প্রচারে যাওয়ার হেলিকপ্টারে আচমকা আয়কর হানা ও সংস্থার আধিকারিকদের আচরণের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, তল্লাশি চালানোর পরেও ‘ট্রায়াল রানে’ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আয়কর কর্তারা। শুধু তা-ই নয়, কপ্টারে উঠতেও বাধা দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
সোমবার হলদিয়ায় অভিষেকের কর্মসূচি ছিল। সেখানে যাওয়ার জন্যই রবিবার বেহালা ফ্লাইং ক্লাবে হেলিকপ্টারটির ট্রায়াল রানের কথা ছিল। সেই সময় আয়কর হানা হয়। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতেই সোমবার হলদিয়ায় অভিষেক বলেন, ‘‘হেলিকপ্টার থেকে তো এক পয়সাও উদ্ধার করতে পারেনি। উল্টে তল্লাশি চালানোর পরেও কপ্টারে উঠতে দিচ্ছিল না। ট্রায়াল রানই করতে দিচ্ছিল না!’’ প্রসঙ্গত, সোমবার ভোটপ্রচারে হলদিয়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে অভিষেকের কপ্টার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ফ্লাইং স্কোয়াডের তিন সদস্য। আয়কর হানার পর ওই ঘটনা নিয়েও শোরগোল পড়েছিল। যদিও কমিশন সূত্রে খবর, ওই পরিদর্শন একেবারেই রুটিন বিষয় ছিল।
ভোটের প্রচারের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া নিয়ে থাকেন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেকের কপ্টারটিও দলের ভাড়া করা। দুপুরে ‘ট্রায়াল’ শুরু হওয়ার আগে সেখানে আয়কর আধিকারিকদের একটি দল হানা দেয়। চপারটি সম্পর্কে খোঁজখবর করে তাঁরা তল্লাশি শুরু করেন। তৃণমূলের দাবি, চপারের প্রায় সর্বত্র খুঁটিয়ে দেখেও আয়কর দফতরের অফিসারেরা আপত্তি করার মতো কিছু মতো পাননি। তার পরে চপারে থাকা ব্যাগ খুলে দেখেন তাঁরা। সেখানেও কিছু মেলেনি। এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তুলে এক্স হ্যান্ডলে অভিষেক বলেছেন, ‘‘জমিদারেরা সব শক্তি ব্যবহার করেও বাংলার প্রতিরোধ ডিঙিয়ে যেতে পারবে না!’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই তল্লাশির সময়ে অভিষেকের নিরাপত্তারক্ষীরাও ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন চপারের সামনে। এক সময়ে তাঁরা আয়কর তল্লাশির ভিডিয়ো রেকর্ড করতে গেলে কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকেরা আপত্তি করেন। এবং এই নিয়ে বেশ কিছু সময় দু’পক্ষের বিতণ্ডাও হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে আয়কর আধিকারিকদের কেউ কেউ খারাপ ব্যবহারও করেন। জোর করেই তাঁরা ফোনে অভিষেকের নিরাপত্তারক্ষীদের তোলা ভিডিয়ো মুছে দেন। দু’পক্ষের বচসায় দীর্ঘ ক্ষণ ‘ট্রায়াল রান’ আটকে যায়।
বিরোধীদের দমন করতে কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগে লাগাতার সরব রয়েছে তৃণমূল। কপ্টারের ঘটনার পরে অভিষেকের কটাক্ষ, ‘‘এনআইএ-র ডিজি, এসপি-কে সরানোর বদলে আয়কর দফতরের আজ্ঞাবহদের আমার চপারে তল্লাশিতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কিছু পাননি!’’ আয়কর দফতরের হানাকে তৃণমূল-বিরোধী চক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করে রবিবার নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। দলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আয়কর দফতরের দুই ইনস্পেক্টরের নাম জানিয়ে কমিশনকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তৃণমূলকে পাল্টা বিঁধেছে বিজেপিও। জলপাইগুড়িতে বিজেপি নেতার গাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘উনি (অভিষেক) কি আইনের বাইরে? কালও এক বিজেপি নেত্রীর থেকে তল্লাশি চালিয়ে এক লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা তো থাকতেই পারে।’’