অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন সময়ে তৃণমূলের রাজ্যস্তরের নেতারা নানুরের পাপুড়িতে পা রেখেছেন। কিন্তু তৃণমূলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পাপুড়ি তো বটেই, নানুর ব্লকেই কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে করেননি। আগামী ৩ মে এই প্রথম নির্বাচনী জনসভা করতে পাপুড়িতে আসছেন অভিষেক। যেখানে বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা, জেলা সভাধিপতি কাজল শেখের বাড়ি সেই পাপুড়িতেই অভিষেকের সভা নিয়ে জোর চর্চা চলছে তৃণমূলে।
পাপুড়িতেই বাড়ি কাজলের। তাঁর ভাই শেখ সাহানেওয়াজ কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক। এক সময় বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কাজলের গোষ্ঠীবিবাদ দলে সুবিদিত ছিল।
তৃণমূল সূত্রে দাবি, অনুব্রত ‘স্বমহিমায়’ থাকাকালীন দলে কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয়েছিল কাজলকে। গরুপাচার মামলায় অনুব্রত জেলে যাওয়ার পর সমীকরণটা বদলাতে শুরু করে। সেই সময়েই কাজলের সঙ্গে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ, নানুরের আর এক তৃণমূল নেতা আব্দুল কেরিম খানের বিবাদ মাথাচাড়া দেয়।
তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় এসে কেরিম নিয়ে নানা অভিযোগ অভিষেকের কানে ওঠে। সেই সময়েই কেরিমের বিকল্প হিসেবে কাজলের নাম উঠে আসে বলে দলের অন্দরের খবর। জেলা সফরে এসে তৃণমূলনেত্রী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কাজলকে জেলা কোর কমিটির সদস্য মনোনীত করে যান। এমনকি কেরিমের জেলা পরিষদের আসনে কাজলকে প্রার্থীপদ দিয়ে জেলা সভাধিপতিও করা হয় বলে দলের একাংশের অভিমত।
প্রথম নির্বাচনে জিতে কাজলের সভাধিপতি হওয়াটা অনুব্রত অনুগামী জেলা নেতারা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি বলে দাবি তৃণমূলের অনেকের। তাঁদের সঙ্গে ‘ঠান্ডা লড়াই’ শুরু হয়ে যায় কাজলের। তৃণমূল সূত্রে দাবি, প্রশাসনের একাংশের সঙ্গেও তাঁর ‘সংঘাত’ তৈরি হয়। দলের অনেকের দাবি, তার জেরেই নিজের বাড়িতে দলের বৈঠকে মমতা কাজলকে ভর্ৎসনা করে কোর কমিটি থেকে ছেঁটে দেওয়ার সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক গতিবিধি নির্ধারণ করে দেন। তাতে অনুব্রত অনুগামী নেতারা ফের উল্লসিত হন বলেও তৃণমূল সূত্রে দাবি।
সম্প্রতি নির্বাচনী প্রচারে এসে অবশ্য মমতা ফের তাঁকে কোর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে দিয়ে যান। তার ঠিক পরেই অভিষেক নানুরের মাটিতে এই প্রথম সভা করতে চলেছেন। সেই সভাও কাজলের নিজের গ্রামে হওয়ায় জেলা তৃণমূলে কাজলের গুরুত্ব নিয়ে ফের চর্চা চলছে। ক’দিন আগেই খয়রাশোলে নির্বাচনী সভা করতে এসেছিলেন অভিষেক। সেখানে কাজলকেই সর্বাগ্রে ফুলের তোড়া হাতে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। এ বারে নানুরের মাটিতে অভিষেকের প্রথম সভা পাপুড়িতেই কেন সেই প্রশ্নের উত্তরে কাজল বলেন, ‘‘সেটা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলতে পারবেন। তাঁর কাছেই জেনে নিন।’’
বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের আর সভা করার মতো জায়গা নেই। সভাধিপতিকে তাই নিজের ঘরে সভা করতে হচ্ছে।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য অবশ্য জানিয়েছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নানুরে সভা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘হেলিপ্যাড তৈরি, গাড়ি পার্কিং-সহ ৫০ হাজার লোক ধারণের উপযুক্ত বলে আমরা সভা করার জন্য পাপুড়ি আল আমিন মিশন মাঠের নাম সুপারিশ করেছিলাম।’’