অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
অর্ডিন্যান্স এনে কেন কুড়মি সম্প্রদায়কে জনজাতিভুক্ত করছে না কেন্দ্র? মঙ্গলবার ঝালদার তুলিন ইউনাইটেড মাঠে পুরুলিয়ার প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর সমর্থনে এসে এই প্রশ্নই ছুড়লেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বিজেপির সংকল্পপত্রে থাকা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রসঙ্গ তুলে দাবি করলেন, তা চালু হলে জল, জঙ্গল জমির অধিকার হারাবে আদিবাসী সম্প্রদায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়ায় এই দুই বিষয় তুলে ধরে একযোগে কৌশলে কুড়মি ও আদিবাসীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করলেন অভিষক।
পুরুলিয়া জেলায় কুড়মি ভোট-ব্যাঙ্ক সব দলেরই অন্যতম লক্ষ্য। এ বার আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়ানোয় কুড়মি-ভোট ভাগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে নবজোয়ার কর্মসূচিতে এসে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় আদিবাসী কুড়মি সমাজের বিক্ষোভের মুখে পড়েন অভিষেক। সে সময় মেজাজ হারিয়ে কুড়মিরা কি তৃণমূলকে ভোট দেন, এই প্রশ্ন তুলতে শোনা যায় তাঁকে। এ দিন কার্যত কুড়মিদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
এ দিন বক্তব্যের গোড়াতেই বিজেপিকে কুড়মি ও আদিবাসী বিরোধী তকমা দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘এই নির্বাচন আদিবাসী, কুড়মি বিরোধীদের যোগ্য জবাব দেওয়ার নির্বাচন।” দাবি করেন, ২০১৯ সালের আগে প্রধানমন্ত্রী পুরুলিয়ায় সভা করতে এসে বলেছিলেন, কুড়মি ভাইদের জাতিসত্তার আন্দোলনকে অগ্রাধিকার দেবেন। কিন্তু পাঁচ বছর হয়ে গেল।”
অন্য দিকে, পুরুলিয়াতে এসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করে আসছেন, ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার কুড়মি সম্প্রদায়কে জনজাতি করতে চেয়ে রাজ্যের কাছে দশবার ফারদার জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট চেয়েছে। কিন্তু রাজ্য সেই রিপোর্ট দেয়নি। এ দিন তার প্রত্যুত্তরে অভিষেক বলেন, ‘‘এক মিনিটে অর্ডিন্যান্স এনে তোমরা ইডির (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) মেয়াদ বাড়াতে পার। তাহলে অর্ডিন্যান্স এনে এটা তোমরা করতে পারছ না কেন? আসলে তোমরা এটা চাওনা।”
বিদায়ী সাংসদ তথা পুরুলিয়ার বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময়ের পাল্টা দাবি, ‘‘কুড়মি সম্প্রদায়ের দাবি নিয়ে সংসদে আমি কী বলেছি, সেটা জানতে হলে তো সংসদে থাকতে হবে। উনি (অভিষেক) তো সংসদেই যান না।”
কুড়মি ভোট ভাগাভাগি হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পুরুলিয়ায় জিততে ১৮ শতাংশ আদিবাসী ভোটও লক্ষ্য দলগুলির। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সে লক্ষ্যেই অভিষেক বিজেপির সংকল্পপত্রের অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রসঙ্গ টানেন। বলেন, ‘‘এই বিধি বিজেপি চালু করলে আদিবাসী, কুড়মি, ভূমিজ, তফসিলি জাতিদের নিজস্ব অধিকার বলে কিছু থাকবে না।’’ জ্যোতির্ময়ের দাবি, ‘‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কে কী বলছেন, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই সমস্ত সমাজের সুখের কথা চিন্তা করেন।’’
রবিবার মানবাজারে অজিতপ্রসাদ মাহাতো ও বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর বিরুদ্ধে কিছুটা ব্যক্তিগত আক্রমণ করেই শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, তাঁরা ভোটে কেটে তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতেই প্রার্থী হয়েছেন। এ দিন অবশ্য সবার ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার আছে জানিয়ে অজিত ও নেপালের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিষেক। পুরুলিয়ার উন্নয়ন নিয়ে বিজেপি ১০ বছরে কী করেছে, তা নিয়ে জ্যোতির্ময়কে রিপোর্ট কার্ড প্রকাশের চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন অভিষেক।