শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
প্রকাশ্য সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহকে মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার ঠিক দু’ঘণ্টার মধ্যে আর একটি সভা থেকে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেন, ভোটের দিন উদয়ন যাতে রাস্তায় বেরোতে না পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
কোচবিহারের দিনহাটার সংহতি ময়দানে শুক্রবার সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। আর নাটাবাড়ির ফুটবল খেলার মাঠে সভা করেন শুভেন্দু। সম্প্রতি এই দিনহাটাতেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের গাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তখন প্রকাশ্য রাস্তাতেই হাতাহাতিতে জড়াতে দেখা যায় উদয়ন ও নিশীথকে। সে ঘটনার কথা সরাসরি উল্লেখ না করলেও এ দিন সংহতি ময়দানে মমতা বলেন, “উদয়নকে আমি একটি কথা বলে যাব। উদয়ন বি কুল। নির্বাচন ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। তোমাকে গন্ডগোলে জড়িয়ে দিয়ে ভোটটা বিএসএফকে দিয়ে করিয়ে নেবে। মাথায় রেখো, ভুলেও সেটা করতে দিও না। মাথা ঠান্ডা রাখুন, শান্তি বজায় রাখুন।”
নাটাবাড়িতে সেই উদয়নকেই আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন, “জাতীয় মানবধিকার কমিশন ১৯ জন গুন্ডার নাম দিয়েছিল হাইকোর্টে। কেষ্ট মণ্ডল ছিলেন। আছেন জেলে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ছিলেন। আপনাদের চাল-গম রেশন চুরি করার অভিযোগে জেলে রয়েছেন। শাহজাহান শেখের নাম শুনেছেন। কিছু দিন আগে সন্দেশখালির প্রসঙ্গে নাম এসেছে। শাহজাহান শেখও জেলে রয়েছেন। এ বার পালা উদয়ন গুহের।” এর পরেই তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন, পুলিশ পর্যবেক্ষককে বলতে চাই, ধমকের সুরে নয়, আবেদনের সুরে। এই গুন্ডাকে মানুষ যেন ভোটের দিন রাস্তায় দেখতে না পায়। তার ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে।”
উদয়ন দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক। তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীও। দিনহাটা উপনির্বাচনে বড় ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন উদয়ন। লোকসভা ভোটেও তৃণমূলের ‘টার্গেট’ দিনহাটা। আবার কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়িও দিনহাটার ভেটাগুড়িতে। নিশীথও দিনহাটায় প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন। ইতিমধ্যেই এক বার দিনহাটার পাঁচ মাথার মোড়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মন্ত্রীকে একে অপরের দিকে তেড়ে যেতে দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবক্ষদের একাংশের মতে, তৃণমূল মনে করছে এই সময়ে উদয়ন গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়লে, তা দলের ক্ষতি করবে। সে কথা মাথায় রেখেই হয়তো দলনেত্রী তাঁকে মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দেন। আবার বিজেপিও মনে করছে, উদয়নকে আটকে রাখার ‘হুমকি’ দিলে, তৃণমূলের মনোবলে ঘা দেওয়া যাবে। সে লক্ষ্যেই আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে বিজেপি। উদয়ন বলেছেন, “বিজেপি অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রী মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি তাঁর পরামর্শ মতোই চলব। আর শুভেন্দু অধিকারী বহু মামলায় অভিযুক্তের হয়ে প্রচার করছেন। তাঁর কথার গুরুত্ব নেই।”