রানাঘাটের কনভেন্টে লুঠপাট এবং সত্তরোর্ধ্ব সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছয় জনকে আটক করল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে স্থানীয় এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। ওই এলাকাতেই নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে তারা জড়িত ছিল বলে দাবি পুলিশের। রবিবার সকাল থেকেই তাদের দফায় দফায় জেরা করে সিআইডি-র তদন্তকারী দল। আটকদের মধ্যে এক জনের মুখের সঙ্গে ঘটনার দিনের সিসিটিভি-র ফুটেজে পাওয়া দুষ্কৃতীর আংশিক মিল রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। তবে, এরাই সেই দুষ্কৃতী কি না, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত নয় সিআইডি।
রবিবার কড়া ভাষায় ঘটনার নিন্দা করেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, “কোনও ধর্মের মানুষকে অপমান করার অধিকার নেই। আমি নিশ্চিত, এ বিষয়ে রাজ্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।” এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই কনভেন্টে যান রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়-সহ তিন সদস্যের একটি দল। কনভেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে তারা। কনভেন্ট থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন কমিশনের সদস্যরা।
শুক্রবার গভীর রাতে নদিয়া জেলার রানাঘাটের একটি কনভেন্ট স্কুলে ঢুকে লুঠপাট চালায় জনা সাতেকের একটি ডাকাত দল। স্কুলের নিরপত্তারক্ষীকে মারধর করে বেঁধে ফেলে। এর পর প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে আলমারি ভেঙে লুঠ করে ১২ লক্ষ টাকা। ল্যাপটপ-ক্যামেরা লুঠও করে বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, স্কুলের সন্ন্যাসিনীদের আবাসনে ঢুকে তাঁদের মারধরও করে বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদের বাধা দিলে গেলে চুয়াত্তর বছরের ‘মাদার সুপিরিওয়র’কে ধর্ষণ করা হয়।
গোটা ঘটনার নিন্দা করে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিআইডি-র স্পেশ্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট চিরন্তন নাগের নেতৃত্বে তদন্তকারী আধিকারিকের দল ঘটনাস্থলে যায়। কনভেন্ট এবং তার আশপাশের এলাকা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখেন সিআইডি-র ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। স্কুলের প্রতিটি জায়গার ছবি তোলা থেকে শুরু করে প্রমাণ হিসাবে দুষ্কৃতীদের হাতের ছাপ সংগ্রহ করেন তাঁরা। সিআইডি সূত্রে খবর, প্রমাণ সংগ্রহ করা ছাড়াও রাজ্যের প্রতিটি থানায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া, জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় শনিবার রাত থেকেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
তবে ছয় সন্দেহভাজনকে আটক করলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার না করায় ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষজন। শনিবার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে অবরোধের পর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে তা উঠে যায়। পাঁচ বছর আগে এলাকাবিন্যাসের কারণে রানাঘাট থানা থেকে গাংনাপুর থানা এলাকার আওতায় আসে ডন বস্কো পাড়া। গাংনাপুর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরেই ঘটনাস্থল ডন বস্কো পাড়ার ওই কনভেন্ট। বছরখানেক ধরে এলাকায় চুরি-ছিনতাই-তোলাবাজির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছে এলাকাবাসীরা। নদিয়া জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষের দাবি, ঘটনার দিন রানাঘাট থানা থেকে এলাকায় টহলদারি করা হয়। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, টহলদারি করলেও এলাকাটি গাংনাপুর থানার আওতায় থাকায় প্রায় নিষ্ক্রিয়ই থেকেছে পুলিশ।
এই চাপানউতোরের মধ্যেই হাসপাতালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে ওই সন্ন্যাসিনীর। আগে থেকেই তাঁর হৃদরোগ ও স্নায়ুর রোগ ছিল। তবে ঘটনার অভিঘাতে মানসিক ভাবে তাঁর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকেরা।