বিজেপির কর্নাটকের সাংসদ অনন্তকুমার হেগড়ে। —ফাইল চিত্র।
ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করতে হলে প্রয়োজন সংবিধানে পরিবর্তন এবং সংবিধানে পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সেই কারণে বিজেপি চারশো আসনের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনে নেমেছে বলে জানালেন বিজেপির কর্নাটকের সাংসদ অনন্তকুমার হেগড়ে। যা দেখে কংগ্রেসের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী ও সঙ্ঘ পরিবার একজোট হয়ে যে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন, বিজেপি সাংসদের ওই বক্তব্যই তার প্রমাণ। স্পষ্টতই অস্বস্তিতে পড়ে হেগড়ের ওই মন্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি’ বলে দায় এড়িয়েছে কর্নাটক বিজেপি। এক্স হ্যান্ডলে দলের তরফে লেখা হয়েছে, ‘দেশের সংবিধান রক্ষায় বিজেপি দায়বদ্ধ। হেগড়ের থেকে এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা তলব করা হচ্ছে।’
পাঁচ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩০৩টি আসন জিতলেও, এ যাত্রায় দলের জন্য ৩৭০ ও এনডিএ জোটের জন্য ৪০০টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ব্যাখ্যায় আজ মুখ খুলেছেন কর্নাটকের উত্তর কানাড়া কেন্দ্রের বিতর্কিত সাংসদ অনন্ত। তিনি বলেন, ‘‘অতীতে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন সংখ্যার জোরে সংবিধানে একাধিক পরিবর্তন করেছিল। যাতে হিন্দু ধর্মের ক্ষতি হয়। আমাদের ধর্মরক্ষায় ওই পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের লোকসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও, রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।’’ হেগড়ের দাবি, চারশো আসন সংবিধান পাল্টাতে সাহায্য করবে। যদিও নিয়মগত ভাবে সেই যুক্তি ঠিক নয়, ফলে পরে নিজের অবস্থান কিছুটা পাল্টে হেগড়ে বলেন, ‘‘লোকসভা, রাজ্যসভা ও দুই-তৃতীয়াংশ রাজ্যে বিজেপির শাসন থাকলে তবেই সংবিধানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে হিন্দুত্বকে সামনে তুলে আনা সম্ভব হবে।’’ সম্প্রতি কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার সংবিধান সচেতনতা সপ্তাহ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রাজ্যের মানুষকে সংবিধানের গুরুত্ব বোঝাতেই ওই উদ্যোগের পাল্টা সংবিধান বদলের ডাক দিয়েছেন হেগড়ে। হিন্দু রাষ্ট্রের কথা বলে পরোক্ষে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের হাওয়া তোলার চেষ্টা করেছেন হেগড়ে।
ওই সাংসদের সমালোচনা করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ বলেন, ‘‘বিজেপির ওই নেতার বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে সংবিধান পরিবর্তনের জন্য চারশো আসন প্রয়োজন। নরেন্দ্র মোদী ও সঙ্ঘ পরিবারের গোপন পরিকল্পনা প্রকাশিত হল। নরেন্দ্র মোদীদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল বাবা সাহেব অম্বেডকরের সংবিধানকে নষ্ট করে দেওয়া। কারণ, বিজেপির লোকেরা ন্যায়, সমতা, নাগরিক অধিকার কিংবা গণতন্ত্র সহ্য করতে পারেন না। ঘৃণা করেন। এঁদের লক্ষ্যই হল সমাজের বিভাজন ঘটানো।...ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চায় এরা। তাই দলিত, জনজাতি, পিছিয়ে থাকা সমাজ এই সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন। ইন্ডিয়া জোট আপনাদের সঙ্গে রয়েছে।’’