সৃঞ্জয়ের দায় ঝেড়ে ফেলে পরম্পরা বজায় মমতার

বাদ গেলেন না টুম্পাই-ও! কুণাল ঘোষের মতো রাজ্যসভায় আর এক দলীয় সাংসদ সৃঞ্জয় বসুর নাম না করেও তাঁর নামে ‘বাইরের লোক’ তকমা দেগে দিলেন খোদ দলনেত্রী। সারদা কেলেঙ্কারিতে শুক্রবার তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ এবং দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক সৃঞ্জয় বসু গ্রেফতার হওয়ার পর শনিবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ওই দিন দলীয় কর্মিসভায় সৃঞ্জয়ের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, সনিয়া গাঁধীর আমন্ত্রণে নেহরুর ১২৫তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বলেই তাঁকে ‘বাঁশ’ দিতে ওই সাংসদকে গ্রেফতার করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেখিয়েছে বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ১৯:১৫
Share:

মিছিলের পায়ে পায়ে। মমতার সঙ্গী দেব এবং অরিন্দম শীল। ছবি: সুদীপ আচার্য।

বাদ গেলেন না টুম্পাই-ও! কুণাল ঘোষের মতো রাজ্যসভায় আর এক দলীয় সাংসদ সৃঞ্জয় বসুর নাম না করেও তাঁর নামে ‘বাইরের লোক’ তকমা দেগে দিলেন খোদ দলনেত্রী।

Advertisement

সারদা কেলেঙ্কারিতে শুক্রবার তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ এবং দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক সৃঞ্জয় বসু গ্রেফতার হওয়ার পর শনিবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ওই দিন দলীয় কর্মিসভায় সৃঞ্জয়ের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, সনিয়া গাঁধীর আমন্ত্রণে নেহরুর ১২৫তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বলেই তাঁকে ‘বাঁশ’ দিতে ওই সাংসদকে গ্রেফতার করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেখিয়েছে বিজেপি। কিন্তু এর পরে ৪৮ ঘণ্টাও কাটতে পারল না, সৃঞ্জয়ের ‘দায়’ দলের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেললেন সেই দলনেত্রীই।

কেন্দ্রের ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি’র বিরুদ্ধে এ দিন কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন মমতা। সেই মতো দুপুর তিনটেয় কলেজ স্কোয়ার থেকে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল বেরোয়। মিছিল শেষে ধর্মতলায় তিনি বলেন, “একটা-দু’টো বাইরের লোক কী করছে, তাই নিয়ে গোটা দলকে অভিযুক্ত করবেন!”

Advertisement

যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, দলনেত্রী এ দিন বাইরের লোক বলতে টুম্পাইকে বোঝাতে চাননি। অতীতের কুণাল বা শুভাপ্রসন্নকেই ‘বাইরের লোক’ হিসেবে মমতা বুঝিয়েছেন বলে তাঁদের দাবি। এর প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, যে টুম্পাইয়ের গ্রেফতারির প্রতিবাদে এ দিনে এত বড় মিছিল, সেই তৃণমূল সাংসদকে বাইরের লোক বলতে পারেন না দলনেত্রী।


মিছিল শেষ। এ ভাবেই ফেরার পালা। ছবি: প্রদীপ আদক।

রাজ্যসভায় কুণাল-সৃঞ্জয়-সহ সংবাদ জগতের একাধিক ব্যক্তিত্বকে টিকিট দিয়েছিলেন মমতা। এর পরে সারদা-কাণ্ডে কুণাল যখন বিপদে পড়েন, তখন তাঁকে ‘বাইরের লোক’ বলে ঝেড়ে ফেলেছিলেন। সৃঞ্জয়ের বেলাতেও নাম না করে একই পথে হাঁটলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তবে সময় বুঝে ‘কাছের লোক’কে বাইরের লোক বলতে এর আগেও মমতাকে দেখা গিয়েছে। যাদবপুর কেন্দ্রের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন যখন ‘বিদ্রোহী’ হয়ে ওঠেন, তখন মমতা তাঁকে ‘অতিথি’ বলেছিলেন। সেই পরম্পরা তিনি বজায় রাখলেন সৃঞ্জয়ের বেলাতেও। বিরোধীদের কেউ কেউ আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন আসিফ খানের কথাও। দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খোলার পরেই তাঁকে জমি জালিয়াতির মামলায় গ্রেফতার করা হয়। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে তৃণমূলের প্রাক্তন এই পর্যবেক্ষকের মতিগতি বুঝে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরানোর পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্ব জানিয়ে দেন, ‘ও তো এখন দলের কেউ নয়।’ একই ঘটনা ঘটেছিল দলের বীরভূমের পর্যবেক্ষক রজত মজুমদারের ক্ষেত্রেও। সারদা কেলেঙ্কারিতে রজতবাবুর গ্রেফতারির পরই দলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘কে রজত মজুমদার? দলের তো কেউ নয়!’

প্রতিবাদ মিছিল শেষে এ দিন মমতা বিভিন্ন বিষয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হয়েও, বর্তমানে এ দেশে রয়েছেন এমন মানুষদের সকলকে তিনি অনুপ্রবেশকারী বলতে রাজি নন। তিনি বলেন, “তাড়িয়ে দেব বললেই তো আর দেওয়া যায় না।” পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, সীমান্তে নজরদারির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। সেই নজরদারি টপকে যদি কেউ এ দেশে ঢুকে পড়ে তাতে রাজ্য কী করবে? এ দিনের মিছিলের আগে মমতা সরকারি কাজে বনগাঁয় গিয়েছিলেন। সেখানেও একই ভাষায় বিজেপি-কে আক্রমণ করেন তিনি।

তৃণমূলের এ দিনের মিছিলকে কেন্দ্র করে উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ কলকাতার একাংশ এ দিন দুপুরে তৃণমূল সমর্থকদের দখলে চলে যায়। মিছিলের দাপটে ওই এলাকা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মিছিল যে পথ দিয়ে যাবে, পরিস্থিতির কথা আঁচ করে সেই সমস্ত রাস্তা তো বটেই আশপাশের সংযুক্ত রাস্তাগুলিতেও পুলিশ আগে থেকেই গাড়ি অন্য পথে ঘুরিয়ে দেয়। তবে সে সবে খুব একটা কাজ দেয়নি বলে পুলিশকর্মীদের একাংশেরই অভিমত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement