বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে দিলীপ ঘোষ। ছবি: উদিত সিংহ।
সব বুথে কমিটি নেই। মণ্ডল সভাপতিরাও বুথ কমিটির হিসাবে জল মেশাচ্ছেন কি না, প্রশ্ন তুললেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। বুধবার বর্ধমানে সাংগঠনিক বৈঠক করেন তিনি। সেখানে বলেন, ‘‘বুথই সব। বুথের স্বশক্তিকরণ করেই আমাদের ভোটে যেতে হবে। বুথ কমিটি গঠন ঠিক হয়েছে কি না দেখার জন্য প্রবাসীদের পাঠানো হবে।’’
বিজেপি সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলায় থাকা পাঁচটি বিধানসভার সাংগঠনিক হাল দেখে খুশি নন প্রার্থী। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের পরেও যে সব মণ্ডল ‘নড়বড়ে’ থাকবে, সেখানে নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিনি নিজের ‘টিম’ পাঠাবেন বলেও বৈঠকে জানান। ওই লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা ধরে মণ্ডল সভাপতিদের কাছ থেকে রিপোর্ট নেন। জানা গিয়েছে, সাংগঠনিক ভাবে বর্ধমান দক্ষিণ, বর্ধমান উত্তর, ভাতার ও মন্তেশ্বরের রিপোর্টে সন্তুষ্ট হননি দিলীপ। বৈঠক সেরে কলকাতা যাওয়ার পথে গাড়িতে তিনি বলেন, “বুথ স্বশক্তিকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। তা নিয়েই বৈঠক হল। বুথে বুথে প্রবাসীরা যাবেন। তিন দিন ধরে সেখানে পড়ে থেকে শক্তিশালী, দুর্বল বুথ ধরে রিপোর্ট করবেন। বিহারের নেতারাও বুথে যাবেন।” এ দিনের বৈঠকে জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা, লোকসভার ইনচার্জ কৃষ্ণ ঘোষ, বিধায়ক (দুর্গাপুর পশ্চিম) লক্ষ্মণ ঘড়ুইরা হাজির ছিলেন।
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভায় বিজেপির ৩৬টি মণ্ডল রয়েছে। বুথ রয়েছে ২০৩৮টি। শক্তিকেন্দ্র প্রমুখ রয়েছে ৪৫৪টি। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, সতেরোশোর মতো বুথে ‘খাতায়-কলমে’ কমিটি গঠন হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে ৩০ জন করে থাকার কথা, সেখানে এক থেকে পাঁচ জনও রয়েছেন এক একটি কমিটিতে। দিলীপ এ দিন বৈঠকে বলেন, ‘‘১৫ দিনের মধ্যে শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে হবে। জেলা নেতাদের বুথে গিয়ে পড়ে থাকতে হবে। বুথ কমিটির সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতে হবে।’’ পদ্ম শিবিরের দাবি, ‘খাতায়-কলমে’ থাকা কমিটিকে মাঠে নামাতে চাইছেন প্রার্থী। এরপরে তিনি বুথ কমিটির পদাধিকারীদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, মণ্ডলের কোনও সভাপতি দলের নির্দেশ মেনে নির্বাচনের কাজে নামতে ‘ভয়’ পেলে তাঁর বদলে কমিটি দ্বিতীয় জনকে দায়িত্ব দেবে। তার পরেও বুথ শক্তিশালী না হলে ভোটের হাল ধরবেন প্রার্থীর ‘টিম’।
সব বুথে কমিটি গড়তে গেলে বিজেপির ৬১ হাজারের মতো কর্মীর প্রয়োজন। হাতে সময় মাস দেড়েক। তার মধ্যে কি সব বুথে কমিটি গড়া সম্ভব? দলের এক নেতা বলেন, “আমাদের সব মানুষের ভোট চাই। সংখ্যালঘুরাও আমাদের সঙ্গে থাকবেন। এই বিজেপি ২০১৪ বা ২০১৬ সালের নয়। সে জন্য কয়েকটি বাদ দিলে সব বুথই শক্তিশালী করা সম্ভব। প্রার্থীও সেই বার্তা দিয়েছেন।”
যদিও বিরোধীদের মতে, গত বিধানসভা ভোটে এক তৃতীয়াংশ বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি বিজেপি। বিধানসভা ভোটের পর থেকে জেলায় আড়ে-বহরে তাদের সংগঠনও কমেছে। পঞ্চায়েত ভোটেও বিজেপিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের কটাক্ষ, “বুথ কমিটি গড়ার মতো কর্মীই নেই বিজেপির। ভোটে কী ভাবে লড়বে! এ তো খেলার আগেই হেরে যাওয়া!”