এ বার কি মুখোমুখি ময়দানে? অর্জুন সিংহ (বাঁ দিকে) এবং পার্থ ভৌমিক। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলে তাঁর প্রয়োজনিয়তা ফুরিয়েছে, সেই জন্য তাঁকে ‘ছুড়ে ফেলা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করলেন অর্জুন সিংহ। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই তাঁর দফতর থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরানো হয়েছে। ব্যারাকপুরের সাংসদকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল তবে কি তৃণমূল ছাড়ছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দলে এখন আমি অবাঞ্ছিত (আনওয়ান্টেড)। আমার কোনও চাহিদা ছিল না। কিন্তু আমার দেড় বছর নষ্ট করা হল।’’ সঙ্গে জুড়ে দিলেন, ‘‘কিছু দিনের মধ্যেই জানতে পারবেন আমি আছি, না নেই। আমার ‘ডেথ ওয়ারেন্ট’-এ সই করে দেওয়া হয়েছে। মানুষকে আমাকে বোঝাতে হবে আমি কোনও ভুল করিনি। ’’
লোকসভা ভোটে দলের টিকিট না পেয়ে এর আগেও ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ অর্জুন সিংহ। টিভি সাক্ষাৎকারে আবার উগরে দিলেন ক্ষোভ। সোমবারই অর্জুন বলেছিলেন, তাঁকে ফোন করেছিলেন ফিরহাদ হাকিম। মঙ্গলবার বললেন, ‘‘আমাকে ফিরহাদ ফোন করে আবার একটা ললিপপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।’’ ‘ললিপপ’ কী? অর্জুন- ঘনিষ্ঠদের ব্যাখ্যা, অর্জুন বরাহনগর আসন থেকে বিধায়ক হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ওই আসনের বিধায়ক তাপস রায় ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। অর্জুনকে ওই আসন থেকে জিতিয়ে রাজ্যে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হতে পারে বলেও নাকি প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে অর্জুন ব্যারাকপুরের মাটি ছাড়তে চান না বলেই আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ফিরহাদের তরফে অর্জুনকে দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকের মতেই প্রস্তাবটি ‘সম্মানজনক’। অর্জুনের তা বিবেচনা করা উচিত। আবার অনেকেই বলছেন, অর্জুনের কাছে দলের ‘সন্ধিপ্রস্তাব’ দেওয়া ঠিক হবে না। এক নেতার কথায়, ‘‘ব্যারাকপুর এমনিতেই আমাদের হারা আসন। কিন্তু ব্যারাকপুর জিততে গিয়ে অর্জুনের সঙ্গে দল কেন সমঝোতা করবে? বরং, অর্জুনকে টিকিট না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভাল। তাতে নিচুতলায় বার্তা যাবে যে, দল আপস করছে না।’’ তবে অর্জুন এ বিষয়ে নিজে কিছু বলেননি। মঙ্গলবারও ‘ফিরহাদের ললিপপ’ আসলে কী, তার ব্যাখ্যা করেননি তিনি। তবে অর্জুন বলেছেন, ‘‘যেটা ছিল সেটাই দেওয়া হল না, আবার অন্য কিছু নিয়ে কী করব।’’
ব্যারাকপুর বরাবরই অর্জুনের ‘পাখির চোখ’। মঙ্গলবার সকালেও সমাজমাধ্যমে ‘হৃদয়জুড়ে ব্যারাকপুর’ শীর্ষক একটি পোস্ট করেন তিনি। এই ব্যারাকপুরে গত লোকসভায় তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অর্জুন। জিতেওছিলেন। পরে যদিও আবার তৃণমূলেই ফেরেন তিনি। এ বারেও ব্যারাকপুরে তাঁকে টিকিট দেয়নি দল। বদলে নৈহাটির বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ব্যারাকপুর লোকসভা আসনের টিকিট পেয়েছেন। রবিবার ব্রিগেডে এই ঘোষণার পরই দলের বিরুদ্ধে বেসুরো হয়েছিলেন অর্জুন। দল তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মঙ্গলবারও অর্জুন বলেছেন, ‘‘আমি এখানে কিছু পাওয়ার জন্য আসেনি। আমি ব্যারাকপুরের মানুষের সেবা করার জন্য এসেছি। ব্যারাকপুরের একটা মানুষ বলতে পারবেন না, তাঁদের জন্য যা করার ছিল, তা আমি করিনি। বা কোনও খারাপ কাজ করেছি। কোনও রাজনৈতিক নেতা বলতে পারবেন না, তার বিরুদ্ধে আমি চক্রান্ত করেছি। কাউকে অসম্মান করেছি, কারও বিরুদ্ধে কথা বলেছি। ব্যারাকপুরে যখন আমি জনপ্রতিনিধি হয়েছি, তার পর থেকে আমি মানুষের প্রতিনিধি ছিলাম। কোনও পার্টির লোক ছিলাম না। কিন্তু আমার সঙ্গে ঠিক ব্যবহার করা হল না। দেড় বছর আগে আমাকে যা বলে আনা হয়েছিল, তা পালন করা হয়নি। তাই আমার ভরসা ভেঙে গিয়েছে।’’ অর্জুনের এই বক্তব্য শোনার পর স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তবে কি তিনি আবার বিজেপিতেই ফিরছেন?
জানতে চাওয়া হয়, তবে কি ব্যারাকপুরে পার্থ বনাম অর্জুনের লড়াই দেখা যাবে? উত্তরে অর্জুনের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘তাই তো হওয়া উচিত।’’ প্রসঙ্গত, পার্থ হলেন অর্জুনের বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নেতা। যদিও মঙ্গলবার পার্থকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অর্জুন বলেছেন, ‘‘পার্থ আমার ভাল বন্ধু। বিশ্বের সর্বত্রই কোথাও না কোথাও কোনও না কোনও বন্ধুদের মধ্যে লড়াই হয়। তবে মোদীজি বলেছেন, কারও সঙ্গেই সম্পর্ক খারাপ করা উচিত নয়।’’
মঙ্গবারই বিজেপি লোকসভা ভোটের দ্বিতীয় প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করতে চলেছে। তার আগেই অর্জুনের নিজের অফিস থেকে তৃণমূলনেত্রীর ছবি সরিয়ে দিয়েছেন অর্জুন। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তবে কি শীঘ্রই তাঁর নাম ব্যারাকপুরের লোকসভা প্রার্থী হিসাবে শোনা যাবে? মঙ্গলবারই কি প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা করবে বিজেপি? জবাবে অর্জুন বলেন, ‘‘সে তো সময় হলেই জানতে পারবেন। তবে খুব বেশি দেরি নেই।’’