আস্থা স্পেশল ট্রেন। —ফাইল চিত্র।
কয়েকমাস আগে বর্ধমানে এসে বুথ শক্তিশালী করার উপরে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গ-বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, বিহারের প্রাক্তন মন্ত্রী মঙ্গল পাণ্ডে। কিন্তু দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের অনেক বুথ ‘অরক্ষিত’, গঠন হয়নি শক্তিকেন্দ্র প্রমুখ। অনেক জায়গায় জেলা নেতৃত্বের পা-ই পড়েনি। যদিও জেলা নেতৃত্বের দাবি, এখনও যে সব জায়গায় বুথ কমিটি গঠন হয়নি, ওই সব এলাকার বাসিন্দারা গোপনে দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এরই সঙ্গে অযোধ্যাগামী ‘আস্থা ট্রেনের’ ভিড়ে ভরসা রাখছেন নেতৃত্ব।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত লোকসভা নির্বাচনের পরে থেকেই বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্র-রাজ্যের নেতারা বর্ধমানে এসে বুথ শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের চেয়ে প্রার্থী দেওয়া থেকে ভোট পাওয়ার শতাংশেও পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধের’ রাস্তাতেও যেতে দেখা যায়নি বিজেপিকে। তবে সরকারি ভাবে বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছিল, বিধানসভা ভোটের পরে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের’ জন্য দলীয় কর্মীদের ‘সাহস’ জোগাতেই বেশি সময় দিতে হয়েছিল।
যদিও দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের দাবি, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির অন্দরের ‘ফাটলটা’ বেশ বড়। মাঝেমধ্যে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্টার মতো ঘটনা ঘটেছে। সামাজ মাধ্যমেও বিজেপি নেতারা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বলে দলের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে। দলের একটি সূত্রের দাবি, তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে জেলায় এসে ‘কোন্দলকে’ দূরে সরিয়ে রেখে বুথকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মঙ্গল পাণ্ডে। জেলা বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, দুর্গাপুরের দু’টি বিধানসভা, গলসি, মন্তেশ্বর ও ভাতারের কিছু অংশে বুথ ‘শক্তিশালী’ হলেও বাকি এলাকায় দলের কার্যকর্তাদের পা পড়েনি।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে ২,০৩৮টির মধ্যে বুথ গড়া হয়েছে ১,৬৫৭টি (গত বার ছিল ১,৫৫৭টি)। ৩৬টি মণ্ডলে শক্তিকেন্দ্র প্রমুখ ৪৫৪টি। এখানেও সব কেন্দ্র প্রমুখ গড়তে পারেননি নেতৃত্ব। ৬০ জন ভোটার বা ভোটার তালিকায় একটি পৃষ্ঠায় যত জন ভোটার রয়েছেন, তাঁদের নিয়মিত খোঁজ নেওয়ার জন্য ‘পৃষ্ঠা প্রমুখ’ থাকার কথা। কোনও বুথে তা নেই বলে দাবি কর্মীদের। যদিও নেতৃত্বের দাবি, এখনও যে সব জায়গায় বুথ কমিটি গঠন হয়নি, তা মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। তবে সেই সব এলাকার বাসিন্দারা গোপনে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। মন্তেশ্বর বিধানসভায় কয়েকটি গ্রামে প্রকাশ্যেই সংখ্যালঘুরা প্রচার করছেন।
দলের লোকসভাভিত্তিক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি (বর্ধমান-দুর্গাপুর) অভিজিৎ তা-র মন্তব্য, “বুথ কমিটি নেই বলে মানুষ কি বিজেপিকে ভোট দেবে না? গত লোকসভা নির্বাচনেও অনেক বুথে আমাদের কমিটি ছিল না। কিন্তু আমরা জিতেছিলাম। অযোধ্যা ফেরত মানুষজনেরাই আমাদের হয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। তার উপর ভর করেই বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে আরও বেশি ভোটে জিতব।” বিজেপি সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান স্টেশন থেকে গত এক মাসে ১০টি ‘আস্থা ট্রেন’ অযোধ্যা গিয়েছে। তার মধ্যে এই কেন্দ্রে অন্তত ৬০০০ মানুষ ওই ট্রেনে চেপেছেন। বর্ধমান পূর্ব লোকসভারও তিন হাজার মানুষ ওই ট্রেনে অযোধ্যা গিয়েছেন। বিজেপি নেতারা আসন্ন ভোট বৈতরণী পার করতে ‘আস্থা ট্রেনে’ যাতায়াতকারীদের উপরেই ‘আস্থা’ রাখছেন। তৃণমূলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “বাংলার মানুষ এক জনের উপরেই আস্থা রাখেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার বর্ধমান-দুর্গাপুরে আমাদের জয় নিশ্চিত।”