের আবেদনও করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বলব, ২৬ হাজার জনের চাকরি খাওয়ার প্রতিবাদে একটি ভোটও আর বিজেপিকে দেবেন না, সিপিএম-কংগ্রেসকে দেবেন না।’’ বিরোধীদের সম্পর্কে সতর্ক করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এরা চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। কে জানে, কাল আবার চাকরি খাবে!’’
নিয়োগ-দুর্নীতির প্রতিবাদে কলকাতায় বাম ও কংগ্রেসের মিছিলের পরে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ করেই বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, ‘‘তৃণমূল আমলের কেলেঙ্কারি, তা ‘ব্যপম’ কেলেঙ্কারিকেও হারিয়ে দিয়েছে। সরকার চালাতে জানে না!’’ সেই সঙ্গেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, আমি কিছু দেখি না। অযোগ্যদের যখন চাকরি হচ্ছিল না, তখন মন্ত্রিসভার নির্দেশে শূন্য পদ তৈরি করা হয়েছিল৷ তা হলে মুখ্যমন্ত্রীকে কেন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না?’’
(আনন্দবাজার অনলাইন দেশের সমস্ত বিচারালয়, বিচারপতি এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই খবরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তা তাঁর নিজস্ব অভিমত। তার দায় আনন্দবাজার অনলাইনের নয়)