রাজ্যসভায় বিক্ষোভ বিরোধীদের। ছবি: পিটিআই।
মদন মিত্রের গ্রেফতারির পরে কোণঠাসা তৃণমূল এ বার সংসদে পাল্টা আক্রমণের পথে গেল।
সারদা কাণ্ড নিয়ে দলের লড়াইকে দিল্লির পথে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই নিয়েছেন। সেইমতো সোমবার তৃণমূল সাংসদেরা সংসদের ভিতরে-বাইরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আক্রমণ শাণালো তৃণমূল। এ দিন মদন মিত্রের গ্রেফতারির তীব্র বিরোধিতা করে তৃণমূল সাংসদরা তাঁকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করেন।
এ দিন লোকসভার অধিবেশন শুরু হতেই সারদা কাণ্ডে সিবিআইকে অপব্যবহার করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে সোচ্চার হন তৃণমূলের সাংসদরা। ওয়েলে নেমে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। অমিত শাহের নাম না করেই তাঁদের অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সভাপতির ‘অঙ্গুলিহেলনে’ সারদা কাণ্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাজ করছে সিবিআই। তাঁদের আরও অভিযোগ, বিজেপি যখন বিরোধী আসনে ছিল তখন ব্যঙ্গ করে তারা সিবিআই-এর নাম দিয়েছিল ‘কংগ্রেস ব্যুরো অব ইনভস্টিগেশন’। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টও সিবিআইকে ‘খাঁচার তোতাপাখি’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “সিবিআইকে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত নয়। লোকপালের অধীনে রাখা উচিত সংস্থাটিকে। তৃণমূল সাংসদদের হইহট্টগোলের মধ্যে সংসদবিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তৃণমূল সাংসদদের পাল্টা আক্রমণ করে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার ইউপিএ সরকারের মতো সিবিআইয়ের অপপ্রয়োগ করছে না। বরং তৃণমূলের উচিত অপরাধীদের পাশে না থাকা, এতে তাদেরই ক্ষতি হবে।” এ দিন বার বার বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল ও বিজেপির সাংসদরা। তার পরই তৃণমূল সদস্যরা সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন।
সারদা নিয়ে ক্রমাগত কোণঠাসা হয়ে শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই কালো টাকা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল তৃণমূল । সংসদের ভিতরেই অভিনব কায়দায় কালো ছাতা নিয়ে প্রতীকী বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সাংসদরা। সেই থেকেই শুরু। তার পর থেকে সংসদের বাইরে যখনই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা, প্রতীক হিসাবে কখনও বেছে নিয়েছেন কালো কাপড়, কখনও কালো চাদর, কখনও বা সহারা কেলেঙ্কারির বিষয়টি তুলে ধরতে লাল ডায়েরি। এ দিনও কালো চাদর গায়ে দিয়ে সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
মদন মিত্রের গ্রেফতারির পরেই এর প্রতিবাদে শনিবার গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে মঞ্চ বেঁধে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে তৃণমূল। সেই মঞ্চে হাজির ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। সহারা কর্তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একটি ছবি দেখিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, মোদীকে গ্রেফতার করতে হবে। রাজ্যের সর্বত্র দলীয় কর্মীদের সেই ছবি নিয়ে প্রতিবাদে নামার ডাক দেন। নেত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলীয় কর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রেল-সড়ক অবরোধ করেন। এ বার সেই ‘প্রতিবাদী আন্দোলন’-এর আঁচ মমতা সরাসরি পৌঁছে দিলেন একেবারে সংসদের ভিতরে। তাঁর কথামতো নির্দেশ পালন করলেন তৃণমূল সাংসদরা। মদন মিত্রের পাশে দাঁড়িয়েই কেন্দ্র ও সিবিআইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন।
মধ্যাহ্নভোজের আগেই এ দিন তিন বার মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভার অধিবেশন। সারদা থেকে ধর্মান্তকরণ বিষয়ে উত্তাল হয়ে কক্ষ। ক্রিসমাসের দিন সরকারি স্কুলগুলিতে ‘গুড গভর্ন্যান্স ডে’ পালনে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বিরোধী দলগুলি।