হাসিমুখে: ভোটারদের সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার, বনহুগলিতে। —নিজস্ব চিত্র।
নীল তাঁতের শাড়ি, খোলা চুলে মাথার উপরে ব্র্যান্ডেড রোদচশমা। অভিনেত্রী পরিচয় খানিক সরিয়ে রেখেই ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোট করানোর লক্ষ্যে শনিবার সকাল থেকে চরকিপাক খেলেন বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনের চাপা উত্তেজনা চোখেমুখে খানিকটা ফুটে উঠলেও ‘ঘরের মেয়ে’ হয়ে ওঠার তাগিদে হাসিমুখে ভোটারদের নিজস্বী তোলার আবদার মেটালেন।
আর বিরোধীদের তোলা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সায়ন্তিকার স্পষ্ট জবাব ছিল,
‘‘কোনও অভিযোগের পাল্টা মন্তব্য করে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে চাই না।’’ গোপাললাল ঠাকুর রোডের অস্থায়ী বাসস্থান থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় বেরিয়ে অভিনেত্রী প্রার্থী পৌঁছে গিয়েছেন বিভিন্ন বুথে। তখন পদ্ম-শিবিরের সজল ঘোষ তাঁদের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে ভোটের জল মাপছেন। বেরোবেন না? ‘‘সকালে এক বার ঘুরে এসেছি। প্রয়োজন হলে বেরোব। না-হলে অহেতুক গিয়ে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি করতে চাই না’’— সটান উত্তর সজলের। যদিও বেলা বাড়তেই আর ঘরে বসে থাকেননি তিনি। বরাহনগর পুরসভার একটি বুথে গিয়ে এক ভুয়ো ভোটারকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তার পরে বিভিন্ন বুথে ছুটেছেন লেবুতলার দেবু (সজলের ডাকনাম)।
যুযুধান: বরাহনগরের একটি বুথে ভোট দেখতে যাওয়ার সময়ে সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্যকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূলের পুর প্রতিনিধি ও তাঁর সঙ্গী। বচসার সময় তাঁদের কলার চেপে ধরেন তন্ময়। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
কম যাননি সিপিএমের তন্ময় ভট্টাচার্যও। সকালেই বনহুগলির ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র কলেজে গিয়ে বচসায় জড়িয়েছেন তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধির সঙ্গে। বচসা হাতাহাতিতে গড়াতেই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বেলা গড়ানোর সঙ্গেই অভিযোগের আঁচে বরাহনগর তেতে ওঠে। আর নিজের ‘কুল লুক’ ধরে রেখেই অন্তত ১৫-২০ মিনিট করে এক-একটি বুথে সময় কাটিয়ে বেরিয়ে এসেছেন সায়ন্তিকা। শুধু বলেছেন, ‘‘আমার ভোটারেরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতেই এত ঘুরছি।’’ টানা ঘোরাঘুরির মাঝে বিরতির প্রসঙ্গ উঠতেই তাঁর জবাব, ‘‘আজ তো বসে থাকার দিন নয়। বসব, তবে সেটা বিধানসভায় গিয়ে।’’ শেষ পর্বে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তন্ময়। বলেছেন, ‘‘কয়েকটি জায়গায় পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূল ভোট লুট করেছে। আমার হিসাবেই ছিল, মেরেকেটে এক হাজার
ছাপ্পা ওরা দেবে। তাতে তৃণমূল বড়জোর তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় স্থানে যেতে পারে।’’
যদিও প্রথম হওয়ার আত্মবিশ্বাস তাঁর রয়েছে বলে সকালেই নিজের অস্থায়ী বাসস্থানে দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন সায়ন্তিকা। সকাল ৭টা নাগাদ সেখানেই এসে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় তাঁকে কিছু ‘টিপস’ দেন। এর মধ্যে বনহুগলি বালিকা বিদ্যালয় এলাকায় বিজেপির অর্জুন সিংহ ও কৌস্তভ বাগচী ঘুরছেন বলে খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সেখানে পৌঁছন সৌগত-সায়ন্তিকা। যদিও পরে জানা যায়, দমদম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তের চিফ ইলেকশন এজেন্ট কৌস্তভ সেখানে এলেও অর্জুন আসেননি। এসেছিল তাঁর একটি গাড়ি!
এ দিন বরাহনগরের বিভিন্ন জায়গায় সজল পৌঁছতেই তাঁকে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। বিকেলে আলমবাজারের একটি বুথে গিয়েও ভুয়ো ভোটার ধরেছেন বলে তাঁর দাবি। তার কিছু পরেই বিজেপির প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। তাতে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটে। সজল বলেন, ‘‘যতটা লুটের দায়িত্ব ছিল, ততটা পারেনি বলেই এই তাণ্ডব। তবে রক্তপাতের জবাব সময়মতো দেব।’’ যদিও ভোট শেষে সারা দিনের ক্লান্তি সরিয়ে সায়ন্তিকা বললেন, ‘‘শান্তি!’’