Locket Chatterjee

ভোটের প্রচারে নেমে জনতা নয়, মন্দির ঘুরে ঘুরে জয়ের প্রার্থনায় বিজেপির লকেট, কড়া কটাক্ষ তৃণমূলের

ভোটঘোষণার আগেই দেশের ১৯৫টি লোকসভা প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছিল বিজেপি। সেই পর্যায়েই হুগলি লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী হিসাবে পুনরায় মনোনয়ন পান বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

অমিত রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:১৩
Share:

লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

লোকসভা ভোটের প্রচারে বেরিয়ে মূলত মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হুগলির বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

গত এক সপ্তাহে লকেটের সূচি বলছে, গড়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছ’টি মন্দিরে গিয়ে তিনি পুজো দিয়েছেন। হুগলির কোন কোন মন্দিরে তিনি গিয়েছেন, তা-ও দেখা যাচ্ছে তাঁর প্রচারসূচিতে। নিয়মিত পূজা-অর্চনা ছাড়াও লকেট অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন নাম সংকীর্তনের অনুষ্ঠানেও। ৩১ মার্চ লকেট পাঁচটি মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন। ওই দিন ধনেখালির দশঘরা রায়পাড়া কালীমন্দির, বেলেপোতা কালীমন্দির, পূর্বপাড়া কালীমন্দির, বহরমপুর বিশালাক্ষী মন্দির ও তেগেছিয়া সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছিলেন। আবার ২ এপ্রিল বাতিস্তা কালীমন্দির ও মুক্তকেশী কালীমাতার মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। তার পাশাপাশি আরও চারটি মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। ওই দিনই থান এলাকায় রাধাকৃষ্ণের একটি মন্দিরে পুজো দেন লকেট। সঙ্গে পোলবায় একটি হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠানেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন হুগলির বিদায়ী সাংসদ।

ভোটঘোষণার আগেই দেশের ১৯৫টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল বিজেপি। সেই পর্যায়েই হুগলি লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী হিসাবে পুনরায় মনোনয়ন পান বিদায়ী সাংসদ লকেট। তার পর থেকেই প্রচারে নেমে নিজের কেন্দ্রে ‘জনসম্পর্ক অভিযান’ শুরু করেন তিনি। তবে তাতে মন্দির সফর বেশি। যা দেখে তৃণমূলের কটাক্ষ, প্রচারে নেমে আমজনতার কাছে যাওয়ার বদলে এলাকার সব মন্দিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন লকেট। রাজ্যের শাসকদলের বিদ্রুপ, গত পাঁচ বছরে সংসদ সদস্য হিসেবে কোনও কাজ করেননি লকেট। কোভিড সংক্রমণের সময়ও তাঁকে পাশে পাননি হুগলি লোকসভা এলাকার মানুষ। এখন নিশ্চিত হার জেনে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে ভগবানের কাছে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার প্রার্থনা করছেন।

Advertisement

ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র যেমন বলেছেন, ‘‘মানুষের ভোট নিয়ে পাঁচ বছর কাজ না করলে এ ভাবে মন্দিরে মন্দিরেই ঘুরে বেড়াতে হবে। হুগলি লোকসভা এলাকার মানুষ তাঁদের সাংসদকে বিলক্ষণ চিনে গিয়েছেন। তাই তাঁরা এ বার আর লকেটকে ভোট দেবেন না।’’ পাশাপাশিই অসীমা আরও বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে নেমে যে ভাবে ঝড় তুলেছেন, তাতে বিজেপি প্রার্থী নিজের হার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন। সেই হার থেকে বাঁচতেই মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে প্রার্থনা করছেন।’’

ওই আক্রমণের জবাবে লকেট অবশ্য দমে যাননি। তিনি বলেছেন, ‘‘এমনিতেই আমরা প্রচার কার্যক্রমের মধ্যে মন্দিরে যাওয়ার বিষয়টি রাখি। আমি যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই মহিলারা বলছেন, দিদি এক বার মন্দিরে চলুন! সেখানে অনেক মা-বোন আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। আপনি মন্দিরে গিয়ে সকলের মঙ্গলকামনায় পুজো দিন। বাধ্য হয়ে আমাকে যেতে হচ্ছে। আর এতে তো অন্যায়ের কিছু নেই।’’ লকেট আরও বলেন, ‘‘আমার হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি গ্রামে ছোট ছোট মন্দির রয়েছে। সেখানে রয়েছেন স্থানীয় দেবতা। তাঁদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা আছে। তাই মানুষের কাছে যেতে হলে সেই মন্দিরে যেতেই হবে।’’

লকেটের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্য বিজেপির এক নেতাও বলেন, ‘‘পঞ্চম দফায় ২০ মে হুগলি লোকসভায় ভোট। তাই আমজনতার কাছে যাওয়ার জন্য লকেটের কাছে অনেক সময় রয়েছে। ভোটপ্রচারের প্রথম পর্বে প্রার্থীরা জনসম্পর্ক অভিযান করছেন। সেই কর্মসূচিতে এমন সব জায়গায় প্রার্থীরা যাচ্ছেন, যেখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। ভোটের একটি নির্দিষ্ট রণনীতি অনুযায়ীই লকেট মন্দিরে মন্দিরে যাচ্ছেন। বিজেপির কৌশল নিয়ে তৃণমূলের মাথাব্যথার দরকার নেই। ৪ জুন সব অভিযোগের জবাব হুগলির মানুষই দিয়ে দেবেন।’’ ওই নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘রামমন্দিরের উদ্বোধনের বিরোধিতা করে ২২ জানুয়ারি কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তাঁর দলের কাছে যে বিজেপি প্রার্থীর মন্দিরে যাওয়ার বিষয়টি কটাক্ষের বিষয় হবে, তাতে আর আশ্চর্য কী।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement