হিমন্ত বিশ্বশর্মা। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে অসমে মুসলিমদের অন্তত ২০ শতাংশ ভোট পাওয়া বিজেপির লক্ষ্য। সোমবার এ কথা বললেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দু’টি দফায় অসমের ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১০টিতে ভোট হয়েছে। আমাদের কাছে খবর, মুসলিম ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশ বিজেপিকে সমর্থন করেছেন। বাকি চারটি আসনেও এই ধারা বজায় থাকবে।’’
লোকসভা ভোটের আগে কয়েকটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, উজান অসমের কেন্দ্রগুলিতে মুসলিম ভোটারদের একাংশ বিজেপিকে সমর্থন করতে চলেছেন। ওই এলাকাগুলিতে মূলত অসমের আদি বাসিন্দা মুসলিমদের বাস। স্থানীয় ভাবে যাঁরা খিলোঞ্জিয়া মুসলিম নামে পরিচিত। হিমন্তের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এবং অসমের বিজেপি সরকার কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বা বিদ্বেষ পোষণ করে না। অসমের মুসলিম ভোটারদের একাংশ তা বুঝতে পেরেছেন।
লোকসভা ভোটের প্রচারপর্বে মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার মতো নেতারা ধারাবাহিক ভাবে ‘মুসলিম তোষণের’ অভিযোগ তুলে নিশানা করছেন কংগ্রেসকে। সেই আবহে হিমন্তের মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। প্রসঙ্গত, গত ২১ এপ্রিল রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ায় বিজেপির সভায় বলেন, ‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অতীতে বলেছিলেন, দেশের সম্পদে সর্বাগ্রে অধিকার মুসলিমদের। সেই কারণেই সমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। যাতে দেশবাসীর কষ্টার্জিত অর্থ মুসলিম ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায়।’’
এর পরে গত ২২ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির উপরে রয়েছে। ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে। কাদের বিলিয়ে দেবে, তা আপনারা জানেন।’’ যদিও মনমোহন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বলেছিলেন, ‘‘দেশের সম্পদে অগ্রাধিকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলির।’’ ২৩ এপ্রিল রাজস্থানেরই টঙ্ক-সওয়াই মাধোপুরে বিজেপির সমাবেশে মোদী বলেছিলেন, ‘‘কংগ্রেস শাসনে হনুমান চালিশা শোনাও অপরাধ।’’
ওই সভাতেই দলিত, জনজাতি এবং অনগ্রসর ভাবাবেগ উস্কে দিতে মোদী বলেছিলেন, ‘‘যখন কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ার দলগুলি ক্ষমতায় ছিল তখন দলিত এবং সমাজে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির সংরক্ষণ কমিয়ে, মুসলিমদের দিতে চেয়েছিল। ভোট ব্যাঙ্কের জন্য তারা সংবিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলিমদের আলাদা সংরক্ষণ দিতে চেষ্টা করেছিল। বাবাসাহেব অম্বেডকর দলিত সমাজের পিছিয়ে থাকা অংশ এবং জনজাতির সংরক্ষণের অধিকার দিয়েছিলেন। কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া মুসলিমদের তা দিতে চায়।’’
সে দিনই শাহ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে বলেন, ‘‘আপনারা দেশে সংবিধানের পরিবর্তে শরিয়তের শাসন চালু করতে চান কি না, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিন।’’ অন্য দিকে, নড্ডা গত ২৬ এপ্রিল মুম্বইয়ে বলেন, ‘‘কংগ্রেস এবং তাদের ‘ইন্ডি’ (‘ইন্ডিয়া) জোটের গোপন উদ্দেশ্য হল তফসিলি জাতি-জনজাতি (এসসি-এসটি) এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) অধিকার কেড়ে নিয়ে তা মুসলিমদের দিয়ে দেওয়া।’’ শনিবার উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘কংগ্রেস চায় সংখ্য়ালঘুদের গোমাংস খাওয়ার অধিকার দিতে।’’