— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
লোকসভা ভোটের আগে মোদী সরকার প্রচারের নতুন অস্ত্র পেয়ে গেল। আমেরিকার ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের একটি রিপোর্ট দাবি করল, ভারত থেকে চরম দারিদ্র প্রায় মুছে গিয়েছে। অর্থনীতিবিদ সুরজিৎ ভল্লা ও করণ ভাসিনের লেখা এই রিপোর্টে মোদী সরকারকেই এর জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত দশ বছরে মোদী সরকার অর্থনৈতিক পুনর্বণ্টনে জোর দেওয়ার ফলে আর্থিক বৃদ্ধির সুফল সকলের কাছে পৌঁছেছে। তার ফলেই ভারতে চরম দারিদ্র প্রায় না থাকার মতো জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। চরম দারিদ্রের হার ২ শতাংশে নেমে এসেছে।
কিছু দিন আগে নীতি আয়োগ দাবি করেছিল, ভারতে চরম দারিদ্রের হার ৫ শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সদ্য প্রকাশিত ২০২২-২৩-এর পারিবারিক কেনাকাটা ও খরচের সমীক্ষাকে হাতিয়ার করে নীতি আয়োগের সিইও বি ভি আর সুব্রহ্মণ্যম বলেছিলেন, দারিদ্রের হার এখন সাড়ে চার থেকে পাঁচ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এ বার মোদী সরকার ব্রুকিংসের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে সেই প্রচারই আরও জোরদার করতে চলেছে। ব্রুকিংসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১১-১২ সালের পারিবারিক কেনাকাটা ও খরচ সমীক্ষায় দারিদ্রের হার ১২.২ শতাংশ ছিল। ২০২২-২৩-এ সেটা ২ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্রামে দারিদ্রের হার ২.৫ শতাংশ। শহরে ১ শতাংশ।
কংগ্রেস অবশ্য দাবি করছে, এই রিপোর্টের সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। মোদী সরকার নিজেই ৮১ কোটি গরিব মানুষকে বিনামূল্যে রেশন বিলি করছে। নীতি আয়োগের দাবি মতো দারিদ্রের হার ৫ শতাংশ হলে গরিবের সংখ্যা মাত্র ৭ কোটি হওয়া উচিত। কংগ্রেসের দাবি, বাস্তবটা হল, মোদী সরকারের ‘অন্যায় কালে’ দেশের ১ শতাংশ ধনীতম মানুষের হাতে ৪০ শতাংশ সম্পদ রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশও অবশ্য ব্রুকিংস রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ২০১১-১২ সালে সুরেশ তেণ্ডুলকরের কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী যোজনা কমিশন দারিদ্রসীমা ঠিক করেছিল। গ্রামে দিনে ২৭ টাকা খরচের ক্ষমতা ও শহরে ৩৩ টাকা খরচের ক্ষমতা না থাকলে কাউকে গরিব বলা হত। প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেনের মতে, তার সঙ্গে ২০২২-২৩-এর সমীক্ষার তুলনা করা যায় না। কারণ অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে, এখন কত টাকা খরচের ক্ষমতা থাকলে তাকে দরিদ্র বলা যাবে না, সেই মাপকাঠি স্থিরীকৃত নয়। সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির দিকটাও ভাবতে হবে। কংগ্রেসের অভিযোগ, সরকারের সমীক্ষা রিপোর্টেই বলা হয়েছে, গরিবতম ৫ শতাংশ মানুষ দিনে মাত্র ৪৬ টাকা খরচ করছেন। আজকের দিনে তাতে পেট চলে কি? সরকার তো নিজেই মানছে, গ্রামের ধনীতম ৫ শতাংশ মানুষ গরিবতম ৫ শতাংশ মানুষের তুলনায় আট গুণ বেশি খরচ করছেন। শহরের ধনীরা গরিবদের তুলনায় দশ গুণ বেশি খরচ করছেন। এই সবই আর্থিক অসাম্যের নমুনা।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লিখেছেন, ইউপিএ সরকারের আমলে ভারতের অর্থনীতি যে গতিতে ছুটছিল, নরেন্দ্র মোদী তার সামনে ‘স্পিড ব্রেকার’ হয়ে গিয়েছেন। যতই মিথ্যে প্রচার হোক, অর্থনীতির মাপকাঠিতে বিজেপি সরকার কংগ্রেস সরকারের আশেপাশেও নেই। পরিসংখ্যান নিজেই তার সাক্ষ্য দিচ্ছে।