নিজেদের সামরিক নীতিতে বড়সড় পরিবর্তন আনল জাপান। এ বার থেকে অন্য দেশকে সাহায্যের জন্যও জাপান সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারবে। বুধবার এই প্রস্তাব জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ক্যাবিনেটে পাশ হয়েছে। এই নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মসমর্পণের পরে মার্কিন মধ্যস্থতায় জাপানের নতুন সংবিধান রচনা হয়। সেখানে সামরিক শক্তি ব্যবহারের সুযোগ খুবই সীমিত করে দেওয়া হয়। ৬৭ বছর ধরে জাপান এই সংবিধানই মেনে এসেছে। শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পরেই এ ব্যাপারে পরিবর্তন আনার চেষ্টা শুরু করেন। কারণ, তাঁর মতে, এর মধ্যে বিশ্বের পরিস্থিতির বিপুল পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে এশিয়া তথা বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তি হিসেবে চিনের উত্থান হয়েছে। দ্বীপের অধিকার থেকে শুরু করে মহাসাগরে নিজেদের অধিকার— নানা বিষয়েই চিনের গা-জোয়ারি জাপানি প্রশাসনের চিন্তার কারণ হয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে উত্তর-কোরিয়ার আচরণ। সামরিক ভাবে জাপানকে নানা উপায়ে আঘাত করা বা ভীতিপ্রদর্শনের বিবিধ চেষ্টা চালিয়েছেন উত্তর-কোরিয়ার কমিউনিস্ট শাসকেরা। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ গত রবিবার উত্তর-কোরিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমেরিকা জাপানের পাশে দাঁড়ালেও এ বার নিজেদের শক্তি বাড়াতে জাপান উদ্যোগী হবে।
১৯৪৭-এর সংবিধানে জাপানের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অধিকারকে অস্বীকার করার পাশাপাশি জাপানের কোনও সামরিক ক্ষমতা না রাখার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫০-এর কোরিয়া যুদ্ধের সময়ে জাপানে পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়। ১৯৫৪-য় সেই বাহিনী থেকেই জাপানি সেনা গঠন করা হয়। আবের আনা পরিবর্তন এ বার সেই সেনার বৃহত্তর ভূমিকা পালনের পথ খুলে দিল। এ বার অন্য কোনও দেশকে সাহায্য করতে জাপানের সামরিক শক্তি ব্যবহার করা যাবে বলে আবে জানান। একেই বলা হচ্ছে ‘কালেক্টিভ সেল্ফ-ডিফেন্স’। যেমন, জাপানের নিরাপত্তায় নিযুক্ত মার্কিন নৌবাহিনী কোনও কারণে আক্রান্ত হলে এ বার জাপানের নৌবাহিনী এগিয়ে যেতে পারবে বলে তিনি জানান।
ক্ষমতায় আসার পরে লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক প্রধানমন্ত্রী আবে-র অন্যতম স্বপ্ন ছিল জাপানকে সামরিক ভাবে স্বাবলম্বী করা। এ পথে তাঁর নানা আচরণ দেশে-বিদেশে প্রবল ভাবে সমালোচিত হয়েছে। যেমন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাপানি সেনার স্মৃতিসৌধে আবে-র যাওয়া নিয়ে চিন ও কোরিয়া প্রবল আপত্তি করেছিল। এ বারেও আপত্তি উঠেছে। যেমন, চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা এই নীতি পরিবর্তনকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে। এই নতুন নীতি এশিয়ার সামরিক ভারসাম্য নষ্ট করবে বলেও জানান হয়েছে। যদিও মার্কিন প্রশাসন একে স্বাগত জানিয়েছে।
পরিবর্তনের স্বপক্ষে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবে জানান, জাপানিদের সুরক্ষার জন্যই এই নতুন নীতি। সংবিধানের শান্তির পথ থেকে জাপান সরবে না বলেও তিনি জানান। কোন কোন ক্ষেত্রে জাপান ‘কালেক্টিভ সেল্ফ-ডিফেন্স’-এর ব্যবহার করবে তা-ও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভুল আর করবে না বলেও তিনি আশ্বাস দেন। কিন্তু সমালোচকদের আশঙ্কা, এই পরিবর্তনের সুযোগে আমেরিকার মতো বন্ধু দেশকে সাহায্য করতে জাপান সেনা পাঠাতে পারে। অংশ নিতে পারে যৌথ মহড়ায়।
আবের এই নীতি তাঁর দেশেও প্রবল সমালোচনা মুখে পড়েছে। বুধবার আবের অফিসের সামনে প্রায় ২০০০ বিক্ষোভকারী জমা হন। তাঁরা এই ধরনের নীতি পরিবর্তনের জন্য গণভোটের দাবি তোলেন। প্রতিবাদে মঙ্গলবার শিনজুকুতে এক বিক্ষোভকারী গায়ে আগুন দেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতেও এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।