পুরুলিয়া ১ ব্লকের চিড়কা শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে রবিবার প্রচার শুরু করলেন পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির মনোনীত প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়া কেন্দ্রে কে প্রার্থী হবেন, গত লোকসভা ভোটের আগে এমন জল্পনার মাঝে খানিক চমক দিয়ে পুরুলিয়া জেলা বিজেপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোকে প্রার্থী করেছিল দল। তবে এ বারে কোনও চমক নয়। প্রত্যাশামতোই প্রার্থী হয়েছেন জ্যোতির্ময়, মানছেন দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী।
ঝালদা ১ ব্লকের পুস্তি পঞ্চায়েতের পাতরাডি গ্রামের বাসিন্দা, ছাত্রাবস্থায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ও অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কর্মী জ্যোতির্ময়ের ভোটে লড়ার অভিজ্ঞতা বলতে ছিল ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন। বাঘমুণ্ডি আসনে দলীয় প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে প্রথম বার লোকসভার ময়দানে নেমে তৃণমূলের সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতোকে দু’লক্ষেরও বেশি ভোটে হারিয়ে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন জ্যোতির্ময়। তার পরে পান দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। পরবর্তীতে বিধানসভা ভোটে জেলার ন’টি আসনের মধ্যে সাতটি বিজেপির দখলে যাওয়ার পরে থেকে দলের অন্দরে খুঁটি শক্ত হতে শুরু করে তাঁর। পাশাপাশি, পুরুলিয়ার ‘কুড়মি-মুখ’ হিসেবে উঠে আসা জ্যোতির্ময় গত পাঁচ বছরে জায়গা পোক্ত করেছেন জাতীয় রাজনীতির অলিন্দেও, মনে করছেন গেরুয়া শিবিরের কর্মীরা।
বর্তমানে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ‘ঘনিষ্ঠ’ জ্যোতির্ময়কে গত নভেম্বরে কলকাতার ধর্মতলায় অমিত শাহের সভা পরিচালনা করতে দেখা গিয়েছে। আগামী লোকসভা ভোটে পুরুলিয়ায় কে দলের টিকিট পেতে পারেন, সে দিনই ওই জল্পনার অবসান ঘটে, মত দলীয় কর্মীদের অনেকের। গত ১ মার্চও আরামবাগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা পরিচালনায় দেখা যায় জ্যোতির্ময়কে। কয়েক দিন আগে পুরুলিয়া শহরে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লেখার সময়ে যদিও জ্যোতির্ময়ের প্রতিক্রিয়া ছিল, “দল যাঁকে প্রার্থী করবে, এক জন দলীয় কর্মী হিসেবে সেই প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব আমারও।”
সাংসদের ভূমিকাকে যদিও আতশ কাচের তলায় রাখছে শাসকদল তৃণমূল। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “জেলার মানুষ তাঁকে (জ্যোতির্ময়কে) ভোট দিয়ে জেতালেও বিনিময়ে গত পাঁচ বছরে জেলার মানুষকে কী দিয়েছেন সাংসদ! জেলার হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেও একশো দিনের কাজের টাকা পাননি। আবাস প্রকল্পের টাকা বিনা কারণে আটকে রাখা হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, কোভিডের নামে একাধিক লোকাল ট্রেন দিনের পর দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেগুলি খোলার পরেও স্পেশাল ট্রেনের তকমা দিয়ে সেগুলি বেশি ভাড়ায় চালানো হয়েছে। একটি বন্দে ভারত ছাড়া পুরুলিয়ার মতো যোগাযোগে অনুন্নত জেলায় নতুন ট্রেন দেওয়া হয়নি।
এ বারও তবে জেলাবাসীর আশীর্বাদ তিনি পাবেন, আশাবাদী জ্যোতির্ময়। তিনি বলেন, “দল যে ফের আস্থা রেখেছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ। গত বার মানুষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরে আস্থা রেখেছিলেন। আমি ছিলাম তাঁর প্রতিনিধি মাত্র। এই নির্বাচন দেশ গঠনের। এ বারও মানুষ তাঁর প্রতিই আস্থা রাখবেন।” তৃণমূলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তৃণমূল নেতাদের আচরণ নিয়ে যে প্রশ্ন করছেন, আগে তাঁরা তার জবাব দিন।