অসুস্থ কুণাল ঘোষকে এসএসকেএম-এ ভর্তি করানো হবে কি না, শনিবার দিনভর তা নিয়ে টানাপড়েন চলল নবান্ন, প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, টানা প্রায় ২২ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়ায় এ দিন সকালে কুণালকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন জেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। এমনকী, তাঁকে গাড়িতে তোলার জন্য জেলের গেট পর্যন্তও আনা হয়। কিন্তু নবান্ন থেকে একটি ফোন পেয়ে সে চেষ্টায় খান্ত হন জেল কর্তৃপক্ষ।
জেলের এক মুখপাত্র জানান, ফোনটি এসেছিল মুখ্যসচিবের অফিস থেকে। বলা হয়, কুণালকে যেন এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা না হয়। পুলিশ ভ্যান বা অ্যাম্বুল্যান্সে যাতায়াতের পথে সাংবাদিকদের সামনে সরকার-বিরোধী বক্তব্য পেশ করতে পারেন কুণাল এই আশঙ্কায় নবান্নের কর্তারা জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন, দরকার হলে এসএসকেএমের চিকিৎসকদের জেল হাসপাতালে পাঠিয়ে তাঁকে পরীক্ষা করা হোক। শেষ পর্যন্ত তাই হয়। বিকেলে এসএসকেএম থেকে চিকিৎসকেরা গিয়ে তাঁকে দেখে আসেন। অভিযোগ, ডাক্তারদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সহযোগিতা করেননি কুণাল। চিকিৎসকেরা অবশ্য কুণালের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন।
সম্প্রতি জেলে অনশন শুরু করেছিলেন সারদা-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূলের এই সাসপেন্ডেড সাংসদ। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর সাংসদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় জেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। জেল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও তিনি কিছু খাননি। কারা-কর্তারা বারবার তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও সাড়া দেননি ওই সাংসদ। জল অত্যন্ত কম খান তিনি। ফলে তাঁর প্রস্রাব আটকে যায়। প্রায় ২১-২২ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়ায় রক্তচাপ কমে হয় ১০৮/৮০। চিকিৎসকেরা জানান, বেশ কিছু দিন তিনি অনিদ্রা ও মানসিক চাপে ভুগছেন। ফলে সব মিলিয়ে তাঁর অবস্থা খারাপ হতে থাকে।
এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র জানান, বেলা ১১টা নাগাদ পুলিশের তরফে ফোন করে তাঁকে বলা হয়, কুণালকে ভর্তি করার জন্য আনা হচ্ছে। তাঁর জন্য আলাদা কেবিনের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু সাড়ে ১২টা নাগাদ আবার ফোন করে পুলিশ জানায়, কুণাল আসছেন না। তার পরেই জেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ফোন করে এসএসকেএমের চিকিৎসকদের দেখে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রদীপ মিত্রের কথায়, “বন্দি সাংসদ আগে এসএসকেএমে ভর্তি থাকাকালীন মেডিক্যাল বোর্ডের যে ডাক্তাররা তাঁকে দেখেছিলেন, তাঁদেরই পাঠানোর জন্য জেল হাসপাতাল থেকে অনুরোধ এসেছিল। কিন্তু এ দিন দুপুরে তাঁদের কেউ ছিলেন না। কেউ কেউ কলকাতাতেই নেই। ফলে আইটিইউ-র ইনচার্জ রজত চৌধুরী এবং কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারকে সাড়ে চারটে নাগাদ জেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সাড়ে ছ’টা নাগাদ মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার নির্মলেন্দু সরকার গিয়ে কুণালবাবুকে দেখে আসেন।”
কেমন আছেন কুণাল?
জেল হাসপাতালের কয়েক জন চিকিৎসক রাতে জানান, সকালের তুলনায় তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। প্রস্রাবও হয়েছে।
এসএসকেএমে বেশ কিছু দিন ধরে ভর্তি রয়েছেন সারদা কাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের আর এক সাংসদ সৃঞ্জয় বসু। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শনিবার তাঁর শিরদাঁড়া ও ঘাড়ে ব্যথা বাড়ে। মাথা ঘুরছে বলেও জানান তিনি। বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি-তে তাঁর এমআরআই করানো হয়েছে।
—ফাইল চিত্র।